Sunday 21 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন
টবে গাছ লাগিয়ে ‘গ্রিন ঢাকা’র উদ্যোগ কতটা কার্যকর?

মেহেদী হাসান স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:০৯ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৩৪

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)।

ঢাকা: অপরিকল্পিত নগরায়ন, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও লাগামহীন বায়ুদূষণে ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকা। কংক্রিটের আগ্রাসনে বিপর্যস্ত হওয়া এই শহরকে আবারও বাসযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব করতে ‘গ্রিন ঢাকা’ গড়ার নানা উদ্যোগের কথা বলছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে সিটি করপোরেশনের চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেনি। এছাড়া বাস্তবে নেওয়া কিছু উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে—বিশেষ করে রাজধানীর প্রধান সড়কে টবে গাছ লাগানোর কর্মসূচি নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে- এই উদ্যোগ কি সত্যিই ‘গ্রিন ঢাকা’ গড়তে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে?

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর মিরপুর ১৪নম্বর থেকে কচুক্ষেত এবং মিরপুর সনি ছিনেমা হল থেকে চিরিয়াখানা পর্যন্ত প্রায় সাত শতাধিক গাছ লাগিয়েছে ডিএনসিসি। আর এই গাছগুলো লাগানো হয়েছে বড় সাইজের প্লাস্টিকের ড্রাম ও টিনের ড্রাম কেটে টব বানিয়ে। আর যেসব গাছ লাগানো হয়েছে সেগুলোর নেওয়া হয় না যত্ন। ফলে গাছগুলো মারাও যাচ্ছে এবং এই গাছগুলোর মানও নিম্নমানের। আবার এই টবগুলো দিয়ে বানানো হচ্ছে প্রধান সড়কের আইলেন্ড।

ব্যয় বনাম স্থায়িত্ব

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই ড্রামগুলো মাটি ও গাছসহ একেকটিতে খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা। সেই হিসেবে ৭০০ গাছে খরচ অন্তত ২১ লাখ টাকা। আবার এই টবের মাটি তিন বছর পর পর পরিবর্তন করতে হয়। এমনকি যেকোনো সময় নষ্ট হয়েছে যেতে পারে এই ড্রামগুলো। ফলে অপরিকল্পিত ও টেকসইহীনভাবে প্রধান সড়কে টবে গাছ লাগানোয় একদিকে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অপরদিকে, ‘গ্রিন ঢাকা’ গড়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে ডিএনসিসি।

নার্সারি মালিকদের বক্তব্য

প্লাস্টিকের ও টিনের ড্রামে গাছ লাগানোর বিষয়ে নার্সারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড় সাইজের একেকটি ড্রামে মাটি লাগে ৩ থেকে ৪ বস্তা। যা তিন বছর পর পর পরিবর্তন করতে হয়। আর গাছসহ এই একেকটি ড্রামের পেছনে খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা। তবে প্রধান সড়কের পাশে এভাবে গাছ লাগালে সেটি নষ্ট হয়ে যাওয়ারই সম্ভাবনা বেশি থাকে।

দায়িত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি

জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয় এই প্রোজেক্ট ডিএনসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেমের। জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এটা প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার প্রজেক্ট’। তবে এ বিষয়ে তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করা হলে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।

অপরদিকে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাবিবুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, আমার বিভাগের কাজ এসব নিয়ে না। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কাশেম কেন আমার কথা বলেছেন সেটা জানিনা। এ কাজ বিভাগের, তিনিই জানেন।

প্রশাসকের ব্যাখ্যা

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-এর প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন গাছ দিয়ে আইলেন্ড দেওয়া হয়েছে। পরে আমরা স্থায়ীভাবে আইলেন্ড দিয়ে দেব। এটা কোনো প্রকল্পের আওতায় করা হয়নি, এটা আমাদের রেগুলার কাজের মধ্য থেকেই নিজেদের উদ্যোগে করা হয়েছে। গাছ কয়টি লাগানো হয়েছিল সেটি গুনে দেখতে হবে। ড্রামগুলো স্টোর রুমে পড়ে ছিল, সেগুলো কেটে মাটি দিয়ে আমরা সিটি করপোরেশন থেকে গাছ লাগিয়েছি।’

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে অর্থের অপচয়

নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে কোনো জিনিস করার আগে সেটা টেকসই কিনা সেটা ভাবতে হবে। যেখানে প্রাকৃতিকভাবে বৃক্ষরোপণ করা যায় সেখানে তো টবের দরকার নাই। যদি বিকল্প না থাকে সেক্ষেত্রে হয়তো ভাবা যেতে পারে। টবে কি ধরনের গাছ লাগবে, কি সাইজ লাগবে, সেটা যেন মানে টিকে ও ইনভেস্টমেন্ট করব কি-না, বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ, জনগণের টাকা দিয়েই তো এগুলো করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণ মানে মাটিতে গাছ লাগানো, টবে না।’

তিনি বলেন, ‘টবে গাছ লাগালে আল্টিমেটলি এটা মানে খুব বেশি টেকসই হবে না, তবে একমাত্র সেখানেই লাগাব, যেখানে কোন ধরনের বিকল্প নাই। বাংলাদেশে বাস্তবতা এখনও আসেনি যে সরকারের পক্ষ থেকে টপ ভিত্তিক গাছ লাগাতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ লাগালো ভিন্ন ইস্যু। আর টবে খরচটা করে যদি নাই টিকে তাহলে এটার দারকার নাই। এই টবে তিন বছর পর পর আবার মাটি পরিবর্তন করার যে খরচ আছে, আবার মেইনটেইনেন্সের অভাবে গাছ মরে গেলে সেই টাকাটাও নষ্ট হচ্ছে, সব মিলে এটা আনস্টেবল। তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা দেখি যে একটা প্রবৃত্তি থাকে সরকারি এ ধরনের প্রকল্প ভিত্তিক টাকা পয়সা খরচ করা।’

বিজ্ঞাপন

ডিবিএল গ্রুপে কাজের সুযোগ
২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:২০

নিয়োগ দিচ্ছে হাতিল ফার্নিচার
২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:০৮

আরো

মেহেদী হাসান - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর