মর্যাদার লড়াই লিটনের তবে হারানোর কিছু নেই বুলবুলের
২৮ জুলাই ২০১৮ ২২:৩৪
নৃপেন রায়, রাজশাহী থেকে : বৃষ্টি বাধা উপেক্ষা করে শেষ মূহুর্ত্যের নির্বাচনী প্রচারণায় সরগরম ছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশন। কে হচ্ছেন সিটি করপোরেশনের পঞ্চম নগরপিতা আগামী ৩০ জুলাই ভোট গ্রহণ পর্যন্ত তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে নরগবাসীকে।
নগরবাসী এবার নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে মরিয়া। আবার ধানের বিএনপির প্রার্থীরা ধানের শীষের বিজয় ধারাবাহিকতার প্রত্যাশা করছেন। সবমিলিয়ে এবারের নির্বাচন হবে নৌকার প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের হবে মর্যাদার শেষ লড়াই। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল হারলেও হারানোর কিছু নেই বলে মনে করছেন।
শনিবার সরেজমিনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বলে এমন অবস্থা জানা গেছে।
তারা জানান, রাজশাহী সিটি নির্বাচনে জয় পরাজয়ের নানা সমীরকরণ করছে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীরা। অন্যান্য প্রার্থীরা ভোটের হিসাবে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না ধরেই উভয় প্রার্থীরা জয়ে প্রত্যাশায় মরিয়া।
নগরবাসীর হিসেবে, বিএনপির প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নগরবাসীর উন্নয়নে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। আবার শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা কোনো অজানা সমীকরণে নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতাদের দাবি, তাদের একমাত্র ভয় ‘ভোট ডাকাতি’। অন্য কিছুকেই তারা জয়ের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন না।
অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী লিটনের শেষ মর্যাদার লড়াই হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরাসহ বাসিন্দারা। নগরবাসীর দাবি, বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র নির্বাচিত হয়েও জনগণের প্রত্যাশিত প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। কিন্তু বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র থাকাকালে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নগরীর চেহারা পাল্টে দেওয়ার ধারা সূচিত করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বুলবুল বিজয়ী হলে আবার থমকে যায় মহানগরবাসীর উন্নয়ন।
এদিকে শেষদিনের প্রচারণায় ভোট কেন্দ্র দখল, থানা ঘেরাওসহ নির্বাচন কমিশন অফিসের ইট খুলে নেয়ার প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
তিনি বলেন, ৩০ তারিখের আগে কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হবে। শনিবার নির্বাচনী প্রচারণারের শেষ দিনে এমন হুঙ্কার দেন বিএনপির এই প্রার্থী।
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বুলবুল বলেন, নির্বাচনে কোন অনিয়ম করার চেষ্টা করলে আমরাও ভোট কেন্দ্র দখল করবো। নির্বাচন কমিশনকে সেদিন কৈফিয়ত দিতে হবে। ঘেরাও কর্মসূচি হবে। নির্বাচন বাদ দিয়ে সেদিন ঘেরাও কর্মসূচি হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ৩০ তারিখের আগে যদি বিএনপি বা জোটের নেতাকর্মীদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তা হলে আমরা ২০ দলীয় ঐক্যজোট যে থানায় নেওয়া হবে সে থানা ঘেরাও হবে।
ঢাকা থেকে সিল দিয়ে ব্যালট পেপার রাজশাহীতে আনা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে বুলবুল বলেন, তিন লাখ ১৮ হাজারের বেশি ব্যালেট যদি এখনে পাওয়া যায় তবে নির্বাচন অফিসের ইট থাকবে কি না আমরা বলতে পারব না।
তিনি বলেন, প্রায় ১০টি কালো গ্লাসওয়ালা গাড়ি সিটিতে ঘোরাফেরা করছে। ট্রাফিক পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
তিনি বলেন, ‘আমি অতীতেও বলেছি, এখনো বলছি, নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, আমি মেনে নেব। প্রতিপক্ষ প্রার্থীরও জনগণের রায় মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণার প্রথম দিন থেকেই বিএনপি বলে আসছে, নির্বাচন স্বচ্ছ হবে না, সুষ্ঠু নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা নেই। এটি বিএনপি বাংলাদেশের সবখানে বলে, যে কোনো নির্বাচন আসলেই তারা এসব বলে। গত ১০ বছর ধরে শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। তাদের এসব কথায় রাজশাহীর মানুষও বিরক্ত হয়ে গেছে। খেলতে নেমেই তারা বলছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই। এটি বলা তাদের মুদ্রাদোষে পরিণত হয়েছে।’
বিএনপির মিথ্যাচারের বিষয়ে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমি মেয়র নির্বাচিত হলে নাকি নদীর ধার ও রেললাইনের বস্তি উচ্ছেদ করব-এমন মিথ্যাচার করছে বিএনপির প্রার্থী ও সমর্থকরা। যেখানে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ছিন্নমূল-ভূমিহীন মানুষের জন্যে বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছেন, সেখানে আমরা কেন বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করব? অতীতেও এমন কিছু করিনি, আগামীতেও করবো না। বরং আমরা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করবো। জনগণের কল্যাণে কাজ করব। আগামীতে রাজশাহীর আয়তন বাড়ানো হবে। বর্ধিত অংশ যে গ্রামগুলো থাকবে, সেখানকার মানুষও নগর জীবনের সুযোগ-সুবিধা পাবে।’
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘নির্বাচনে পুলিশকে ব্যবহারের আমাদের প্রয়োজন নেই। কারণ ইতোমধ্যে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি নৌকার বিজয় হবে।’
তিনি আরো বলেন, গাজীপুর ও খুলনা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট সংকট ছিল। রাজশাহীতে এজেন্ট সংকট আছে। তাদের এজেন্ট সংকটের ফলে তারা বিভিন্নভাবে আমাদের উপর দোষ চাপাচ্ছে।
এ ব্যাপাওে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি নৌকার প্রার্থীও গণজোয়ার দেখে প্রতিনিয়ত মিথ্যা অভিযোগ করে যাচ্ছে। আগামী ৩০জুলাই মহানগরবাসী নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করে এসব মিথ্যাচারের জবাব দেখে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, শেষদিনের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। দিনভর বৃষ্টি প্রচারণায় ছন্দপতন ঘটালেও মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও সমর্থকদেও থামাতে পারেনি। আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবার রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আছেন পাঁচ জন প্রার্থী। আর ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আছেন ১৬০ জন প্রার্থী। এ ছাড়া, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থী ৫২ জন। শেষ দিনের প্রচারণায় প্রার্থীদের সমর্থকেরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে। তবে এসব মিছিলে প্রার্থীদের উপস্থিতি ছিল না।
সারাবাংলা/এনআর/একে