Wednesday 27 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংকীর্ণ ‘ধোলাই’ এখন ‘ময়লার খাল’


২১ জুলাই ২০১৮ ০৯:০১

।। জগেশ রায়, বিশ্ববিদ্যালয় করেসপন্ডেন্ট ।।

জবি: একসময় ঢাকার প্রধান জলপথ ছিল ধোলাই নদী। ঐতিহাসিক সেই নদী সময়ের পরিক্রমায় অনেক আগেই পরিণত হয়েছে খালে। এখন খাল থেকে ক্রমশ ভাগাড়ে পরিণত হয়ে যাচ্ছে সেটি। কাগজপত্রে প্রায় ১০০ ফুটেরও বেশি প্রশস্ত ধোলাই খাল বাস্তবে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ফুট টিকে আছে। বুক জুড়ে তার পানির বদলে জমে আছে রাশি রাশি ময়লা-আবর্জনা।

ময়লায় ভরাট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি খালের পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে দোকান, বাড়ি আর রাস্তা। যদি এখনই কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয়, এই খালটি ময়লায় মিশে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে এই খালটি। এই ওয়ার্ডের লোকসংখ্যা এক লাখ ২০ হাজারের বেশি। আবর্জনা ফেলে খাল ভরাট করে এরই মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে অন্তত ৫০টি অস্থায়ী দোকান।

বর্তমানে কেশব ব্যানার্জি রোডসংলগ্ন এবং মিল ব্যারাকের পাশ ঘেঁষে যে উন্মুক্ত স্থান আছে, সেটুকুও আবর্জনায় ভরাট; আর দু’পাশের ভরাট জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। খালের সামান্য যে পানি, সেই পানিও নোংরা, দূষণে দুর্গন্ধময়।

ধোলাই খালের বক্স-কালভার্টের মাধ্যমে যাত্রাবাড়ী, পুলিশ লাইনস ব্যারাক, কেশব ব্যানার্জি রোড, আর কে দাস রোড, আলমগঞ্জ রোড, সূত্রাপুর, নারিন্দা, দয়াগঞ্জের সাথে যুক্ত থাকায় এখানকার সবগুলো ড্রেনেজ উন্মুক্ত হয়েছে এই খালে। খাল ভরাট হওয়ায় প্রায়ই ড্রেনেজে মিশে যায় সুয়ারেজের বর্জ্য, বৃষ্টি হলে রাস্তাতেও উঠে আসে নোংরা পানি।

খালের পাশে অবৈধভাবে দোকান করা এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযান মাঝে মাঝে চালায়। তবে টাকা দিলে সমস্যা হয় না। অভিযানের সময়টুকু দোকান বন্ধ রাখলেই হয়।’

বিজ্ঞাপন

খাল ভরাট ও দখলের বিষয়টি জানতে চাইলে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘বর্তমানে ধোলাইখালের আশেপাশের মানুষ প্রতিনিয়ত তাদের গৃহস্থালির বর্জ্য খালে ফেলে। পরিবেশকর্মীরা বারবার নিষেধ করলেও কেউ শোনে না। এজন্য আমার উদ্যোগে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে যাতে মানুষ সেখানে বর্জ্য ফেলতে না পারে। কিন্তু তারপরও প্রতিনিয়ত ময়লা ফেলা হচ্ছে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী খান মোহাম্মাদ বেলাল বলেন, ‘ধোলাই খালসহ বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ স্থাপনা তুলে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়তই উচ্ছেদ অভিযান চলছে। আমার একদিক থেকে উচ্ছেদ করলেও আরেকদিক থেকে তারা বসে যায়।’ তবে তিনি ধোলাই খালের খোঁজ-খবর নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হবে বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দা ইসরাত নাজিয়া সারাবাংলা’কে বলেন, ‘ধোলাইখাল ময়লা-আর্জনা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে— এটা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। নগর গড়ে তুলতে হলে অবশ্যেই পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার । অপরিকল্পিতভাবে নগর গড়ে ওঠার ফলে মানুষ সাময়িক লাভের জন্য প্রতিনিয়ত বর্জ্য ফেলছে। এতে পরিবেশ পড়ছে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে। শুধু ধোলাই খাল না, দেশের সব জলাশয়ের চিত্রই এমন। এসব জায়গা দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সিটি করপোরেশনের কঠোর ভূমিকা দরকার।’

সৈয়দা ইসরাত আরও বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনার ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন। বিশেষ করে জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত করে মানুষ যেন না ময়লা ফেলে, সেজন্য কঠোর আইনি ব্যবস্থা থাকতে হবে। ধোলাই খালে মানুষ প্রতিনিয়ত অন্যায় করে যাচ্ছে, দেখভাল করার কেউ নেই। অথচ ময়লা ফেলে যারা এই জায়গাটিকে নষ্ট করছেন, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিলে হয়তো এই প্রবণতা কমবে। পাশাপাশি মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে যেন পরিবেশ রক্ষায় তারাও যার যার জায়গা থেকে ভূমিকা রাখতে পারেন।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

দক্ষিণের সুখ-অসুখ: এখানে নদী মরে লোভ আর নির্যাতনে

সারাবাংলা/এমও

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর