চট্টগ্রাম ব্যুরো: ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর ঘটনায় তার সহযোদ্ধাদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বন্দরনগরী। বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে জুমার নামাজের পর ‘জুলাই ঐক্য, চট্টগ্রাম’, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ আরও বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে কফিন মিছিল বের করে জুলাই ঐক্য, চট্টগ্রাম। সেখানে জুলাই যোদ্ধাদের পাশাপাশি সাধারণ মুসল্লিরাও অংশ নেন। জাতীয় পতাকা মোড়ানো প্রতীকী কফিন নিয়ে মিছিলটি জামালখান মোড়ে গিয়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে জুলাই ঐক্যের সংগঠক আবরার হাসান রিয়াদের সঞ্চালনায় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। সমাবেশে বক্তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের পদত্যাগ, ওসমান হাদির খুনিকে দ্রুত গ্রেফতার দাবি এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। এ ছাড়া কোনো ধরনের উসকানিতে পা না দেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ইবনে হাসান জিয়াদ বলেন, ‘ওসমান হাদি হত্যার দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এড়াতে পারে না। হত্যাকারীদের জীবিত বা মৃত দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব তৌসিফ ইমরোজ বলেন, ‘জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে মব ট্যাগ দিয়ে যারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদের বিচার করতে হবে।’
গণঅধিকার পরিষদ নেতা জসীম উদ্দিন বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সরকারের চেয়ে সবচেয়ে বেশি জনসমর্থন নিয়ে ইন্টেরিম সরকার গঠিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে তারাই সবচেয়ে ব্যর্থ সরকার।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন যুবশক্তির নেতা টিপু সুলতান, জুলাই আন্দোলনে নিহত মাহবুবুর রহমানের ভাই মঞ্জুর আলমসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
এদিকে জুমার নামাজের পর জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ থেকে ছাত্রশিবির বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি দেওয়ান হাট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে শিবিরের নগর উত্তর সেক্রেটারি মুমিনুল হকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মুহাম্মদ আলী ও নগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইমুনুল ইসলাম মামুন।
সমাবেশে মুহাম্মদ আলী বলেন, ‘ওসমান হাদি যেভাবে জুলুম ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ময়দানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন, একইভাবে কালচারাল ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন। এ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভারত যে আধিপত্য চালিয়েছে, বীর মুজাহিদ ওসমান হাদির অন্যতম সংগ্রাম ছিল এই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে। একজন হাদিকে শহিদ করে এ দেশে ভারতীয় আধিপত্যের নীলনকশা বাস্তবায়ন করা যাবে না।’
মাইমুনুল ইসলাম মামুন বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নিলেও তার আধিপত্য এখনো বহাল রয়েছে। ওসমান হাদির শাহাদাতই এর প্রমাণ। গুলি করে কেবল ওসমান হাদিকে নয়, যেন জুলাইকেই হত্যা করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে হত্যাকারী দুজন মনে হলেও বিশাল একটি মহলের সূক্ষ্ম পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে মাথায় গুলি করা হয় শরিফ ওসমান হাদিকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে তিনি মারা যান।
হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ শুরু করেন তার সহযোদ্ধারা। চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে।