‘আকাশবীণা’ এলো
১৯ আগস্ট ২০১৮ ১৭:৩১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বহুল কাঙ্ক্ষিত বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭ ‘আকাশবীণা’ দেশের মাটি স্পর্শ করেছে। রোববার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৫টা ১৯ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে উড়োজাহাজটি।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু করবে চতুর্থ প্রজন্মের এই সর্বাধুনিক উড়োজাহাজটি। এ নিয়ে বিমানের বহরে উড়োজাহজের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫টিতে। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের বোয়িং কার্যালয় থেকে রওয়ানা হয়ে এদিন বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যান্ড করে ড্রিমলাইনার।
https://www.youtube.com/watch?v=2Zv-3LJFomg&feature=youtu.be
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) ইনামুল বারীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিয়াটলের বোয়িং কোম্পানির কার্যালয় থেকে বিমানটি নিয়ে আসেন।
ইনামুল বারী বলেন, ‘আগামী ১ সেপ্টেম্বর সর্বাধিক প্রযুক্তি সম্বলিত নতুন বোয়িং-৭৮৭ এর (আকাশবীণা) প্রথম ফ্লাইটের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
বিজি-২৮০১ ফ্লাইটটি যুক্তরাষ্ট্রে সিয়াটলের পেনফিল্ড থেকে কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই টানা ১৫ ঘণ্টা উড়ে বাংলাদেশে আসে। ক্যাপ্টেন ছিলেন রিচার্ড এম ডেন্টন, ক্যাপ্টেন চার্লি ক্রিস্টেসন, বিমান বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন ফজল ও ফার্স্ট অফিসার আনিতা রহমান ফ্লাইট পরিচালনা করেন।
শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই ‘আকাশবীণা’কে ওয়াটার ক্যানন স্যালুট দেওয়া হয়। এ সময় বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম মোসাদ্দেক আহমেদ, পরিচালক (প্রশাসন) মো. মমিনুল ইসলাম, পরিচালক (গ্রাহক সেবা) আলী আহসান, পরিচালক অর্থ বিনিত সুধ, পরিচালক পরিকল্পনা এয়ার কমোডর মোহাম্মদ মাহবুব জাহান খান (অব.), পরিচালক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ ক্যাপ্টেন কেএইচ সাজ্জাদুর রহিম (অব.), পরিচালক বিপণন ও বিক্রয় আশরাফুল আলম, মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ এবং বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, ড্রিমলাইনার আকাশবীণা যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিমান নতুন মাইলফলকে যুক্ত হলো। যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক সেবা দিতে বিমান সচেষ্ট। অন্য এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নতুন উড়োজাহাজ বিমানকে সহায়তা করবে। যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ ও মুনাফা বৃদ্ধিতে ড্রিমলাইনার নতুন মাত্রা যোগ করবে।
বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানান, ড্রিমলাইনার প্রাথমিকভাবে ঢাকা-সিঙ্গাপুর ও ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর হবে বিমানটির প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রা। ট্যাক্স ও চার্জ বাদে ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা রুটে ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া হবে ২০০ মার্কিন ডলার এবং ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া ২৯০ মার্কিন ডলার।
টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম এই ড্রিমলাইনার চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগবে। এটি ঘণ্টায় ৬৫০ মাইল বেগে উড়তে সক্ষম। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই বিমান ওজনে হালকা। ভূমি থেকে বিমানটির উচ্চতা ৫৬ ফুট। দু’টি পাখার আয়তন ১৯৭ ফুট।
আকাশবীণায় আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। ড্রিমলাইনারের ইন ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট (আইএফই) সেবা দিতে প্যানাসনিক এভিওনিকস করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিমান। প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডি এস-মনিটর রয়েছে। মনিটরে বিবিসি, সিএনএনসহ ৯টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে।
ড্রিমলাইনার ৭৮৭ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। বিমানে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক যাত্রী ১৫ মিনিটের জন্য বিনামূল্যে ১০ মেগাবাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এরপরও কোনো যাত্রী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে চার্জ দিতে হবে। ১শ’ মেগাবাইটের জন্য ৮ ডলার, ৩শ’ মেগাবাইটের ১৬ ডলার আর ৬শ’ মেগাবাইটের জন্য ৩২ ডলার হারে চার্জ দিতে হবে যাত্রীদের।
এছাড়া মোবাইল ফোনে রোমিং সুবিধা থাকলে আকাশে থাকার সময় কল করতে পারবেন যাত্রীরা। এজন্য ২৫টি স্যাটেলাইটের সঙ্গে করা হয়েছে চুক্তি। বিমানটি যে স্থানের ওপর দিয়েই যাবে, যাত্রীদের সামনে তখন স্ক্রিনে দেখা যাবে থ্রিডি ম্যাপ, একইসঙ্গে উঠে আসবে সেই স্থানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঢাকায় বিমানের ফ্লাইট অপারেশন রুমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এটি। এর মাধ্যমে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, ককপিট, ফুয়েল, নেভিগিয়েশনসহ সব তথ্য জানতে পারবেন ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তারা। যেকোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তারা অপারেশন রুম থেকে পাইলটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবেন। এজন্য ঢাকায় বিমানের প্রধান কার্যালয়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সার্ভার স্থাপন করা হয়েছে।
ড্রিমলাইনার পরিচালনার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিমানের ১৪ জন পাইলট। ড্রিমলাইনার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রকৌশল বিভাগের ১১২ জনকে। এছাড়া কেবিন ক্রুদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে ২০০৮ সালে চারটি ড্রিমলাইনারসহ মোট ১০টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার জন্য ২.১ বিলিয়ন ইউএস ডলারে চুক্তি করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ১০টি বোয়িং উড়োজাহাজের মধ্যে রয়েছে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেল চারটি এবং বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেল দু’টিসহ মোট ছয়টি উড়োজাহাজ বাংলাদেশ বিমানকে সরবরাহ করেছে কোম্পানিটি। বাকি থাকা চারটি ৭৮৭ উড়োজাহাজের আজ দেশে আসে। পরেরটি আগামী নভেম্বর এবং আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে আরো দু’টি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ সরবরাহ করবে তারা।
আরও পড়ুন:
‘আকাশবীণা’ আসছে কাল
এয়ার শো-তে মন কাড়ল বিমানের ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’
সারাবাংলা/জেএ/এমও/এটি