Saturday 13 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিত্র কমছে বিএনপির!

মো. মহসিন হোসেন স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৩৭

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। ফাইল ছবি

ঢাকা: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাংলাদেশের বৃহত্তম দল বিএনপির মিত্র কমছে। নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে ছোট ছোট মিত্রদল এখন বিএনপি ছেড়ে নতুন জোটের সন্ধান করছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, দুই দফায় ২৭২ আসনে নিজেদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেও শরিক দলের কাকে কোন আসন দেবে, তারা মোট কতটি আসন পাবে এসব বিষয় এখনো খোলাসা করেনি বিএনপি। ফলে কোনো কোনো দলের নেতারা আশাহত হয়ে এরই মধ্যে বিএনপি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। আবার কোনো কোনো দল বলছে, তারা বিএনপির পাশে থাকতে চাইলেও পারবে কি না সেটা নির্ভর করছে বিএনপির আচরণের ওপর।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, এরই মধ্যে ২৯টি দলের শীর্ষ নেতা বৈঠক করে বিএনপিকে জানিয়েছে দুই/তিন দিনের মধ্যে আসন নিয়ে ফয়সালা না করলে তারা বিএনপির সঙ্গে থাকবে না। অপরদিকে বিএনপি অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলছে ১০/১২টার বেশি আসন ছাড়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ, মাঠ জরিপে উঠে এসেছে বিএনপি যদি তাদের নিজেদের প্রার্থী না দিয়ে ছোট দলের নেতাদের মনোনয়ন দেয় তাহলে আসনগুলো তাদের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ জামায়াত জোট এরই মধ্যে ‘ওয়ান বক্স’ নীতিতে প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা আটটি দল এ বিষয়ে একমত হয়েছে। নেতারা বলছেন, এই নীতিতে আরও বেশকিছু দল তাদের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতায় যোগ দিতে পারে। তার মানে বিএনপি এই নির্বাচনকে সহজভাবে নিতে পারছে না। লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। সেই লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে ধানের শীষের প্রার্থীরাই উপযুক্ত। ওয়ানম্যান ওয়ান পার্টির বড় বড় নেতারা মিডিয়ায় হাঁকডাক দিলেও ভোটের মাঠে তাদের প্রভাব কম।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, গণতন্ত্রের উত্তরণে সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন প্রশ্নে বিএনপি যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল, সেখান থেকে অনেকটা সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে বিএনপি। ফলে মিত্র শক্তিগুলোও আর তাদের সঙ্গে থাকতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক। তাদের বক্তব্যেও অনেক যুক্তি আছে।

তারা বলছে, দুর্দিনে বিএনপির পাশে থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। আর বিএনপির পাশে থাকার কারণে দীর্ঘদিন আওয়ামী সরকারের রোষাণলে ছিল। মামলা, হামলা থেকে শুরু করে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। কেউ কেউ নির্যাতিত হয়েছে, কারাবরণ করেছে। এখন সুদিন দেখে বিএনপি তাদের পাত্তা দিচ্ছে না। আবার কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দিতে চাইলেও তৃণমূল তাদের ওপর হামলা করছে। তৃণমূলের নেতারা হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।

এদিকে বিএনপির এই আচরণে গত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর পল্টনে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে বৈঠক শেষে ২৯টি দলের নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বিএনপির সঙ্গ ছাড়ার ইঙ্গিতও দেন। সেখানে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, নেজামে ইসলামী পার্টি, গণফোরামসহ মোট ২৯টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান জানান, তারা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক ফোনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে অবহিত করেছেন যে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ন্যায্য আসন সমঝোতা না হলে তারা বিকল্প জোট গঠন করবেন।

নেতারা অভিযোগ করেন, জামায়াত যেখানে নতুন নতুন সহযোগী যুক্ত করছে, সেখানে বিএনপি বরং পুরোনো শরিকদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তাদের মতে, বিএনপির এমন হঠাৎ অবস্থান শুধু অস্বস্তিকরই নয়, রাজনৈতিকভাবেও অস্বাভাবিক।

জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি এখন পর্যন্ত দুই দফায় ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এখনও ২৮টি আসন খালি রয়েছে, যেখানে অধিকাংশ শরিক দলের প্রার্থী হওয়ার কথা। তবে বিএনপির ভেতরে এসব আসনে নিজদলের প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। খুব বেশি হলে ১০/১২টি আসন তারা ছাড়তে পারে।

এদিকে কাঙ্ক্ষিত আসন না পেয়ে বিএনপির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ১৮ বছরের পুরোনো মিত্র ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি। প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছে নাগরিক ঐক্য ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। এছাড়া, আসন না পেয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন বিএনপির মিত্রজোট গণতন্ত্র মঞ্চ ছেড়েছে আগেই। তারা এরই মধ্যে এনসিপি ও এবি পার্টির সঙ্গে তিন দলীয় জোটের ঘোষণা দিয়েছে।

অপরদিকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এহসানুল হুদাকে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনটি দেওয়ার কথা থাকলেও দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্দ হয়েছেন এহসানুল হুদা ও তার দল। শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে থাকবেন কি না তা এখনো পরিষ্কার করেননি। তারা ১২ দলীয় জোটের শরিক হলেও এই জোটের চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারকে পিরোজপুর-১ আসনটি দেওয়া হবে। আসনটি এখনো খালি রেখেছে বিএনপি। ফলে তিনি কিছু বলছেন না। আর এই জোটের দল বাংলাদেশ এলডিপির নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম তার দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়ে লক্ষ্মীপুর-১ আসনটি নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু তার দলের অন্য নেতারা এই দল বিলুপ্ত মেনে নেননি।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও জোটের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। যেখানে মঞ্চের গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীর আসন রয়েছে। এতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

এদিকে গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে তাকে এ আসন ছাড় দিয়েছিল বিএনপি। এবার শোনা যাচ্ছিল তাকে ঢাকা-৭ আসনে ছাড় দেওয়া হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ আসনে হামিদুর রহমানকে প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুব্রত চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনোনয়নের রাজনীতি আমি করি না। ঢাকা-৬ দেওয়ার কথা ছিল দেয়নি। এখন দেখি কী করে।’ বিএনপির সঙ্গে থাকবেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন থাকব না। অবশ্যই থাকতে হবে।’

অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘সবাইকে আসন দিয়ে খুশি করা সম্ভব নয়। অনেক কিছু যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। শরিকদের জন্য ২৮টি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। এবার জোটে জামায়াত নেই। সেখানে ২৮টি আসনে ছাড় দেওয়া কম নয়? সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।’

এ বিষয়ে বিএনপির তিন নেতার সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলা প্রতিবেদকদের সঙ্গে। কিন্তু কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকি তাদের নাম প্রকাশ করতেই রাজি নন। তাদের কথা হলো, এটা শীর্ষ নেতৃত্বের বিষয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরাতো দেখতে পাচ্ছি অনেক ছোট দল বিএনপিকে ছেড়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে যাওয়ার পথে। তাদের কীভাবে ধরে রাখবে সেটাও বিএনপির হাইকমান্ডের বিষয়।’

সারাবাংলা/এমএমএইচ/পিটিএম
বিজ্ঞাপন

মিত্র কমছে বিএনপির!
১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৩৭

আরো

মো. মহসিন হোসেন - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর