এনসিটিবির বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে না ছাপাখানার চিত্র
২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৯:২০
মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রতিবছরের মতো এবারও নতুন বছরের প্রথম দিন সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে পাঠ্যপুস্তক উৎসব। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তুরে দেওয়া হবে প্রায় ৩৭ কোটি বই। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি বলছে, ইতোমধ্যে সব বই-ই পৌঁছে গেছে। যেগুলো অবশিষ্ট সেগুলোও ট্রাকে। দু-এক দিনের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হবে প্রতিটি বিদ্যালয়ে। তবে ছাপাখানা সূত্রগুলো বলছে, ওই সময়ের মধ্যে সব বই একই দিন শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া প্রায় অসম্ভব।
রাজধানীর ডেমরার হাজী বাদশা মিয়া রোড ধরে কোণাপাড়ার দিকে যেতে রাস্তার দু-ধারে চোখে পড়ে বড় বড় ছাপাখানা। সেখানে ব্রাইট প্রমা, আনন্দ প্রিন্টিং প্রেস, প্রেস লাইন লিমিটেডে বই মুদ্রণের কাজ চলছে। শ্রমিকেরা সংশ্লিষ্ট নানা কাজে ব্যস্ত। ভুট্টোর মোড় এলাকার ‘ভাইভাই প্রেস’ নামের একটি ছাপাখানায় গিয়ে দেখা যায়, একপাশে বই মুদ্রণের কাজ চলছে। অন্যদিকে বাইন্ডিংও চলছে সমান তালে।
ওই ছাপাখানার কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন জানান, পাশের আরেকটি শেডেও তাদের কোম্পানির ছাপার কাজ চলছে। তবে তাদের কোম্পানি ছোট। তাই বড় কোম্পানিগুলোর কারণে তারা বই প্রকাশের অর্ডার কম পান। এবার মাত্র ১৮ লাখ কপি বইয়ে অর্ডার পেয়েছেন তারা। যার মধ্যে প্রাথমিকে ৭ লাখ ৭২ হাজার পিস, দাখিলে ২ লাখ ৩২ হাজার পিস এবং অবশিষ্টগুলো মাধ্যমিক স্তুরের বই। তার দাবি অনুযায়ী মুদ্রণের কাজ প্রায় শেষ। তবে পাশাপাশি দুটি শেডেই তখন ছাপার মেশিন চলছে।
তার কয়েক শ’ গজ দূরে প্রেস লাইন লিমিটেডের বিশাল শেড। সেখানে লিখন আর্ট প্রেসের বইয়ের কাজ চলছে। মূল গেটে যেতেই সিকিউরিটির বাধার সম্মুখীন হতে হলো। এরপর অনুমতি নিয়ে প্রেসের ম্যানেজার জনার্ধণ সরকার জনের সঙ্গে আলাপ হয়। কত পিস বই ছাপা হচ্ছে তাদের এখানে এমন প্রশ্নে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে যান তিনি। বলেন, ‘এত কিছু তো আপনাকে বলা যাবে না।’ তবে তাদের মোট কাজের ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১ জানুয়ারি বই উৎসবের আগের দিন ৩০ ডিসেম্বর এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন আজিমপুর গর্ভমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে অংশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন। এদিনই সারাদেশের স্কুল ও মাদরাসার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা জানান, এ বছর ভুলে ভরা বই সংশোধন, ১২টি পাঠ্যবই সুখপাঠ্য করা, বিলম্বে টেন্ডার আহ্বান, মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ধর্মঘটসহ বেশ কিছু সংকট সৃষ্টি হয়। তবে এতসব সঙ্কট নিয়ে শুরু হলেও শেষটা ভালোভাবেই হবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
এদিকে এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ‘২০১৮ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩৬ কোটি ৩০ লাখ ১১ হাজার ৭৫৭টি বই প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত হয়। তার মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের দাখিলে তিন কোটি ৫৩ লাখ ২৭ হাজার ৪৮৩টি, মাধ্যমিকে (উচ্চ বিদ্যালয়) ১৮ কোটি ৭৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯২১টি ও ইবতেদায়ির দুই কোটি ৯৭ লাখ এক হাজার ২৪টি, প্রাক-প্রাথমিকে ৬৮ লাখ ২৩ হাজার ৬৪৮টি, প্রাথমিকে ১০ কোটি ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৪০৫টি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এক লাখ ৪৯ হাজার ২৭৬টি বই ছাপার দরপত্র দেওয়া হয়।
এনসিটিবির কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিকের ৬৮ লাখ ২৩ হাজার ৬৪৮ টি বইয়ের মধ্যে ৬০ লাখ ২৪ হাজার বই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। প্রাথমিকের ১০ কোটি ৩৬ লাখ ২৫ হাজার ৪৮০টি বইয়ের মধ্যে ১০ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার ১৬৩টি বই সরবরাহ করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষার এক লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৬টি বইয়ের সবগুলো সরবরাহ করা হয়েছে।
এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের টার্গেট ছিল ২৫ তারিখেরে মধ্যে সারাদেশে বই পৌঁছে দেওয়া। সেই টার্গেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব না হলেও আমরা টার্গেট পুরণের কাছাকাছি। প্রায় সব স্কুলেই বই পৌঁছে গেছে। যেগুলো বাকি রয়েছে সেগুলোও এখন ট্রাকে, রাস্তায় আছে। কালকের মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) পৌঁছে যাবে।’
ছাপাখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, প্রতিবছর ৮০ ভাগ বই মুদ্রণ শেষ হয় ডিসেম্বরে। বাকি বইগুলো ছাপা শেষ করে স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দিতে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যায়। তবে এবারের অগ্রগতি বরাবরের তুলনায় ভালো। সরকার বই উৎসব করতে পারবে। মাদরাসা এবং মাধ্যমিকের ধর্ম শিক্ষা বইসহ দু-একটি বই হয়তো বাদ রয়ে যাবে। তবে সেগুলো জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছাপা হয়ে যাবে বলে দাবি তাদের।
সারাবাংলা/এমএস/আইজেকে/জেডএফ