Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নৌকা কেন ঠেকাতে হবে, নৌকার অপরাধ কী?


২১ জুলাই ২০১৮ ২০:৩১

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আবার কেউ কেউ বললেন, নৌকা ঠেকাতে হবে। আমার প্রশ্ন নৌকা কেন ঠেকাতে হবে? নৌকার অপরাধ কী? সামনে তো বন্যা আসার সময় হচ্ছে। শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি বা ভাদ্র মাসে গিয়ে পানি আসতে পারে। তারা কী নৌকায় চড়বে না? তাদেরও তো নৌকায় চড়তে হবে।

শনিবার (২১ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত গণসংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

দুপুর সাড়ে তিনটার পরে গণ সংবর্ধনাস্থলে আসনে তিনি। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, অস্ট্রেলিয়া থেকে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ড অর্জন ও ভারতের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি প্রাপ্তিতে প্রধানমন্ত্রীকে এই গণ সংবর্ধনার আয়োজন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের উন্নয়ন। একটি দেশের উন্নয়ন করতে হলে আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। যেখানে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেই হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা যখন চলে তখনই আমরা সরকার গঠন করেছি। তারপরও সেই মন্দার প্রভাব আমরা বাংলাদেশে পড়তে দেইনি। আমরা সেটা হতে দেইনি।’

জাতির পিতার নীতিই বিশ্বাস করি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমাদের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন হয়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৭৮ভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। প্রবৃদ্ধি যদি উচ্চহারে অর্জিত হয়। আর মূল্যস্ফীতি যদি নিম্ন থাকে, সেই অর্থনীতির সুফল সাধারণ মানুষ গ্রামের মানুষ তারা ভোগ করতে পারে। তারা পায়। তারা ভোগ করে।’

‘যদিও দুভার্গ্য আমাদের এমনও শুনতে হয়, উচ্চ প্রবৃদ্ধি নাকি ভালো না। দেশ উন্নয়নশীল হওয়া নাকি ভালো না। কেউ কেউ এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকেন। কারা দেয়, কার আঁতে ঘা লাগে? আঁতে ঘা লেগেছে তাদের, যারা আমার বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষ, হাড্ডিসার, কঙ্কালসার, বুভুক্ষ মানুষ, যাদের শুধু হাড় আর চামড়া আছে, পেট-পিঠ এক হয়ে গেছে; ওই দরিদ্র মানুষকে দেখিয়ে দেখিয়ে বিদেশ থেকে অর্থ এনে সেই অর্থ যারা লুটে খেয়ে নিজেরা অর্থশালী সম্পদশালী হয়। দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে তাদেরই আঁতে ঘা লেগেছে। তাই এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিরুদ্ধে তারা মানুষকে বিভ্রান্তি করতে চায়।’

উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি ধরে রেখে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন শেখ হাসিনা।

জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূলে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার লক্ষ্যটাই হচ্ছে, দেশকে উন্নত করা সমৃদ্ধশালী করা। আজকে যারা মনে করেন, প্রবৃদ্ধি অর্জন ভালো না। দেশ উন্নয়নশীল হলে ভালো না। তাদের আমার সন্দেহ হয়, তারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে কি না বা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে কি না? নাকি তারা স্বাধীনতা বিরোধীদের পদলেহনকারী, সেটাই হচ্ছে আমার প্রশ্ন? আবার একটি শ্রেণী আছে, যাদের কোনো উন্নয়নই নাকি চোখে পড়ে না। আবার কেউ কেউ বললেন, নৌকা ঠেকাতে হবে। আমার প্রশ্ন নৌকা কেন ঠেকাতে হবে? সামনে তো বন্যা আসার সময় হচ্ছে? শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি বা ভাদ্র মাসে যেয়ে পানি আসতে পারে. তারা কি নৌকায় চড়বে না? তাদেরও তো নৌকায় চড়তে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্তত রাজনৈতিক নেতা যারা রিলিফ দিতে গেলেও তো নৌকায় চড়ে যেতে হবে? তাহলে নৌকা ঠেকাবেন কেন? নৌকার অপরাধটা কি? এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার পেয়েছে! এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এই নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে পেরেছি। নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়েছে বলেই আমরা এটা করতে পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎ ক্লাবে পৌঁছাতে পেরেছি। আমরা স্যাটেলাইট যুগে পৌঁছাতে পেরেছি। এ নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজকে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২২ ভাগে নেমে এসেছে। আগামীতে দারিদ্র্যের হার হ্রাস করে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারব।’

‘তাহলে নৌকা ঠেকাবেন কেন? নৌকা ঠেকিয়ে কি ও রাজাকারদের, যুদ্ধাপরাধীদের তাদেরকেই আবার ক্ষমতায় আনবেন? যারা নৌকা ঠেকাতে চায়, তাদের কাছে সেটাই আমার প্রশ্ন?’

আজকে জনগণের ভোটাধিকার জনগণের হাতে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর প্রায় ছয় হাজারের ওপর নির্বাচন হয়েছে। প্রত্যেকটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো প্রার্থী জয়যুক্ত করেছে। সেখানে গণতন্ত্র যদি না থাকবে, তাহলে মানুষ ওইভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করণ কীভাবে? ২০১৫ সালে কেউ কেউ চেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত করবে। জনগণ আমাদের সাথে ছিল। জনগণই তাদের বাধা দিয়েছে। আমাদের উৎখাত করতে পারেনি। কিন্তু নিজেরা আবার ঘরে ফিরে গেছে।’

‘এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। আর আওয়ামী লীগ সরকারে আসলেই জনগণ কিছু পায়। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। তাদের অস্তিত্ব টিকে থাকে। ১৯৭৫ থেকে ৯৬ মানুষ দেখেছে, ওই ২১ বছর এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্তও এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়েই ছিনিমিনিই খেলা হয়েছে বলে যোগ করেন শেখ হাসিনা।

আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদার আসন পেয়েছে। আজকের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। আমাদের সেই লক্ষ্য আছে।

আগামী দিনের দেশের উন্নয়নে পদক্ষেপগুলোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই রাজধানী ঢাকার সাথে অর্থ্যৎ ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা দিনাজপুর-ঢাকা-বরিশাল, পায়রাবন্দরসহ আমরা সেখানে দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করব। আমাদের বিমান বহর ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল। ইতোমধ্যে আমরা নতুন বিমান কিনেছি। আরও সাতখানা বিমান আমরা ক্রয় করবো যা আন্তর্জাতিক আঞ্চলিক এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আমরা আরও উন্নত করব। একটি দেশকে আমরা কীভাবে উন্নত করব আমাদের সেই পরিকল্পনা রয়েছে। সেই চিন্তা করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং দেশকে উন্নত করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী দুপুর সাড়ে তিনটার পরে সংবর্ধনাস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ৩টা ৩৪ মিনিটের দিকে সংবর্ধনা মঞ্চে উঠে আসন গ্রহণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনা মঞ্চে উঠলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে লাল-সবুজ-সাদা পতাকা নাড়িয়ে অভিবাদন জানান। বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের অভিবাদন জানান।

দুপুর চারটা ১৯মিনিটের দিকে সংবর্ধনার মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। তার আগে দলের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হয়।

গণসংবর্ধনায় অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

সংবর্ধনা মঞ্চে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ১৪ দলের শরিক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, গত ৭ জুলাই শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়ার ঘোষণার কথা জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে গত ১৯ জুন দলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৭ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২১ জুলাই বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই গণসংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

গণসংবর্ধনায় অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমদু এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। সংবর্ধনা মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, সহযোগী  ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আরও পড়ুন

প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা: নেতাকর্মীরা আসছেন বর্ণিল সাজে
স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সংবর্ধনা আজ
শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনা, বন্ধ থাকবে যে সব রাস্তা
কেউ জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেললে বরদাশত করা হবে না
কাপড় বিক্রেতা বলেছিল আপনারা নিজেদের নেতাকে হত্যা করলেন

 

 


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

আইভরি কোস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৪০

সম্পর্কিত খবর