Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নাটকীয় ভোটসন্ত্রাস দেখল দেশবাসী’


৩০ জুলাই ২০১৮ ১৭:৩৫

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: তিন সিটি করপোরেশনে দেশবাসী ‘নাটকীয় ভোটসন্ত্রাস’ দেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সোমবার (৩০ জুলাই) রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, ‘রাজবেতনভোগী কর্মচারী নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিলো, তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নয়, তারা অবৈধ সরকারের প্রতিনিধি। সুতরাং অবৈধ সরকারের হুকুম তামিল করা ছাড়া তারা অন্য কোনো কাজের জন্য আসেনি।’

‘তাই সরকারের ইঙ্গিত, আভাস, ইচ্ছায় নির্বাচন কমিশন আজ তিন সিটি করপোরেশনে দুর্বৃত্তপনার নির্বাচনী প্রহসনের সহযোগী হলো। নির্বাচন কমিশন আইনের নয়, স্বাধীন নয়, নির্বাচন কমিশন রাজভৃত্য। তিন সিটি করপোরেশনে আরেকটি সহিংস প্রহসনের নির্বাচন হলো’— বলেন রিজভী।

‘উৎসবের আমেজে নির্বাচন হচ্ছে’— আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের এ বক্তব্য প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘তিনি (হানিফ) ঠিকই বলেছেন। দস্যুদল লুট করার পর উল্লাসে মেতে ওঠে। আওয়ামী লীগ লুটের মালের মতো একচেটিয়া জালভোট ও ভোট সন্ত্রাসের কৃতিত্বে আত্মপ্রসাদ লাভ করেছে। আর সেজন্যই তারা উৎসবে মেতে উঠেছে।’

তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পুলিশ একচেটিয়া নৌকায় সিল মেরেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে না দেওয়া, ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে জোর করে বের করে দেওয়া, এ নিয়ে অভিযোগকারীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের যৌথ আক্রমণ, মেয়র প্রার্থীকে রক্তাক্ত করা, ভোট কেন্দ্রের সামনে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ করে ভোটারদের ভয় পাইয়ে দেওয়া, বেলা ১২টার পূর্বেই ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি অনিয়ম, অনাচার ও সন্ত্রাস পুলিশের সহযোগিতায় হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

গণমাধ্যমের সাংবাদিকদেরকেও দায়িত্ব পালনে ব্যাপক বাধা দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘আবারও প্রমাণ হলো, এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার আজ্ঞাবাহী প্রধান কমিশনারের নেতৃত্বে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। গাজীপুর ও খুলনায় অল্প কিছু লোক ভোট দিতে পারলেও আজকে তিন সিটি নির্বাচনে সেটিও সম্ভব হয়নি।’

রিজভীর লিখিত অভিযোগ:

* নগরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে এজেন্ট মোমিনের কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে পুলিশ তাকে আটকে রাখে। কোর্ট কলেজ কেন্দ্র থেকে এজেন্ট নাইমাকে বের করে দেওয়া হয়।

* বিয়াম স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে বেলা ১টার দিকে আংশিক ভর্তি ব্যালট বাক্স সিলগালা ছাড়াই প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে নিয়ে রেখে দেওয়া হয়।

* শমসের মোল্লা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শাহেরা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রচুর ভোটার বাইরে অপেক্ষা করলেও ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে পারেনি তারা।

*  বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়।

* বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজ কেন্দ্র থেকে সকালেই ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়। ১২:১৫ টায় ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল কেন্দ্রে গিয়ে এজেন্টদের ভেতরে প্রবেশ করান। মেয়রের ব্যালট পেপার সকালেই শেষ হয়ে যায় শুনে তিনি সেখানে অবস্থান গ্রহণ করেন।

*বিনোদপুর সাইন্স ল্যাবরেটরী স্কুল কেন্দ্রে সকালেই ধানের শীষের সকল এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়।

বরিশালঃ

ক্ষমতাসীন দলের ব্যাপক তাণ্ডব, ভোট জালিয়াতির উৎসব, ভোটারদেরকে মারধর, মেয়র প্রার্থীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করা, পোলিং এজেন্টদেরকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, অনেক কেন্দ্রে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে না দেওয়া—ইত্যাদি ঘটনা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সংঘটিত করেছে। এই ব্যাপক তাণ্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাদে বিএনপিসহ সব প্রার্থীরাই নির্বাচন বর্জন করেন। দিনে-দুপুরে ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা বরিশাল মহানগরে ব্যাপক বিক্ষোভ করে।

বিজ্ঞাপন

সিলেটঃ

*হাউজিং আম্বরখান গার্লস হাইস্কুল ও আম্বরখান কলোনি সেন্টার কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতির ভোটে ফিংগার প্রিন্ট দেন ভোটাররা আর প্রতীকে ক্লিক করেন নৌকার এজেন্টরা। প্রতিবাদ করায় ধানের শীষের এজেন্টদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।

*জামিয়া মাদ্রাসা, মদিনা মার্কেট, রাকিব রাবেয়া মেডিকেল ও মদন মোহন কলেজ ক্যাম্পাস ভোট কেন্দ্রে গোলাগুলি করে কেন্দ্র দখলে নেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।

*পাঠানটোলা স্কুল, বর্ণমালা স্কুল ও পাঠানটোলা জামেয়া মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করে ধানের শীষ এজেন্টদের বের করে কেন্দ্র নিজেদের দখলে নেয়।

* লামা বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলে নেয় নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা।

*বীরেশচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জোর করে ভোট দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।

*মডেল হাইস্কুল, কাজী জালাল উদ্দিন স্কুল ও রায় নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র থেকে সকাল ১০:৩০ টায় ধানের শীষ এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়।

* বখতিয়ার বিবি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গোলাগুলি করে কেন্দ্র দখলে নেয় আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী। ধানের শীষের সমর্থক ২ জন গুলিবিদ্ধ সহ ৪ জন গুরুতর আহত হন।

* আদর্শ স্কুল, একাডেমিক স্কুল ও ব্যাংক কলোনি স্কুল কেন্দ্র দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ।

* মোন্দিবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায় কেন্দ্র দখল করে নেয় পুলিশসহ আওয়ামী ক্যাডাররা।

* বোরহান উদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোরহান উদ্দিন মাদ্রাসা ও টুলটিবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে আওয়ামী সমর্থকরা নৌকা প্রতীকে সিল মেরে চলে যায়।

* পলিটেকনিক কেন্দ্র, কাস্তরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উজাড় খোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মোমিন খোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ব্যাপক জাল ভোট হয়। এজেন্টদের আপত্তি পোলিং অফিসাররা আমলে নেয়নি।

*পাঠান জাহির ও আছির উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র দখলে নিয়ে প্রকাশ্যে সিল মারে নৌকা সমর্থকরা।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে খালে ভাসছিল অর্ধগলিত লাশ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩

বিএসইসি‘র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১

সম্পর্কিত খবর