ভ্যাট ফাঁকি রোধে ১১টি খাতে বাধ্যতামূলক ইএফডি ব্যবহারে আসছে আদেশ
১২ আগস্ট ২০১৮ ০৮:৩৯
॥ এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ॥
ঢাকা: ভ্যাট ফাঁকি রোধে দ্রুতই ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) চালু করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থাৎ আগে যারা ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) ব্যবহার করতেন তাদের জন্য ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে জারি হতে যাচ্ছে নতুন আদেশ।
জানা গেছে, আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুড শপ, মিষ্টান্নভান্ডার, আসবাবপত্রের বিক্রয় কেন্দ্র, পোশাক বিক্রির কেন্দ্র ও বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালি সামগ্রীর বিক্রয় কেন্দ্রসহ অন্তত ১১ টি খাতে ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। নতুন এই যন্ত্র ব্যবহার করা না হলে থাকবে শাস্তির বিধানও। আইন অনুযায়ী, ফাঁকি দেয়া ভ্যাটের অর্ধেক বা সমপরিমাণ অর্থদন্ড হবে। এছাড়াও, ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার অর্থদন্ড রয়েছে।
অত্যাধুনিক এই যন্ত্র এনবিআরের আমদানি করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হচ্ছে না। ইএফডি আমদানির পুরো প্রক্রিয়াটিই ছেড়ে দেয়া হয়েছে বেসরকারি আমদানিকারকদের হাতে। আগে যারা ইসিআর আমদানি করতেন এমন আমদানিকারকসহ নতুনেরাও এ যন্ত্রটি আমদানি করে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই প্রকল্পের বাইরে এসে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে এনবিআর সদস্য (ভ্যাটনীতি) রেজাউল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পূর্বে আমাদের ইএফডি দেয়ার কথা থাকলেও আমরা এখন আর তা দিচ্ছি না। ইসিআরের মতো ব্যবসায়ীরা এখন তা কিনে নেবেন। আগে যারা ইসিআর আমদানি করতেন তারাসহ নতুন কোন আমদানিকারকও তা আমদানি করতে পারবেন। আর এ মেশিন আমদানিতে বাড়তি কোন করও নেই।’
রেজাউল হাসান আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ইএফডি চালুর অনুমোদন হয়েছে। খুব শিগগিরি সার্কুলার জারি হবে। ইসিআরে যে ১১ টি খাত বাধ্যতামূলক ছিল, সেই আদেশ বাতিল করে নতুন আদেশ জারি হবে। আর তখন থেকেই ইএফডি ব্যবহার শুরু হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে নতুন এই যন্ত্র আমদানি করতে আমদানিকারকদের কিছুটা সময় লাগবে। হয়তো বাজারে কিছুটা আছে। আবার নাও থাকতে পারে। যতোদিন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা ইএফডি না লাগাচ্ছেন, ততোদিন পর্যন্ত তারা ইসিআর ব্যবহার করতে পারবেন। ইসিআর ব্যবহারে কোন বাধা নেই। তবে আমরা চাইবো ব্যবসায়ীরা দ্রুতই ইএফডিতে চলে আসুক।’
এর আগে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইসিআরের বদলে ইএফডি বসতো সরকারের কাছে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছিল এনবিআর। এ অর্থ বরাদ্দে অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিবকেও দেয়া হয়েছিল চিঠি। সমপরিমাণ এ টাকায় ১০ হাজার মেশিন কেনার পরিকল্পনা ছিল এনবিআরের। আর ওই মেশিনগুলো কেনা দামে ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহের কথা ছিল। তবে, এখন সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে এনবিআর। এবার আমদানিকারকেরা তা আমদানি করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবে।
ভ্যাট ফাঁকি রোধে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসতে যাওয়া এই মেশিনগুলো সরাসরি যুক্ত থাকবে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের সঙ্গে। এনবিআরের কর্মকর্তারা অফিসে বসেই এ যন্ত্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এছাড়াও অফিসে বসেই মেশিনগুলো করতে পারবেন কার্যকর কিংবা অকার্যকর।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ইএফডি মেশিনগুলোর বিপরীতে থাকবে ইলেক্ট্রনিক ভ্যাট আইডেন্টিফিকেশন (বিআইএন) নম্বর। তবে একই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একাধিক মেশিন থাকলেও বিআইএন একটিই হবে। এছাড়াও মেশিনগুলোর জন্য দেয়া হবে অথরাইজেশন নম্বর। এটি ছাড়া কোনভাবেই চালান (ভ্যাট আদায়ের রশিদ) প্রিন্ট দেয়া যাবে না।
জানা গেছে, আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুড শপ; মিষ্টান্নভান্ডার, আসবাবপত্রের বিক্রয় কেন্দ্র, পোশাক বিক্রির কেন্দ্র ও বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালি সামগ্রীর বিক্রয় কেন্দ্রসহ অন্তত ১১ টি খাতে ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। নতুন এই যন্ত্র ব্যবহার করা না হলে থাকবে শাস্তির বিধানও। আইন অনুযায়ী, ফাঁকি দেয়া ভ্যাটের অর্ধেক বা সমপরিমাণ অর্থদন্ড হবে। এছাড়াও ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার অর্থদন্ড রয়েছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/জেএএম
আরও পড়ুন,
ভার্চুয়াল ব্যবসায় ভ্যাট আছে, অনলাইন কেনাকাটায় নেই