আওয়ামী লীগ-জামায়াতে ‘ঘায়েল’ হবে বিএনপি
২৯ জুলাই ২০১৮ ১৮:৩০
।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
সিলেট থেকে : জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের মধ্য যে বন্ধন তা টিকেনি সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে জোট ছেড়েই দাঁড়িয়ে আছে জামায়াত। নগরীতে দলটির কার্যক্রম বেশ গোছানো হলেও ভোটের হিসেবে তাদের প্রার্থী উতরে নেওয়ার মতো নয়। তবে সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে দলটির প্রার্থীর ‘চোট’ চোখে পড়ছে।
নগরীর ভোটাররা বলছেন, দলটির প্রার্থীর মেয়র হওয়ার যতটুকু না সম্ভাবনা তার চেয়ে বেশি ‘সুবিধা’ লুটে নিচ্ছে দলটি। সারাদেশে দলটির নেতা-কর্মীরা যখন ‘গর্তে’ সেখানে সিলেটের জামায়াত এখন রাজপথ কাঁপাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে দলটির নেতাকর্মীদের এমন আড়মোড়া ভেঙে মাঠে নামাকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখছেন তারা।
যেসব ভোটার নগরীর ভোট নিয়ে একটু সচেতন তারা বলছেন, ভোটকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ জামায়াত এখন কার্যত তাদের জোটসঙ্গী বিএনপির প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এখন মূলত আওয়ামী লীগ ও জামায়াত মিলে ভোটের মাঠের প্রধান ফ্যাক্টর বিএনপিকে ঘায়েল করতে চাইছে তারা।
স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, নির্বাচনে জামায়াত মাঠ দাপিয়ে বেড়ালেও এখন পর্যন্ত দলটির কোনো নেতাকে গ্রেফতার হতে হয়নি। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনেও বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া দলটির নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতিও দেখানো হচ্ছে। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যেন বিএনপি নয় সিলেটে আওয়ামী লীগই জামায়াতের জোটসঙ্গী।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, নগরীর ৩ লাখ ২২ হাজার ভোটারের মধ্যে জামায়াতের ভোট খুব বেশি হলে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার। যদিও জামায়াতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দলীয় রিজার্ভ ভোটার ৪২ থেকে ৪৫ হাজার বলে দাবি করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জামায়াতের যে ভোট ব্যাংক তার উপর নির্ভর করে কোনোভাবেই মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন না জুবায়ের। তাদের মতে, এ নির্বাচনে মেয়র হওয়ার চেয়ে জামায়াতের সাংগঠনিক তৎপরতাকে বড় করে দেখছেন।
ভোটের হিসেবে তৃতীয় অবস্থানে থাকছে জামায়াত-এমন স্বচ্ছ সমীকরণের পরও দলটির মেয়র প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের নির্বাচনী পোস্টারে কমতি দেখা যায়নি কোথাও। নগরীর আনাচে-কানাচে প্রধান দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন তিনি। তার এমন প্রচারণাকে ‘চোট বা হাঁকডাক’ হিসেবেই দেখছেন স্থানীয়রা।
নগরীর জল্লারপাড় এলাকার ভোটার সত্যেন দাস বলেন, সিলেট শহরের যেখানেই আপনি যাবেন সেখানে নৌকা ও ধানের শীষের পোস্টারের চেয়ে দেওয়াল ঘড়ির পোস্টার কম নয়। দলটির নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিও কম নয়। বিভিন্ন পাড়া মহল্লা চষে বেড়িয়েছে তারা। ফলাফল যাই হোক আমার কাছে বিষয়টি অন্যরকম লেগেছে।
নগরীর লতিফ কমপ্লেক্সের একজন সাইবার ক্যাফে ব্যবসায়ী জানান, যোগ্যতায় জামায়াতের প্রার্থী এগিয়ে থাকলেও তারা ভোটের হিসেবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এ প্রতিবেদককে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘তিনশ টাকার স্ট্যাম্পে লিখে রাখতে পারেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির প্রার্থী জিতবে। জামায়াত থাকবে তিন নম্বরে। কিন্তু কাল রাতেই গনেশ উল্টে গেছে। আমিও সকালে ভোট দিতে যাব না।’
নগর জামায়াতের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ নির্বাচনে মুখে তারা মেয়র হওয়ার ব্যাপারে আশার কথা শোনালেও প্রকৃত বিষয়টি ভিন্ন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এখন তাদের খোলস ভাঙার সময়। ফলাফল নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা জামায়াত-শিবিরে নেই বলেও জানায় ওই সূত্রটি।
সারাবাংলা/এমএস/একে
আরও পড়ুন
বরিশাল শান্ত, ভয় তবুও পুলিশে
সিলেটে নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণে বিলম্ব, ক্ষোভ বিএনপির
মর্যাদার লড়াই লিটনের, হারানোর কিছু নেই বুলবুলের
পূণ্যভূমিতে উড়বে নৌকার বিজয় পতাকা: কামরান
তিন সিটিতে জয়ী হবে নৌকা: জরিপ
প্রশাসন ও পুলিশ বিবেকশূন্য অনাচারে লিপ্ত
সিটি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের রিহার্সেল
বিএনপির অভিযোগ, ইসি বলছে ভিত্তিহীন
দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook