গোলমরিচ চাষে লাভবান খাসিয়ারা
২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৯:২৯ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ১৬:৫০
হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার
পর্তুগিজ, ফরাসি ও ইংরেজরা যে কয়টি কারণে অবিভক্ত ভারতবর্ষে এসেছিল তাদের অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি মসলা সংগ্রহ। ওই সময় ভারতবর্ষে মসলার উৎপাদন হতো প্রচুর। তবে বাংলাদেশে সে সময়ে মসলা চাষ হতো না।
বর্তমানেও বাংলাদেশে যে মসলা উৎপাদন হয় তা খুবই অপ্রতুল। এখনো ভারত ও পাকিস্তান থেকে বিভিন্ন জাতের মসলা আমদানি করে। কিন্তু বাংলাদেশেও মসলা উৎপাদন করা সম্ভব। সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ দেশেও প্রচুর পরিমাণে মসলা চাষ করা সম্ভব। এটি প্রমাণ করেছেন হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার মুছাই পাহাড়ের আদিবাসী খাসিয়ারা।
আদিবাসী খাসিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাসিয়া পান, সুপারি, লেবু, আনারস চাষে জীবিকা নির্বাহ করত। তবে বর্তমানে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট, ২০০৫ সাল থেকে এ বাসিন্দারা নির্ভর করেছেন গোলমরিচ চাষে। তারা পান চাষের এলাকায় এখন মসলা চাষ করছে। ৬০ একর এলাকা জুড়ে হাজার হাজার গোলমরিচ গাছ লাগানো হচ্ছে। তারা আগ্রহী হয়ে ওঠার ফলে পাল্টে গেছে খাসিয়াদের অর্থনৈতিক অবস্থা।
সরেজমিনে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার আলীয়াছড়া পান পুঞ্জিতে (পান চাষের এলাকা) গিয়ে, আদিবাসী গোল মরিচ চাষ খাসিয়াদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, গোল মরিচের গাছ অনেকটা পান গাছের মতো। এ গাছও অন্য বড় গাছকে অবলম্বন করে বেড়ে ওঠে। প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় অর্থাৎ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে গোল মরিচ গাছের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। চারা রোপণের ৪ বছরের মধ্যে প্রতিটি গোল মরিচ গাছে ফলন আসে। একটি গাছ থেকে মৌসুমে আনুমানিক ৩ কেজি গোল মরিচ উৎপন্ন হয়। সময়মতো গাছ থেকে গোল মরিচ সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে বাজারজাত করতে হয়। আদিবাসী খাসিয়া পান পুঞ্জি আলীয়াছড়ায় অসংখ্য সুপারি গাছ রয়েছে। এ গাছের অবলম্বন করেই আলীয়াছড়ার আদিবাসী চাষিরা গোল মরিচ চাষ করছেন। এতে খরচ ও পরিশ্রম অনেকটা কমে যায়।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল বাতিন জানান, হবিগঞ্জের মাটি, পরিবেশ ও আবহাওয়া গোল মরিচ চাষের সম্পূর্ণ উপযোগী। এ অঞ্চলের চাষিরা গোল মরিচসহ অন্যান্য মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদন করতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সহায়তা করতে প্রস্তুত।
তিনি জানান, দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার মসলা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশে ব্যাপক ও বাণিজ্যিকভাবে মসলা উৎপাদন করতে পারলে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না।
আলীয়াছড়া খাসিয়া পান পুঞ্জির বাসিন্দা গোল মরিচ চাষি অরুন খাসিয়া জানান, তিনি তার ৪ একর জমিতে পানের বিকল্প হিসেবে গোল মরিচ চাষ করেছেন। তার গোল মরিচ গাছগুলোতে ফলন হয়েছে ভালো। মান ভালো হওয়ার কারণে বাজারে মূল্যও পেয়েছে বেশি।
তিনি জানান, তার জমিতে যে পরিমাণ গোল মরিচ উৎপাদন হয়েছে তাতে। তিনি যে অর্থ উপার্জন করেছেন পান চাষে ওই সময়ে এতো অর্থ উপার্জন সম্ভব নয়। ফলে ওই খাসিয়া পান পুঞ্জির অধিকাংশ বাসিন্দা পানের বদলে গোল মরিচ চাষে অধিক পরিমাণে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন। আলীয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে এখন গোল মরিচ চাষের বিপ্লব শুরু হয়েছে।
সারাবাংলা/আরসি/টিএম/একে