বগুড়া: বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মান কাজে অর্থায়নে এগিয়ে আসছে না কোনো দাতা সংস্থা। ফলে, লাল ফিতায় বন্দি সবুজ ফাইলটি কবে আলোর মুখ দেখবে এই প্রতিক্ষায় উত্তরাঞ্চলবাসী। সরকার আসে, সরকার যায়। কিন্তু এই প্রকল্প কচ্ছপগতিতে এগিয়ে চলে। এদিকে প্রকল্পটির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলছেন, ভারত টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় নতুন দাতা সংস্থা খোঁজা হচ্ছে। জাপান সরকার আশার আলো দেখালেও সেই বাতিও আর জ্বলছে না। তবে চায়না সরকার প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করবে এমন কথাবার্তা কেবলমাত্র আলোচনায় রয়েছে।
এদিকে অর্থায়ন এখনো নিশ্চিত না হলেও বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে ব্যয় বেড়েছে ৩২৩ কোটি টাকা। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এখন সমীক্ষা শেষে জমির পরিমাণ কমে ৯০১.৭৭ একর হলেও অধিগ্রহণের জন্য চূড়ান্ত ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ হাজার ২৪৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ঋণের অর্থছাড় না হওয়ায় প্রকল্পের কাজে তেমন অগ্রগতি নেই। চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ সরকার ভারতের অর্থায়ন বাতিল করে। ফলে এই প্রকল্পের জন্য নতুন অর্থায়নকারীকে খোঁজা হচ্ছে।
এদিকে, উত্তরাঞ্চলের বহুল প্রতীক্ষিত বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেললাইনের বগুড়ার শাজাহানপুর অংশে ভূমি অধিগ্রহণের নোটিশ বিতরণে গত ৫ নভেম্বর জেলা প্রশাসনের কর্মচারীদের প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অভিযোগে বগুড়া জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার দুই কর্মচারীকে নিয়ে উপজেলাজুড়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। অপরদিকে প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
নিয়ম অনুযায়ী নোটিশ বিতরণ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হলেও দুই কর্মচারী প্রত্যেক ভূমি মালিকের কাছ থেকে ২০০-৩০০ টাকা করে আদায় করেন। কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নোটিশ প্রদানে গড়িমসি ও দুর্ব্যবহার করেন তারা।
জানা যায়, বহুল প্রত্যাশিত বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের অপেক্ষায় এ অঞ্চলের মানুষ। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের মানুষের ঢাকায় যাতায়াতের প্রধান ভরসা হচ্ছে যমুনা সেতু হয়ে রেল ও সড়কপথ। কিন্তু অতিরিক্ত চাপ ও রুট জটিলতার কারণে সময় ও খরচ দুটোই বাড়ছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। নতুন এই রেলপথ সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া হয়ে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে ঢাকা ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দূরত্ব অনেক কমিয়ে আনবে। সরাসরি সিরাজগঞ্জ-বগুড়া ট্রেন চলাচল শুরু হলে ঢাকা-বগুড়া যাত্রায় সময় কমবে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা।
এদিকে নতুন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে। ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৮ সালের দামের ভিত্তিতে। কিন্তু নির্মাণ সামগ্রীসহ সবকিছুর দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় ২০২৫ সালের হালনাগাদ ডিপিপিতে প্রকল্প ব্যয় স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক শাহীন জানান, শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন সরকারের কারণে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মান কাজ হয়নি। বগুড়াবাসীর প্রাণের দাবি যত দ্রুত সম্ভব রেলপথটি নির্মান করে বগুড়া থেকে সহজে ঢাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। এই রেলপথ নির্মান হলে একদিকে সময় বাঁচবে অন্যদিকে খরচও কমবে। একইসঙ্গে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসার ঘটবে।
বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন জানান, ২০০৫ সালে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে রেলপথ নির্মাণে পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এডিবির অর্থায়নে তখন প্রাক সমীক্ষাও হয়েছিল। পরে অর্থের অভাবে প্রকল্পটি আর এগোয়নি। ২০১৭ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়। বগুড়াবাসীর চাওয়া বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথটি চালু হলে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের মানুষের সহজ যাতায়াত নিশ্চিতসহ রাজধানীর সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর দূরত্ব কমে আসবে।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক তাদের নিজ নিজ এলএ (ভূমি অধিগ্রহণ) পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যয়ের চূড়ান্ত প্রাক্কলন দিয়েছেন। এতে আগের অনুমান থেকে ৩২৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা বেশি লাগছে। ডিপিপিতে এই অতিরিক্ত ব্যয়ের সুযোগ না থাকায় বিশেষ সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হলে মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে। এই প্রকল্পের জন্য অর্থায়নকারী সংস্থাকে খোঁজা হচ্ছে। নতুন অর্থায়নকারী পাওয়ার পরে কাজ শেষ করতে আরও তিন-চার বছর লাগবে। অর্থ পাওয়া গেলে ঠিকাদার নিয়োগসহ দরপত্রের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে।