Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ কোটারও বাস্তবায়ন নেই


২২ জুলাই ২০১৮ ১৫:৫৮

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।। 

ঢাকা: রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব কনফারেন্স লাউঞ্জের রোববার (২২ জুলাই) সকালের প্রেস কনফারেন্সটি ছিল অন্য দশটা প্রেস কনফারেন্সের থেকে আলাদা। পুরো হলরুম জুড়ে সবাই বয়সে তরুণ-যুবা। যাদের অধিকাংশই কালো সানগ্লাস পরা। আবার যাদের চোখে সানগ্লাস নেই তাদের মুখ কিংবা শরীরের দিকে তাকালে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এরা সবাই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ। যারা নিজেরা নিজেদের প্রতিবন্ধী বলে মেনে নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এসব যুবকরা প্রেসক্লাবে মিলিত হন একটি প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে। ‘বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রয়েছে: সত্যিই কি তাই? এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজার এ অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘সংবাদ সম্মেলন’। সংবাদ সম্মেলনে তারা এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দায়িত্ব দেন গণমাধ্যমের ওপরও। সেই সঙ্গে বিসিএসসহ সরকারি চাকরিতে ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকলেও তা না মানায় প্রবল দুঃখবোধ ও আক্ষেপ প্রকাশ করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক মো. আলী হোসাইন জানান, সরকার প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে ২০১২ সালে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনের ক-ধারায় বলা হয়, বিসিএস ক্যাডারসহ সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্বশাসিত অথবা আধা-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের ১ম ও ২য় শেণির সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের এক শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হবে। অথচ আজ পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়িত হয়নি।

এ ছাড়া খ-ধারায় বলা হয়, বিসিএস ক্যাডারসহ সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্বশাসিত অথবা আধা-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের ১ম ও ২য় শেণির সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাসমূহের মধ্যে যে কোটায় পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাবে না সেই কোটা এক শতাংশ যোগ্য প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দ্বারা পূরণ করা হইবে।

বিজ্ঞাপন

আলী হোসাইন বলেন, আমরা দুঃখের সঙ্গে দেখছি সরকারি সব প্রতিষ্ঠানই কেবল (খ) ধারার অনুসরণ করছে। এতে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত এক শতাংশ কোটা বিভ্রান্তিমূলক। এ বিভ্রান্তির অবসান হওয়া জরুরি।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চলমান জরিপমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে নিবন্ধনকৃত প্রতিবন্ধীর সংখ্যা প্রায় ৩৩ লাখ। ২০১০ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘পরিবারের আয় ও ব্যয় জরিপ’ অনুযায়ী দেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা উঠে এসেছে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ।

বিশাল এ জনগোষ্ঠীর প্রায় সবাই পরিবার ও সমাজে নিগ্রহ ও বঞ্চনার শিকার। শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে যারা ‍উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করছেন চাকরির বাজারে তাদের প্রতি খোদ রাষ্ট্রই বৃ্দ্ধাঙ্গুল দেখাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নেতারা এমন অভিযোগ করে সরকারের প্রতি ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন।

এর মধ্যে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পদ অনুপাতে প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ, তৃতীয় ও চতুর্থ শেণিতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধী কোটার সংস্কার, প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষায় সময় বৃদ্ধি, বেসরকারিখাতে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৭ বছরে উন্নীত ও চাকরির পরীক্ষায় শ্রুতিলেখকের অনুমতি প্রদান।

সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রেস ক্লাবের হলরুম থেকে যখন প্রতিবন্ধী এসব শিক্ষিত যুবকরা বের হয়ে যাচ্ছিলেন তখন আশপাশের অনেকেই উৎসাহী হয়ে তাকান তাদের দিকে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে একে অপরের হাত ধরাধরি করে এভাবে তেমন কোথাও যাওয়া হয় না তাদের। রোববার যানজটের সড়ক পেরিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যায়ের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কেবল রাষ্ট্রীয় ফাঁকির বিষয়টি জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য। যেমনটি বলছিলেন, প্রতিবন্ধী শাহিদা আকতার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থী বলেন, এক শতাংশ কোটা থাকার পরও চাকরির ক্ষেত্রে সেটি মানা হচ্ছে না। এমনকি সরকারি বিধিমালায় ৫৬ শতাংশ কোটার উল্লেখ থাকলেও সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসির ওয়েবসাইটে ৫৫ শতাংশ কোটার উল্লেখ রয়েছে। এটি আমাদের প্রতি রাষ্ট্রীয় অবিচার।

সারাবাংলা/এমএস/জেডএফ

প্রতিবন্ধী কোটা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর