Tuesday 23 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২
বিএনপি জমিয়তকে ছাড়লেও স্বতন্ত্রে লড়বেন রুমিন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:২৩ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:২৭

বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা। ফাইল ছবি

ঢাকা: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনটি বিএনপি তাদের মিত্র জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ছাড় দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা স্বতন্ত্র লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৩) বিকেলে রুমিন ফারহানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছি। স্বতন্ত্র হলেও নির্বাচনে লড়ব। আগামীকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করব।’

তিনি বলেন, ‘এত বড় দল (বিএনপি) তাদের ভালো-মন্দ দেখতে হয়। যেহেতু জমিয়তে উলামায়ের সঙ্গে তারা জোট করেছে। আসন না দিলে কেমন করে জোট হবে? দল বাধ্য হয়ে তাদের আসন দিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বহিষ্কার করা হবে– বিএনপির এমন বার্তা সম্পর্কে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘ব্যবস্থা নেওয়ার মনে করলে দল অবশ্যই নেবে। আমি তো তাদের বাধা দিতে পারব না।’

সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বাবা অলি আহাদ ছিলেন প্রথিতযশা রাজনীতিক। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে বলিষ্ঠ এই কণ্ঠস্বর ২০১২ সালের ২০ অক্টোবর মারা যান। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। অলি আহাদও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র হিসেবে এই আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন।

সম্প্রতি নিজ নির্বাচনি এলাকায় এক মতবিনিময় সভায় রুমিন ফারহানা বলেছিলেন, ‘আমি টাকা দিয়ে কারও কাছ থেকে মনোনয়ন কিনব না।’ স্বতন্ত্র লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়ে জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ১৯৭৩ সালে আপনাদের বাপ-দাদার ভোটে স্বতন্ত্র নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমি জানি না বাপের ভাগ্য বেটির কপালেও আছে কি না। বাপ স্বতন্ত্র ছিলেন, বেটিও স্বতন্ত্র– সময়ই এর উত্তর দেবে।’

নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি দুই দফায় ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ফাঁকাগুলোর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনসহ চারটি মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) মিত্র জমিয়তে উলামায়ের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব এ ঘোষণা দেন।

মির্জা ফখরুল জানান, সিলেট-৫ আসনে নির্বাচন করবেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ উবায়দুল্লাহ ফারুক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে প্রার্থী হবেন দলটির সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব। নীলফামারী-১ আসনে নির্বাচন করবেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী হবেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি মনির হোসেন কাসেমী।

এ সময় তিনি বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থীরা যেসব আসনে নির্বাচন করবেন, বিএনপি সেসব আসনে কোনো প্রার্থী দেবে না।’ এ সময় তিনি জনগণকে ‘খেজুর গাছ’ প্রতীকে ভোট দিয়ে ধানের শীষকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।

সরাইল, আশুগঞ্জ ও বিজয়নগর উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন। আসনটি বিএনপির ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত। অতীতে এখানে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা সাতটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ছয়বার বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া লাঙ্গল তিনবার, নৌকা একবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী দু’বার জয়ী হয়েছেন। এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৪৪৮ জন।

আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন রুমিন ফারহানাসহ চারজন। তবে অন্যরা কিছুটা গা ছাড়া ভাব দেখালেও রুমিন ফারহানা নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ ও সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং জাতীয় পার্টির দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা না থাকায় লড়াইয়ের ভিন্ন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। একদিকে জোটের প্রার্থী মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রুমিন ফারহানা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ৮-দলীয় জোটের প্রার্থী মোবারক হোসেন, যিনি বেশ আগে থেকেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া, ইসলামী আন্দোলনের নেছার আহমাদ আন নাছিরীও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে সমঝোতা হলে তাদের একজন প্রার্থী থাকবেন।

এখন দেখার বিষয় রুমিন ফারহানা কতদূর পর্যন্ত যেতে পারবেন। তিনি যদি নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকতে পারেন তাহলে লড়াই হবে ত্রিমুখী।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর