Thursday 18 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিতাড়িত স্বৈরাচার সহিংসতা করে নির্বাচন ঠেকাতে চায়: সিএমপি কমিশনার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:০৯ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:০৭

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিতাড়িত স্বৈরাচার এবং তাদের প্রভু বিদেশি রাষ্ট্র দেশে সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে নির্বাচন হতে না দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।

নির্বাচন নিয়ে দৃশ্যমান কিছু ঝুঁকি তৈরি হয়েছে জানিয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচন সংক্রান্ত নানা রকমের চ্যালেঞ্জ এখন মোটামুটি দৃশ্যমান। আমরা বুঝতে পারছি কোন কোন জায়গা থেকে কী কী ধরনের ঝুঁকি আমাদের ওপর আসতে পারে। প্রথম ঝুঁকি যেটা দেখলাম আমরা, এই যে টার্গেটেড অ্যাসাসিনেশন অ্যাটেম্পট (নিশানা তৈরি করে হত্যার চেষ্টা বা টার্গেট কিলিং)। ঢাকায় দেখলাম, চট্টগ্রামে দেখলাম, খুলনায় দেখেছি।’

বিজ্ঞাপন

‘ওই যে বিতাড়িত স্বৈরাচার, একটা ছিল এতদিন ধরে পতিত স্বৈরাচার, এখন আরেকটা আসছে বিতাড়িত স্বৈরাচার, তো এই বিতাড়িত স্বৈরাচারের যারা কুচক্রী এবং দুর্বৃত্ত, যারা দোসর এবং তাদের যে বিদেশি প্রভু— তারা চেষ্টা করছে কিন্তু অনেক রকমের সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশে যে নির্বাচনটা হতে না দেওয়া এবং একটা পর্যায়ে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। এই কথাটা আমাদের সকলের কাছেই এখন পরিষ্কার।’

নির্বাচন ঠেকানোর প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে হাদির ওপরে অ্যাটাক হলো, সেই খুনিও আমরা দেখলাম মহারাষ্ট্রে চলে গিয়েছে। তো এগুলো আজকে আর কথার কথা না, আমরা দেখছি যে, আমাদের সন্দেহগুলো আসলে সত্য এবং বাস্তব। এই যে বিতাড়িত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ এবং তাদের বিদেশি প্রভু যারা আছে, তাদের এই প্রচেষ্টাকে আমাদেরকে নস্যাৎ করতে হবে।’

‘এখন এই নির্বাচনটা কিন্তু ওদের জন্য একটা লিটমাস টেস্ট হয়ে গেছে, আওয়ামী লীগ এবং তাদের বিদেশি প্রভু যারা আছে তাদের জন্য। এই টেস্টে তারা যাতে ফেইল করে সেজন্য আমাদের যা করার করতে হবে। এই টার্গেটেড কিলিংগুলার ব্যাপারে আমরা আসামি ধরা অব্যাহত আছে।’

চট্টগ্রামে সক্রিয় বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নানা রকমের বাহিনী আছে। নানা রকমের বাহিনী—এই বাহিনী, ওই বাহিনী। তো আমরা বলছি যে আমার চট্টগ্রাম মহানগরীতে পুলিশ বাহিনী ছাড়া অন্য কোনো বাহিনী থাকতে পারবে না। সাজ্জাদ বাহিনী, লাল্টু বাহিনী, পল্টু বাহিনী—এই সমস্ত…। তো আমার অফিসারদেরকে আমি নির্দেশ দিয়েছি, এই সমস্ত বাহিনীকে নির্মূল করতে হবে। নির্মূল মানে নির্মূল। প্রয়োজনে চরমপন্থা অবলম্বন করতেও আমি বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করব না। কিছু সন্ত্রাসী কিংবা তথাকথিত গডফাদারদের কাছে দিনের পর দিন চট্টগ্রাম জিম্মি হয়ে থাকবে—এটা আমরা হতে দেব না। যে কোনো ধরনের পন্থা যেটা প্রয়োজন, আমরা সেটা অবলম্বন করব।’

নির্বাচন ঠেকানোর জন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আওয়ামী লীগ ভাড়া করতে পারে উল্লেখ করে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এই বাহিনীগুলোও ইলেকশন ডিজরাপ্ট (ব্যাহত) করার জন্য আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য বিভিন্ন কোয়ার্টার আছে, যারা চাচ্ছে না নির্বাচনটা হোক ঠিকমতো, তাদের দ্বারা হায়ার্ড (Hired) হতে পারে। হায়ার্ড হয়ে তারা নানা জায়গায় নানারকম ডিজরাপশন করতে পারে। এদের যেটা প্ল্যান আমি যেটা বুঝছি, সেটা হলো একটা ভীতি সঞ্চার করা, জনমনে একটা ভীতি সঞ্চার করা। এদিক-ওদিক একটা-দুইটা খুন, কোথাও গিয়া বোমা ফাটাইল, কোথাও গিয়া আপনার ওই যে অস্ত্র উঁচায়া একটা ভিডিও করল ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি করে একটা ভীতি সঞ্চার করা। মূল লক্ষ্যটা হলো, ভোটার টার্ন আউটটা যতটা কম রাখা যায়, সেটা চেষ্টা করা—এই আওয়ামী লীগ এবং তাদের লোকজন।’

‘তো আমরা কিন্তু ওই চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলার চেষ্টা করছি। ওইটাকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। ওই চ্যালেঞ্জটা বিবেচনায় রেখেই কিন্তু কাজ করছি।’

পুলিশের লুট হওয়া কিছু অস্ত্র ‘পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ কাছে যাওয়ার তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ৮০ ভাগ লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। বাকি ২০ ভাগ অস্ত্রের বেশিরভাগই চলে গেছে ইনসার্জেন্সি গ্রুপের কাছে, যেগুলো পাহাড়ি এলাকায় আছে— বিচ্ছিন্নতাবাদী…। আমাদের কাছে ইনফরমেশন আছে যে, ওদের কাছে আছে। তো এই অস্ত্রগুলো নির্বাচনে ব্যবহার করার যে আশঙ্কা— সেটা আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না, আমাদের প্রস্তুতি আছে এবং আমরা লুণ্ঠিত অস্ত্র এগুলো উদ্ধার করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা আমাদের অব্যাহত আছে।’

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক শাহনেওয়াজ রিটনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন- দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. আরিফ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি মনসুর, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ওয়াহিদুল হক চৌধুরী ও মো. হুমায়ুন কবির, প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুস্তফা নঈম, কার্যকরী সদস্য সালেহ নোমান এবং রফিকুল ইসলাম সেলিম।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম