Tuesday 30 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বগুড়ায় সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া


৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:২৫

শহরের বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল। ছবি: সারাবাংলা

বগুড়া: বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বগুড়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জেলা বিএনপির রাজনীতিতে ‘মা’ বলে খ্যাত খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শুধু দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকই নন, আপামর মানুষও শোকে নিমজ্জিত হয়েছেন। তার মৃত্যুতে শোক শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন দেয়ালে, বিপনী বিতানে, দোকানে, বাজারে ব্যানার টানিয়েছে। কোনো কোনো মার্কেট বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা শহরের নবাববাড়ী সড়কে দলীয় কার্যালয়ে ছুটে আসেন নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। এসময় নেতাকর্মীদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে নেত্রীর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় তাৎক্ষণিকভাবে দলীয় কার্যালয়ে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, কালোব্যাজ ধারণ করেন নেতাকর্মীরা। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে তারা ঘরের বাইরে চলে আসেন। এরপর বাদ জোহর শহরের বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হতে হোটেল-রেস্তরাঁসহ বিভিন্ন এলাকায় টেলিভিশনের সামনে দাঁড়ান তারা। এসময় সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। অনেক নেতাকর্মী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফনে অংশ নিতে ঢাকায় রওনা দিয়েছেন।

জানা যায়, বগুড়ার কৃতিসন্তান শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বরণের পর ১৯৮২ সালে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির রাজনীতিতে নাম লেখান। দেশের মানুষের জন্য ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ে তিনি রাজনীতির মাঠে সোচ্চার হয়ে উঠেন। ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে স্বামী শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি হিসেবে বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। বগুড়া-৬ (সদর) আসনে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। তিনি এ আসন থেকে শপথ না নেওয়ায় ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে জহুরুল ইসলাম এমপি নির্বাচিত হন।

এরপর ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন। খালেদা জিয়া ফেনীর আসন রাখায় ২০০৯ সালের উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার নির্বাচিত হন। বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বর্জন করায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেও দলীয় সিদ্ধান্তে শপথ না নেওয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১৯ সালের ২৪ জুন এই আসনে উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এসময়ের মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বগুড়ার উন্নয়নের পাশাপাশি নারী শিক্ষায় আমুল পরিবর্তন করে মাইফলক সৃস্টি করেন এই নেত্রী। তাকে ‘গণতন্ত্রের মা’ উপাধি দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাজনীতি করতে গিয়ে দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় কোনো আপোস না করায় তিনি হয়ে উঠেন আপোসহীন নেত্রী।

বগুড়া জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে বগুড়ার অভূতপূর্ণ উন্নয়ন কাজ হয়েছে। তার হাতে সম্পন্ন হওয়া উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে ৫০০ শয্যার বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আন্তর্জাতিক মানের বগুড়া শহিদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম, বগুড়া সুইমিং পুল, বগুড়া বিমানবন্দর (বিমান বাহিনীর ফ্লাইং স্কুল), বনানী-মাটিডালি সড়ক সম্প্রসারণ, বগুড়া নার্সিং কলেজ, আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাস সংযোগ অন্যতম। এসব উন্নয়নের সুফল বগুড়াবাসী ভোগ করছেন। এসব প্রকল্প বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে নিজে উদ্বোধন করেছেন। তার নামফলক আজও বগুড়ার বিভিন্ন স্থাপনায় রয়েছে। তিনি বগুড়ার পুত্রবধূ হিসেবে সবার নিকট জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন। বগুড়ার এমপি থাকাকালীন সময়ে তিনি প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গণসংযোগ করেছেন। সেসময় বগুড়ায় একাধিক জনসভায় তিনি বক্তৃতা করেছেন।

বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায়ও দলের ও দেশের মানুষের খোঁজ নিতেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সুচিকিৎসার সুযোগ না দিয়েই তাকে চলে যেতে হলো। এই অপূরণীয় ক্ষতি কোনোদিন পূরণ হওয়ার নয়। আমরা তার মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহন করেন। বগুড়ার কৃতিসন্তান শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ১৯৬০ সালে বেগম খালেদা জিয়া বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর তিনি ১৯৮২ সালে ২ জানুয়ারি বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন। রাজনীতিতে সচল থাকা অবস্থায় অপর দলের নানা বাঁধা, সংগ্রাম করে দেশের মানুষের জন্য কথা বলেছেন। তার মৃতুতে শুধু বগুড়া নয় দেশের রাজনীতিতে অভিভাবক শূণ্য হয়ে গেলো।

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা জানান, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেবল আমাদের নেত্রী ছিলেন না। তিনি ছিলেন আমাদের মায়ের মতো। বগুড়ার মানুষের সঙ্গে তার আত্মার সম্পর্ক। তার মৃত্যুতে আমরা সত্যিকার অর্থেই এতিম হয়ে গেলাম। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তার আপোসহীন নেতৃত্ব ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’

তিনি বলেন, দলীয় নেতাকর্মীরা শোকাহত। কালো ব্যাজ ধারণ করেছে। কোরআন খতম করা হয়েছে। আগামী সাত দিনব্যাপী দলের নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন এবং প্রত্যেকটা দলীয় অফিসে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল করা হবে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর