ঢাকা: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনয়ন দিয়েছিল সাংবাদিক ওয়ালী উল্লাহ নোমান। প্রাথমিকভাবে ঘোষিত প্রার্থী মাওলানা মুখলিছুর রহমানের পরিবর্তে গত ১ ডিসেম্বর ওয়ালী উল্লাহ নোমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু জামায়াতের নেতৃত্বে ১০টি দল সমঝোতার নির্বাচন করার কারণে এই আসনটি খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সে কারণে সাংবাদিক ওয়ালী উল্লাহ নোমান ফেসবুক স্ট্যাটাসে আসনটি থেকে সরে আসার কথা জানান এবং তাকে সমর্থনকারীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ভালোবাসার ঋণ শোধ করা যাবে না।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) নিজের ফেজবুক অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেন, শুরুতেই আমি আন্তরিকভাবে সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্তটা ছিল হঠাৎ করে ধুমকেতুর মত। মনোনয়ন দাখিলের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বিরত হয়ে যাওয়াটাও অনেকটা কাকতালীয়। মূলত হঠাৎ করেই আমিরে জামায়াতের একটি ফোন আমাকে নির্বাচনে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। জোট রক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে দলীয় সিদ্ধান্তেই মনোনয়ন দাখিল করা থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে অনেকেই মনে কষ্ট পেয়েছেন। বিশেষ করে যারা দিনরাত আমার সঙ্গে থেকে কাজ করেছেন তাদের কষ্টটা অনেক বেশি। বেশ কয়েকজন ফোন করে কেঁদেছেন। যারা আমাকে ভালবেসে অনেক রিস্ক জেনেও সমর্থন জানিয়েছেন তারাও কষ্ট পেয়েছেন। যারা আমাকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাদের মনোবেদনাও আমি বুঝি।
এলাকার মানুষের প্রতি আমার ভালবাসার টান ছিল জীবনের শুরু থেকেই। ঢাকায় যখন ছাত্রজীবন। তখনো এলাকার ছাত্র/ছাত্রীর নানা সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতাম। এছাড়া কারো কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে নি:স্বার্থভাবে এগিয়ে যেতাম। জীবনে কখনো চাওয়া-পাওয়ার হিসাব আমার ছিল না, এখনও নেই। হঠাৎ করেই নির্বাচনের সিদ্ধান্তটা ছিল মানুষের প্রতি ভালবাসা, জুলাই অভ্যত্থানে তরুণদের প্রত্যাশা ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ এবং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সরাসরি ভূমিকা রাখার চেষ্টা করা। যত যাই বলি না কেন, সঠিক জায়গায় থেকে ভূমিকা রাখতে পারলে সেটা ফলপ্রসু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল। চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে। খায়রিহি, ওয়া শাররিহি মিনাল্লাহি তায়ালা।
নেতা না হয়ে খাদেম হওয়ার অদম্য একটা ইচ্ছা ছিল। বৃটেনের পরিচ্ছন্ন রাজনীতি দেখে যা শিখেছিলাম সেটা কাজে লাগিয়ে উদাহরণ তৈরি করার প্রতিজ্ঞা ছিল মনে মনে। আমার আচার-আচরণ ও ব্যবহারে এটা প্রমাণ করারও চেষ্ট করেছি অল্পদিনে। একেবারে ময়লা হাত দেখেও কারো সঙ্গে করমর্দন করা থেকে বিরত থাকিনি। চার সপ্তাহের এই অভিযানে অন্তত লাখ খানেক মানুষের সঙ্গে করমর্দন করতে সক্ষম হয়েছি। মানুষের কাছে গিয়ে দুঃখ কষ্টের কথা শোনার চেষ্টা করেছি। খুবই ইচ্ছে ছিল মানুষের অধিকার গুলো নিয়ে তাদের কাছে ফিরে যাবো। কাউকে যেন আমার কাছে এসে বলতে না হয় তাদের সমস্যার কথা। সমস্যা শুনতে তাদের কাছে আমি যাব এটাই ছিল আমার রাজনীতির প্রথম চিন্তা।
তবে আল্লাহ পাক তকদিরে কি রেখেছেন জানি না। আমি হতাশ নই। হয়ত: আরো বড় কোনো জায়গা থেকে দেশ জাতি ও এলাকার জন্য কাজ করার সুযোগ তৈরি হতে পারে, এটাও আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। এটা আমার এক নতুন অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশে এমন লোক আছে, যাদের এক কাপ চা খাওয়াতে হয় না, এক টাকা খরচ দিতে হয় না, অথচ, দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
আরো আশ্চর্যের বিষয়, প্রায় এক মাসব্যাপি টানা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত, জনসংযোগে আমার সঙ্গে প্রচুর লোক থাকতেন। কিন্তু আমি এক কাপ চা’র বিল জোর করেও দিতে পরিনি। বহুবার চেষ্টা করেছি, কাজ হয়নি। চা, নাস্তা কোনো কিছুর জন্য আমাকে খরচ করতে দেয়নি তারা। কখনো কারো মধ্যে ক্লান্তির চাপও দেখিনি। উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়েই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জনসংযোগ করেছেন।
আমার অল্প দিনের এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা পাল্টে দিয়েছে। আমি অল্প দিনের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, বাংলাদেশ একদিন ইনসাফ ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে-ই।
আমরা জানতাম নির্বাচনে টাকা ছাড়া কেউ কথা বলে না। টাকা ছাড়া কোনো কাজে পাওয়া যায় না। ছোটবেলা থেকে এমনটাই শুনে এসেছি। নিজে মাঠে নেমে দেখলাম সময় বদলেছে। মাঠে নিঃস্বার্থ পরিশ্রমের জন্য কর্মী তৈরি হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছে শতভাগ সততা, কাজে আন্তরিকতা। জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবির এমন লোকবল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, এই প্রশংসা করতেই হবে আমাকে। এই দেশ পিছিয়ে থাকবে না। দুর্নীতিমুক্ত এমন নিরলস কর্মী বাহিনী থাকলে দেশ পিছিয়ে থাকার কথা নয়।
আপনারা যারা আমার সাথে থেকে কাজ করেছেন, সমর্থন জুগিয়েছেন সবাই আমাকে ঋণী করেছেন। এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করা যাবে না।
আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। যেখানেই থাকি না কেন, আমার মন, হৃদয় সব সময় থাকবে মাধবপুর-চুনারুঘাটের মানুষের মাঝে। এখন মোবাইলের যুগ। যখনই কোনো কাজে আমাকে প্রয়োজন মনে করবেন সরাসরি ফোন দেবেন। আমি রিসিভ করতে না পারলেও পরবর্তীতে কলব্যাক করব ইনশাআল্লাহ। সমস্যা শুনতে আপনাদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করব।
অল্প দিনের চলার পথে কারো সঙ্গে কোনো রকমের খারাপ ব্যবহার করে থাকলে বা আমার কোনো আচরণে মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন।
সবশেষে দোয়া করি, বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদ মুক্ত সার্বভৌম কল্যাণ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার মত যোগ্য নেতৃত্বের হাতে দেশের দায়িত্ব যেন আল্লাহ দেন। আমরা এই মাতৃভূমিকে আর কোনো জালেম, লুটেরা শাসকের হাতে দেখতে চাই না।