Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত যাপন!


২০ জুলাই ২০১৮ ০৯:০৯

।। মো. আশিকুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।

রাজবাড়ী: ভাঙতে শুরু করেছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া এলাকার পদ্মানদীর পাড়। তাই আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে ওই এলাকার মানুষের।
গেল কয়েকদিনের ভাঙনে দৌলতদিয়া ঘাট সংলগ্ন সিদ্দিক কাজী ও ছাত্তার মেম্বার পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে সরিয়ে নিতে হয়েছে ২০টিরও বেশি বসত ঘর। ভাঙনের কবলে বন্ধ হয়ে গেছে ছয়টির মধ্যে একটি ফেরিঘাট। বাকীগুলোও রয়েছে হুমকির মুখে।

জরুরি ভিত্তিতে বালির বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, যে পরিমাণ জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন ছাত্তার মেম্বার পাড়া এলাকার পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা তারাবানু বলেন, ২২ বছর আগে পদ্মা নদীর ভাঙনে কুশিয়াহাটা থেকে ছাত্তার মেম্বার পাড়ায় আশ্রয় নেন তিনি। কিন্তু, সেই পদ্মা নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন আবার এসে ঠেকেছে তার বাড়ির কাছে। গেল কয়েকদিন ধরে পদ্মানদীতে যে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাই আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তার। কখন যেন আবার ভিটেমাটিসহ বিলীন হন সর্বগ্রাসী পদ্মায়।

একই এলাকার হজরত আলী মণ্ডল, মোক্তার মণ্ডল, আতর আলী ও খোদেজা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। সবাই জানালেন অন্তত তিন থেকে চারবার ভাঙনের কবলে পড়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। এবারও ভাঙন শুরু হওয়াতে খুব আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ভাঙন ঠেকাতে যে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে তাতে ভাঙন রোধ করা যাবে না বলে মনে করেন এই বাসিন্দারা। সে কারণে সরকারের কাছে বালির বস্তার পরিমাণ বাড়িয়ে এর সঙ্গে পাথর ফেলার দাবি জানান তারা। সেই সঙ্গে তারা দ্রুত স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ারও আবেদন জানান।

স্থানীয় জমশের শেখ বলেন, ‘গেল কয়েকদিনের ভাঙনে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন সিদ্দিক কাজী ও ছাত্তার মেম্বার পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে ২০টিরও বেশি বসত ঘর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা খুব অসহায় জীবনযাপন করছি।’

প্রতিবছর লাগাতার ভাঙনে এখন পদ্মা নদী এসে ঠেকেছে দৌলতদিয়া ঘাটের কোল ঘেঁষে। ঘাট এলাকার বাসিন্দা রাসেল বলেন, গত বছর ঘাট এলাকার অনেক অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এবারও ভাঙনের কবলে পড়ে ছয়টি ফেরিঘাটের মধ্যে ইতোমধ্যে দুই নম্বর ঘাটটি বন্ধ হয়ে গেছে। তীব্র স্রোতের কারণে বাকি ফেরিঘাটগুলোও হুমকির মুখে রয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে শিগগিরই স্থায়ী পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ঐতিহ্যবাহী দৌলতদিয়া ঘাটটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার ভাঙন ঠেকাতে যে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম বলে জানালেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম মণ্ডল। তিনি বলেন, এ এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি ফেরিঘাট, দুইটি স্কুল ও প্রায় এক হাজার পরিবারের বসবাস। তাই এখানে ভাঙন রোধে বেশি বেশি করে জিও ব্যাগ ফেলা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার জানান, ডিজাইন দপ্তর থেকে প্রকৌশলীরা এসে ঘাট এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। ঘাটে এক কিলোমিটারে এলাকায় জরুরি ভাঙন ঠোকাতে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার বালি ভর্তি জিওব্যাগ দরকার হবে। আপাতত এক কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে গত ১৪ জুন থেকে ঘাটের এক কিলোমিটার এলাকায় জরুরি ভাঙন ঠেকাতে বালি ভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। প্রতিদিন ট্রলারে করে প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে পদ্মা পাড়ের পানিতে। কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরিফ এন্টারপ্রাইজ। ভাঙন অব্যাহত থাকলে পর্যায়ক্রমে কাজ করা হবে। তবে ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়াও অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।

বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার যে কাজ চলছে তা সুষ্ঠুভাবেই হচ্ছে বলে জানালেন গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) আব্দুল্লাহ আল সাদীদ। তিনি নিজে এর তদারকি করছেন জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, বালির বস্তার পরিমাণ আরও বাড়ানো গেলে ঘাট রক্ষায় সুবিধা হবে।

সারাবাংলা/ এমএইচ/এসএমএন/এএস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর