Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উন্নয়নের ছোঁয়া নিম্নবিত্তরাও পাবে : প্রধানমন্ত্রী


১৯ আগস্ট ২০১৮ ১২:৫০

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভবিষ্যতে দেশের যে উন্নতি হবে সেই উন্নতির ছোঁয়া শুধু উচ্চবিত্তরা নয়, নিম্নবিত্তরাও পাবে। সেটিই আমরা লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উচ্চবিত্তরা নিজেরাই ভাগ্য গড়ে নিতে পারে। কিন্তু যারা একেবারে নিচে পড়ে আছে, তাদের দিকে কে তাকাবে? আমার রাজনীতি তাদের জন্য, এই কথাটা মনে রাখতে হবে।’

রোববার (১৯ আগস্ট) সকালে রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ঢাকা ওয়াসার ‘দাশেরকান্দি পয়ঃশোধানাগার প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

২৫ আগস্ট ২০১৫ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি পয়ঃশোধানাগার প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রতদিন ৫শ’ মিলিয়ন লিটার পয়ঃশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রকল্পটি খিলগাঁওয়ে নির্মিত হবে।

উন্নয়ন পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করতে গেলে বিভিন্ন ঝামেলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজ করতে গেলে মেলা ঝামেলা। পাইপের আধা ইঞ্চির সমস্যা নিয়ে অনেক দিন আমাদের সময় নষ্ট হয়ে গেল। কারণ আমি জানি। কারণ আর কিছুই না। কাজটা কে পেল, কে না পেল? কেউ যদি না পায় তাহলে অমনি কোনো পত্রিকাকে দিয়ে সংবাদ করায়। আর কিছু পত্রিকা তো উন্মুখ হয়ে বসে থাকে।’

‘এই ট্রিটমেন্ট প্ল্যানটা যদি আমরা না করি, তাহলে হাতিরঝিলকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এটা হলো বাস্তবতা। কিন্তু সেটা না করে কোথায় পাইপের আধা ইঞ্চির ব্যাস কম..। অবশেষে আজকে এটার কার্যকর হচ্ছে।’

তাই যারা এই ধরনের সামান্য ব্যাপার নিয়ে ঝামেলাটা তৈরি করে ভবিষ্যতে তাদের সম্পর্কে সচেতন থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত বারিধারা, গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা, সংসদ ভবন থেকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বসবাসকারীরা সুবিধভোগী হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

কাজেই এরকম উঁচু স্থানে যারা থাকেন, তাদের জন্যই বেশী সুবিধাটা হবে। কিন্তু সাথে সাথে গোটা ঢাকা শহরের প্রত্যেক এলাকার মানুষ যেন এই সুযোগটা পায় সেদিকেও দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকবে, আমার গরীব মানুষেরা থাকবে না, এটা আবার কেমন কথা? কাজেই তাদের জন্য ফ্ল্যাট তৈর করে দেওয়া হবে। বস্তি এলাকায় পানির ব্যবস্থা করছি। কিন্তু এখন যে দুরবস্থায় বস্তি আছে, ঢাকা শহরে এই ধরনের বস্তি থাকবে না। মানুষ কেন এই ধরনের মানবেতর জীবন যাপন করবে। তারাও তো মানুষ।’

বিভিন্ন কারণে এরা বস্তিতে এসে বসবাস করে একারণে প্রত্যেক এলাকায় বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করে দিয়ে বস্তিবাসীদের অল্প টাকায় ফ্ল্যাটে থাকার প্ল্যান নেওয়া হয়েছে বলেও জানান।

তিনি বলেন, ‘যারা প্রতিদিন পয়সা উপার্জন করে তারা প্রতিদিনের ভাড়া প্রতিদিন দিতে পারবে। যারা সাপ্তাহিক ভাড়া দিতে পারবে, তারা সাপ্তাহিক ভাড়া দেবে। কেউ মাসে দিতে পারলে মাসে দেবে। যে যেভাবে চায়, সেভাবে থাকবে। এখানে ২০তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবনে ফ্ল্যাট করে দেওয়া হবে। বস্তির একটি কামরায় সে যে ভাড়া দিয়ে থাকে ঠিক সেই ভাড়াই সে থাকতে পারবে। তারাও একটু ভালো জীবনযাপন করবে। সেই ব্যবস্থাটা আমরা কিন্তু করতে চাচ্ছি।’

‘আমাদের এই ধরনের মানুষের দরকার আছে। কারণ শহর যত উন্নত হয় তার সাথে সাথে কাজের জন্য কর্মী লাগে।’ কিন্তু তাদের জীবনমানটা যেন উন্নত হয় সেইদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘শুধু ঢাকা না, এখন থেকে আমরা যে প্লানই করবো ঢাকা-জেলা উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত প্লান করে আমরা কাজ করব। ভবিষ্যতে যে উন্নতিটা হবে সেই উন্নতিটার ছোঁয়া যেমন উচ্চবিত্তরা পাবে, আমার এই নিম্নবিত্ত সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও যেন পায়, সেটাই আমার লক্ষ্য। উচ্চবিত্তরা তো নিজেরাই ভাগ্য গড়ে নিতে পারে। কিন্তু যারা একেবারে নিচে পড়ে আছে, তাদের দিকে কে তাকাবে? আমার রাজনীতি তাদের জন্য, এ কথাটা মনে রাখতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

‘কারণ জাতির পিতা এই সাধারণ মানুষের জন্যই রাজনীতি করে গেছেন। কাজেই আমার সব কাজে ওটাই লক্ষ্য।’

ভূ-উপরিস্থিত পানি ব্যবহারের প্রয়োজনীতা আরো বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসা সাউথ ইস্ট এশিয়ার মধ্যে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে প্রশংসা অর্জন করেছে বলেও উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, ঢাকায় বসবাসকারী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করা এবং ওয়াসাকে সেবামূলক একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে ওয়াসায় কর্মরত প্রত্যেককে সেবা দেওয়ার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। সারাবিশ্বের প্রত্যেকটি রাজধানীতে বিভিন্ন রকম সমস্যা রয়েছে। তারপরও আমরা নিরসনের ব্যবস্থা নিচ্ছি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আগামী দিনে ঢাকা থেকে বিভাগীয় শহরে দ্রুতগতির বুলেটপ্রুফ ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি রাজধানীতে যেন দিনে এসে দিনে কাজ করে ফেরত যেতে পারে। আর ঢাকাকে ঘিরে বহুতলভবন বিশিষ্ট শহর করে দিতে চাই। যাতে রাজধানী ঢাকার উপরে চাপটা কম পড়ে।সেইভাবেই আমরা ঢাকার মানুষের জীবনমান উন্নত করতে চাই।’

দেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ করতে চাই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারণ এই দেশ জাতির পিতা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে আমাদের এই ৪৭ বছর সময় প্রয়োজন হতো না। স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই আমরা বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারতাম। তাই আজকে আমার একটাই লক্ষ্য, যে আশা নিয়ে যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে। বাংলার একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামে থাকা মানুষেরও জীবন মান উন্নত করে দেওয়া। তারা যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। উন্নতভাবে বাঁচতে পারে। ’

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চীনা রাষ্ট্রদূত ঝাং জুও, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ উন্নয়ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর