ইন্টারনেটে ছবি ছড়িয়ে হয়রানির প্রতিশোধ নিতে ব্যবসায়ীকে খুন
১৭ আগস্ট ২০১৮ ২০:৪২
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে আবাসিক হোটেল থেকে ব্যবসায়ীর দ্বিখণ্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে অনেকদূর এগিয়েছে পুলিশ। ক্রোধের বশবর্তী হয়ে প্রতিশোধ নিতে ওই ব্যবসায়ীকে এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসক খুন করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ওই নারীর সঙ্গে আর কেউ ছিল কি না সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
শুক্রবার (১৭ আগস্ট) রোকসানা আক্তার নামে ওই নারী চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নগরীর খুলশী থানার লেকসিটি হোটেল থেকে মাথা ও শরীর বিচ্ছিন্ন থাকা ব্যবসায়ী মো.মাঈনুদ্দিনের (৩০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, তাকে জবাই করে হত্যা করা হয়।
এদিকে মাঈনুদ্দিনের ভাই বাদী হয়ে রোকসানাকে আসামি করে খুলশী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার বিকেলে রোকসানাকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে হত্যার দায় স্বীকার করে রোকসানা জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, বর্তমানে চীন প্রবাসী রোকসানা মাঈনুদ্দিনের সাবেক স্ত্রী। তিনবছর আগে তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের কয়েক মাস পর থেকেই মাঈনুদ্দিন রোকসানার সঙ্গে সম্পর্ক আবারও গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। রোকসানা এতে রাজি না হলে তাদের দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয় মাঈনুদ্দিন। এরপর রোকসানা এর প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্ত নিয়েই রোকসানা চীন থেকে আসেন। এর মাঝে মাঈনুদ্দিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের অভিনয় করেন। চীন থেকে ঢাকায় এসে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে আসেন চট্টগ্রামে। মাঈনুদ্দিনের সঙ্গে সরাসরি হোটেলে উঠেন এবং তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মাহবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই ওই নারীকে (রোকসানা আক্তার) গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই নারী তার সাবেক কিংবা বর্তমান স্ত্রীও হতে পারে। অথবা দুজনের মধ্যে সম্পর্কও থাকতে পারে। সেটা আমরা নিশ্চিত নয়। তবে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মনোমালিন্যের জেরে কোনও ক্রোধ কিংবা প্রতিশোধ স্পৃহা থেকে হত্যা করা হয়েছে, এটা আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হয়েছি।
সিএমপি কমিশনার আরও জানান, এখন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জটিলতা কি ছিল, হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত কি না-সেটা আমরা তদন্ত করে দেখছি। বিস্তারিত তদন্তে সবকিছুর উত্তর পাওয়া যাবে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) আব্দুল ওয়ারিশ খান সারাবাংলাকে জানান, রোকসানা নগরীর আল ফালাহ গলির বাসিন্দা এক প্রবাসীর মেয়ে। চীনের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নশিপ করছেন রোকসানা।
জিজ্ঞাসাবাদে রোকসানা নিজেকে মাঈনুদ্দিনের প্রাক্তন স্ত্রী দাবি করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ওয়ারিশ।
নগর পুলিশের বায়েজিদ জোনের সহকারি কমিশনার (এসি) সোহেল রানা সারাবাংলাকে বলেন, মাঈনুদ্দিনের বাড়ি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলায়। বুধবার রাতে মাঈনুদ্দিন রোকসানাকে নিয়ে লেকসিটি হোটেলে উঠেন। বিচ্ছেদের পর সাবেক স্ত্রীকে নিয়ে মাঈনুদ্দিন কেন হোটেলে উঠলেন, সেটা আমরা তদন্ত করে দেখছি।
সারাবাংলা/এনএইচ
আরও পড়ুন,
চট্টগ্রামে হোটেল থেকে ব্যবসায়ীর দ্বিখণ্ডিত লাশ উদ্ধার