লালমনিরহাটে পাটের ফলন বেশি হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা
২৯ জুলাই ২০১৮ ০৮:২০
।। নিয়াজ আহমেদ সিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন পাট চাষিরা। প্রথমদিকে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও পরবর্তীতে বৃষ্টি হওয়ায় এই কৃষি পণ্যটি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। ইতোমধ্যে জেলার অনেক জায়গায় পাটকাটা ও পানিতে জাগ দেওয়া শুরু করেছেন কৃষকরা। শ্রমিকের অভাবে ও জমির আশপাশে পানি না থাকায় পাট পঁচাতে বিপাকেও পড়ছেন অনেকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর লালমনিরহাট জেলায় মোট ৪ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে আদিতমারী উপজেলায় ৩২৫ হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৬৩০ হেক্টর, হাতীবান্ধা উপজেলায় ১০১৫ হেক্টর, পাটগ্রাম উপজেলায় ২৯৫ হেক্টর, ও লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ২ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এ বছর সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয়েছে সদর উপজেলা ও হাতিবান্ধা উপজেলায়। জেলার অনেক উপজেলায় পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় আবাদ গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা কমেছে। গত বছর চাষ হয় মোট ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আর এবার ৪ হাজার ৭৮০ হেক্টরে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে চাষ, বীজ-সার-কীটনাশক কেনা, পরিচর্যা,পঁচানির জন্য পরিবহন খরচ, পাটকাঠি থেকে পাট ছড়ানো ও রোদে শুকিয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত ১৬-১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে পাট কাটতে এবং জাগ দেওয়ার জন্য নদীতে পৌঁছাতে পরিবহনসহ বিঘা প্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা লেগে যায়। তারা জানান, এ বছর পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন পাটের ন্যায্যমূল্য না পেলে তাদের আর্থিকভাবে অনেক লোকসান গুনতে হবে।
প্রান্তিক কৃষকরা জানান, সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত বীজসহ কৃষি উপকরণসমূহ থেকে তারা সব সময়ই বঞ্চিত থাকেন। তাদের অভিযোগ, যাদের জমির পরিমাণ বেশি কৃষি বিভাগ তাদেরই মধ্যে সরকারি উপকরণ বিতরণ করে থাকেন।
অপরদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা কৃষি অফিস ও পাট অধিদফতর যৌথভাবে পাটের উৎপাদন ও ফলন বেশি করার জন্য এ বছর কৃষকদের মাঝে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, তথ্য প্রদানসহ মাঠ পর্যায়ে কাজ না করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে লালমনিরহাট জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপ পরিচালক পিপি (শস্য সংরক্ষক) জানান, প্রয়োজনীয় উদ্বুদ্বকরণ সভা, প্রশিক্ষণ, তথ্য প্রদানসহ মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। এতে কৃষকরাও পাট চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আশা করছি আগামীতে এ জেলায় পাট উৎপাদনে লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
লালমনিরহাটে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের পাটচাষিরা জানান, আশা রাখছি এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হবে। তবে আঁশ মোটা হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। তারা আরও জানান, জমিতে পাট আবাদ করতে যে খরচ হচ্ছে ন্যায্য দাম না পেলে উৎপাদন খরচ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
পাটগ্রাম উপজেলার উফারমারা গ্রামের আরশাদ আলী জানান, এবার তিনি প্রায় তিন বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। শুরুতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট বড় হতে দেরি হয়। পরে যখন বৃষ্টি হওয়া শুরু হয়েছে তখন শুধু পাটগাছই বড় হয়েছে, কিন্তু পাট গাছের আঁশ মোটা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘এলাকায় পুকুর ডোবা না থাকায় পানির অভাবে পাট জাগ (পচাঁতে) দিতে পারছি না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ খালে যদি নিয়মিত পানি থাকত, তাহলে আমাদের পরিবহনে অতিরিক্ত খরচ করে নদীতে জাগ দিতে হতো না। এতে করে লোকসানের পরিমাণও কম হতো। কারণ এক বিঘা জমির পাট শুধু তিস্তা নদীতে পৌঁছানোতেই খরচ হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। আর কাটতে লাগছে ৫ হাজার টাকা। কীভাবে যে খরচ উঠবে, সেই চিন্তায় বার বার করছি।’
এ বিষয়ে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক বিধু ভূষণ রায় বলেন, ‘পানি হচ্ছে প্রকৃতির দান। কিন্তু কৃষকের জন্য সেচ খালে পানি থাকা না থাকা সেটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।’
তবে পাটজাত কৃষি পণ্যের ফলন কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমিতে রাসায়নিক সার সঠিক ভাবে ব্যবহার না করায় আঁশ মোটা ও ফলন কম হতে পারে। যে ফসলে কম খরচে বেশি মুনাফা পায়, সে ফলনের দিকেই ঝুঁকে পড়ে এ এলাকার কৃষকরা। তবে তাদের প্রশিক্ষণ দিলে পাট চাষে আগ্রহ বাড়তে পারে।
সারাবাংলা/এমএইচ