যুক্তরাজ্যে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী প্রায় ৯০ লাখ মানুষ তাদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে, এদের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ মুসলিমও রয়েছেন। মানবাধিকার ও গবেষণা সংস্থা রানিমিড ট্রাস্ট এবং রিপ্রিভ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘দ্য সিটিজেনশিপ ডিভাইড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন মুসলিমদের বিরুদ্ধে নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষমতা বেশি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে যুক্তরাজ্যে একটি দুই স্তরের নাগরিকত্ব ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যা বিশেষ করে ব্রিটিশ মুসলিমদের নিরাপত্তা ও অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ আদমশুমারি, জনসংখ্যাগত তথ্য ও সরকারি নীতিমালা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যুক্তরাজ্যের প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ নাগরিকত্ব হারাতে পারেন, যা আগের হিসাবের তুলনায় ৩০ লাখ বেশি। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় বর্ণগত সংখ্যালঘুরা ১২ গুণ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে যেখানে প্রতি ২০ জনে ১ জন ঝুঁকিতে, সেখানে বর্ণগত সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে প্রতি ৫ জনে ৩ জন।
প্রতিবেদনটি বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের বড় অংশই মুসলিম, যাদের শিকড় দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য বা উত্তর আফ্রিকায়। ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৩৯ লাখ যা মোট জনসংখ্যার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এই জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ উচ্চঝুঁকির জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় লাখো মুসলিম নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন।
জাতিগত বিভাজন নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিটিশদের ৬২ শতাংশ (প্রায় ১৬ লাখ), অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ৬২ শতাংশ (৭ লাখ) এবং এশীয় ব্রিটিশদের ৬০ শতাংশ (৩৩ লাখ) নাগরিকত্ব বাতিলের ঝুঁকিতে যেখানে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৫ শতাংশ।
এই হিসাব অনুযায়ী, জনসংখ্যাগত মিল বিবেচনায় সম্ভাব্যভাবে ২০ লাখের বেশি ব্রিটিশ মুসলিম নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত-সম্পর্কিত প্রায় ৯ লাখ ৮৪ হাজার এবং পাকিস্তান-সম্পর্কিত প্রায় ৬ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ নাগরিকত্ব বাতিলের যোগ্যতার আওতায় পড়েন। পাকিস্তান-সম্পর্কিতদের বড় অংশ মুসলিম, আর ভারত-সম্পর্কিতদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম রয়েছেন। জ্যামাইকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার মানুষও ঝুঁকিতে, যদিও প্রতিবেদনের মূল আলোকপাত দক্ষিণ এশীয় ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর।
যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব বাতিলের বিধান প্রথম চালু হয় ১৯১৪ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপজুড়ে এই ক্ষমতা প্রায় অচল হয়ে পড়ে। ১৯৭৩ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত প্রতারণা ছাড়া যুক্তরাজ্যে কার্যত কোনো নাগরিকত্ব বাতিলের ঘটনা ঘটেনি।
তবে ২০১০ সালের পর থেকে ‘জনস্বার্থে’ যুক্তি দেখিয়ে ২০০ জনের বেশি মানুষকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য বিশ্বে বাহরাইন ও নিকারাগুয়ার পর তৃতীয় অবস্থানে।
২০০২ সালের আইনে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ব্রিটিশদের ক্ষেত্রেও এই ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ বাড়ে। ২০১৪ সালের আইনে অন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নাগরিকত্ব বাতিলের সুযোগ দেওয়া হয়। ২০২২ ও ২০২৫ সালের আইনে নোটিশ ছাড়াই নাগরিকত্ব বাতিল ও আপিল জিতলেও তাৎক্ষণিক পুনর্বহাল না করার বিধান যুক্ত হয়।