Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাগেরহাটে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ১৪ বছর ধরে শূন্য ১৪ পদ!


২০ জুলাই ২০১৮ ০৯:০১

।। জামাল হোসেন বাপ্পা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বাগেরহাট: গ্রামীণ জনপদের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে ২০০০ সালে বাগেরহাটে স্থাপন করা হয় একমাত্র মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। মোড়েলগঞ্জের তুলাতলায় ২১টি পদ বিশিষ্ট এই প্রতিষ্ঠানে গত ১৪ বছর ধরে শূন্য রয়েছে ১৪টি পদ।

অবকাঠামোগত সুবিধা থাকার পরও কেবলমাত্র জনবল সংকটে বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। ২০০৫ সালে কৃষি, পশু পালন, পোলট্রি ও মাছ চাষ ট্রেড মোট ৪টি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। এর পরের বছর জুলাই মাসে জনবল সংকটে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১০ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় মৌ চাষ বিষয়ক নতুন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। সাতক্ষীরা থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী যায় সেই প্রশিক্ষণ নিতে। নতুন করে ২০১১ সালে কম্পিউটার, বিউটিফিকেশন, ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলরিং প্রশিক্ষণ শুরু হয়। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে সেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখনো চলছে।

যদিও ল্যাবে কম্পিউটার সংকট রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ পর্যাপ্ত না, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।

প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রশিক্ষক পদে ৫টি, হোস্টেল সুপার ১টি, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ১টি, বাবুর্চি ১টি, অফিস সহকারী ৩টি, নৈশপ্রহরী ২টি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী ১টি পদ শুন্য রয়েছে।

কম্পিউটার বিভাগে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন সুমাইয়া আক্তার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে কম্পিউটার শিখতে এসেছি। এখানে বেশ কিছু সমস্যা আছে। ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীর জন্য আছে মাত্র ৬টি কম্পিউটার। এর মধ্যে দুই-একটি প্রায়ই নষ্ট থাকে।

মোরশেদা আক্তার বলেন, আমাদের প্রশিক্ষণের সময় তিন মাস। একটা কম্পিউটার চারজন ব্যবহার করি। অধিকাংশ দিন দেখা যায়, ক্লাসের সময় বিদ্যুৎ থাকে না। সকালে বিদ্যুৎ গেলে বিকেলে আসে। সৌরবিদ্যুৎ বা জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকলে আমরা নির্বিঘ্নে শিখতে পারতাম।

ইনস্টিটিউটে থাকতেও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় শিক্ষার্থীদের। কয়েকজন বলেন, হোস্টেলে খুবই নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। স্থায়ী বাবুর্চি নেই। অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পাওয়া একজন আছেন, রান্নার কাজে তাকে আমাদেরই সহযোগিতা করতে হয়। এখানে পুকুরের পানি খেতে হয়, সেটাও শীত মৌসুমে শুকিয়ে যায়।

কম্পিউটার প্রশিক্ষক মো. আছাদুজ্জামান বলেন, আমরা আন্তরিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। এতে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়।

মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মোখলেচুর রহমান বলেন, বিভিন্ন জটিলতার কারণে প্রশিক্ষণার্থীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে পারছি না আমরা। প্রতিষ্ঠান শুরুর সময় যে উপকরণগুলো আমরা হাতে পেয়েছিলাম, এখনো সেসব দিয়েই চলছে। নতুন করে কিছু পাওয়া যায়নি। প্রয়োজনীয় উপকরণ না থাকায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাচ্ছে।

তবে এত সংকটের মধ্যেও এখান থেকে ১ হাজার ৫৭৪ জন নারী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে নিজে প্রতিষ্ঠান করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছেন। আবার অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকরি পেয়েছেন, জানান তিনি।

এই প্রসঙ্গে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপনকুমার বিশ্বাস বলেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাব। আশা করি, দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হবে।

বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, খুলনা বিভাগের একমাত্র মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটটি আমাদের উদ্যোগ ছিল। কিন্তু জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় এসে এর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু করে। এখন যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।

 

সারাবাংলা/এটি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর