রাজবাড়ী: মোটা অঙ্কের বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ইতালিতে নেওয়ার কথা বলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক ইতালি প্রবাসী মানব পাচারকারী দলের সদস্য। এই প্রতারণার বিচার চেয়ে রাজবাড়ীতে ওই প্রবাসীর বাড়ির সামনে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সোনাকন্দর গ্রামে ইতালি প্রবাসী মোফাজ্জেলের বাড়ির সামনে এই মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা।
মানববন্ধনে কুমিল্লা, নোয়াখালি, মুন্সিগঞ্জ, খুলনা ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার অর্ধশত ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা অংশগ্রহণ করেন।
অভিযুক্ত মোফাজ্জেল রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ছোরাপ সদ্দারের ছেলে এবং সে ইতালি প্রবাসী।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মোফাজ্জেল দীর্ঘদিন ইতালিতে বসবাস করে আসছেন। সারাদেশে তার চক্র রয়েছে। চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য সারাদেশ থেকে ইতালিতে উচ্চ বেতনের চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়। ইতালি নিতে না পেরে বিভিন্ন ব্যক্তিতে কিছু টাকা পরিশোধ করে বাকি টাকা হাতিয়ে নেয়। অর্থ হাতিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দ্রত সময়ের মধ্যে ভুক্তভোগীদের অর্থ ফেরতের দাবি করেন বক্তারা।
কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে মানববন্ধনে আসেন মিরাজ সরকার। তিনি বলেন, ‘মোফাজ্জেল ২০২২ সালে চারজন লোক ইতালি নিছে। আমি ইতালিতে মোফাজ্জলের সঙ্গে কাজ করতাম, তার সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক ছিল। আমি দেশে চলে আসি। ২০২৩ সালে সে আমাকে বলে আরো কিছু লোক সে ইতালিতে নিতে পারবে। সেই হিসাবে আমার আত্নীয়সহ কাছের কিছু মানুষের বললে তারা আসতে রাজি হয়। সে তাদের কাছ থেকে ৪২ লাখ টাকা নিছে। আরো বলেছিল যেতে না পারলে টাকা ফেরত দেবে। কিন্তু কাউকে বিদেশ নিয়ে যেতে পারেনি। অনেক অনুরোধ করার পর আমাকে কিছু টাকা ফেরৎ দিছে। এখনো তার কাছে ২৭ লাখ টাকা পাব। বাকি টাকার জন্য মানববন্ধনে আসছি।’
গোয়ালন্দের যদু ফকির পাড়া গ্রামের মো. ছিদ্দিক মণ্ডল বলেন, ‘বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে মোফাজ্জল আমার কাছ থেকে ৩৪ লাখ টাকা নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে সে বিদেশে লোক নিতে পারেনি। আমি তার কাছে টাকা ফেরত চাইলেও সে টাকা ফেরত দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছি।’
মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাজু শেখ বলেন, ‘মোফাজ্জেল বেশ কয়েকজনকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন এমন অভিযোগ শুনেছি। কয়েকদিন আগে রাজবাড়ীর সেনা ক্যাম্পে একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা মোফাজ্জেলের বিষয় নিয়ে বসেছিলাম। সেখানে একজন অভিযোগকারীর টাকা মোফাজ্জেল ফেরৎ দেবেন বলে সিধান্ত হয়েছিল। বুধবার দেখলাম তার বাড়ির সামনে শত শত মানুষ মানববন্ধন করছে।’
মানববন্ধনের সময় বাড়িতেই অবস্থান করেন মোফাজ্জেলের বাবা ছোরাপ সরদারসহ পরিবারের সদস্যরা। মোফাজ্জেলের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তারা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
ঘটনাস্থল থেকে রাজবাড়ী সদর থানার উপ-পরিদর্শক রুস্তম বলেন, ‘প্রবাসে চাকুরির কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ শুনে আমরা ঘটনাস্থলে আসছি। মানববন্ধনে আসা ব্যক্তিদের কথা আমরা শুনেছি। তাদের আমরা আইনগত পরামর্শ দিয়েছি।’