‘আকাশবীণা’ আসছে কাল
১৮ আগস্ট ২০১৮ ১৭:১৭
।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: অপেক্ষার প্রহর আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা, এরপরই বহুল আকাঙ্ক্ষিত বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭ ‘আকাশবীণা’ দেশের মাটি স্পর্শ করবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বহরে যুক্ত হবে চতুর্থ প্রজন্মের এই সর্বাধুনিক উড়োজাহাজটি। আগামীকাল রোববার উড়োজাহাজটি দেশে পৌঁছালেও এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর।
বিমান বাংলাদেশ সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের বোয়িং কার্যালয় থেকে আগামীকাল রবিবার (১৯ আগস্ট) বিকাল পৌনে পাঁচটায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যান্ড করবে ড্রিমলাইনার। এরইমধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) ইনামুল বারীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিয়াটলের বোয়িং কোম্পানির কার্যালয়ে পৌঁছেছেন। তারা আগামীকাল এই বোয়িং নিয়ে দেশে পৌঁছাবেন।
স্বপ্নের এই বোয়িং ড্রিমলাইনারকে গ্রহণ করতে বিমান বাংলাদেশ সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। আগামীকাল ড্রিমলাইনার ৭৮৭ অবতরণের পর ‘ওয়াটার ক্যানন স্যালুটে’র মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানানো হবে।
জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে ২০০৮ সালে চারটি ড্রিমলাইনারসহ মোট ১০টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার জন্য ২.১ বিলিয়ন ইউএস ডলারে চুক্তি করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ১০টি বোয়িং উড়োজাহাজের মধ্যে রয়েছে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেল চারটি এবং বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেল দু’টিসহ মোট ছয়টি উড়োজাহাজ বাংলাদেশ বিমানকে সরবরাহ করেছে কোম্পানিটি। বাকি থাকা চারটি ৭৮৭ উড়োজাহাজের প্রথমটি আগামীকাল ১৯ আগস্ট, পরেরটি আগামী নভেম্বর এবং আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে আরও দু’টি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ সরবরাহ করবে তারা।
বিমান বাংলাদেশের বহরে যোগ হতে যাওয়া চারটি উড়োজাহাজের নামও রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেগুলো হচ্ছে ‘আকাশবীণা’, ‘হংস বলাকা’, ‘গাঙচিল’ ও ‘রাজহংস’। আগামীকাল আসা ড্রিমলাইনার ৭৮৭ এর প্রথম ড্রিমলাইনটির নাম ‘আকাশবীণা’।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি থেকে নেওয়া হয়েছে এর নিবন্ধন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১ সেপ্টেম্বর এ ড্রিমলাইনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এবং একইদিন সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর রুটে ড্রিমলাইনারের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালিত হবে। এর পরবর্তীতে ঢাকা-সিঙ্গাপুর এবং ঢাকা-কুয়ালালামপুরে নিয়মিতভাবে দুটি ফ্লাইট পরিচালিত হবে।’
টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম বিশ্বের সর্বাধুনিক এই উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’তে থাকছে সব ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা। যাত্রীরা উড়োজাহাজের ভেতরেই পাবেন ওয়াইফাই সুবিধা। বিশেষ ফোনসেটের মাধ্যমে উড়োজাহাজ চলাকালে কথা বলার সুবিধাও থাকছে এই এয়ারক্রাফটের ভেতরে।
এই উড়োজাহাজটি বোয়িং ৭৬৭’র চেয়েও ২০ শতাংশ কম জ্বালানিতে চলবে। বিমানটির মোট আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি, বাকি ২৪৭টি ইকোনোমি ক্লাস।
সূত্র জানায়, প্রথমদিন থেকেই নিজস্ব বৈমানিকরা উড়োজাহাজটি চালাবেন। তারা সিঙ্গাপুরে বোয়িংয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ১৪ জন বৈমানিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে এই সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
‘ড্রিমলাইনার ৭৮৭ কে কেন স্বপ্নের উড়োজাহাজ বলা হচ্ছে’, জানতে চাইলে শাকিল মেরাজ বলেন, ‘নতুন ড্রিমলাইনারগুলোতে যাত্রীদের জন্য ফ্লাইটের সময়ে যেসব সুবিধা থাকছে, সেগুলো আগে ছিল না। যেমন ইন্টারনেট ব্যবহার ও ফোন কল করার সুবিধা। দেখতে পাবেন বিবিসি, সিএনএনসহ ৯টি চ্যানেলের লাইভ সম্প্রচার। আর এসব সুবিধার জন্য এয়ারলাইন্সটি ইতোমধ্যে বিটিআরসির কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছে।’
প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সার্ভিসটি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ফ্লাইট চলাকালীন যাত্রীরা থ্রিজি গতির ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন আর বিমান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যাত্রীদের দেওয়া হবে ফ্রি ২০ মেগাবাইট ডাটা। প্যানাসনিক অ্যাভিয়েশন করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে- যারা ২৫টি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সফারের কাজ করবে।
ড্রিমলাইনার ৭৮৭ এ রয়েছে থ্রিডি রুট ম্যাপ। এর মাধ্যমে ডিসপ্লেতে উড়োজাহাজটি যেখান দিয়ে উড়ে যাবে তার নিচের সব স্থাপনা দেখতে পাবেন যাত্রীরা।
শাকিল মেরাজ বলেন, ‘এই এয়ারক্রাফট সার্বক্ষণিকভাবে আকাশ বা ভূমি যেখানেই থাকুক না কেন ২৪ ঘণ্টা ইন্টারনেটের আওতায় থাকবে। এয়ারক্রাফটের প্রাথমিক প্যারামিটার কিভাবে চলছে, কোন ফাংশন কিভাবে কাজ করছে- প্রতিনিয়ত তথ্য আপডেট হতে থাকবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এয়ারক্রাফটির কোনো টেকনিক্যাল ত্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি শনাক্ত করা যাবে এবং ভূমিতে ফেরা মাত্র তার জন্য আমরা ‘রেকটিফাই মেজার্স’ নিতে পারব, যেটা আমাদের অন্য কোনো উড়োজাহাজে নেই।’
ড্রিমলাইনার আকাশপথে পরিবহন সেবায় নতুন অনুভূতি দেবে মন্তব্য করে শাকিল মেরাজ বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে বিমান বাংলাদেশ তার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। কারণ ড্রিমলাইনার আকাশবীণা ৩০ থেকে ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় ফ্লাইট পরিচালনা করলেও যাত্রীরা অনুভব করবেন মাটি থেকে ১৬ হাজার ফুটের দূরত্বের আবহ। এতে ভ্রমণের ক্লান্তি তাদের স্পর্শ করবে না। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ক্লান্তিতে ভুগবেন না তারা- যেটা ড্রিমলাইনারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এক কথায় আমরা বলছি, বিমানযাত্রায় পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে আসছে ড্রিমলাইনার আকাশবীণা।’
আরও পড়ুন: এয়ার শো-তে মন কাড়ল বিমানের ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’
সারাবাংলা/জেএ/এমও