‘বর্জ্যমুক্ত’ ডিএনসিসি কেবল ঘোষণাতেই!
২৪ আগস্ট ২০১৮ ২১:০২
।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ঈদের দিন জবাইকৃত কোরবানির পশুর বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার আগেই শতভাগ অপসারণ করার ঘোষণা দিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেন (ডিএনসিসি)। কিন্তু ঘোষণার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পরও ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকার সড়কে কোরবানির পশুর বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এসব বর্জ্য থেকে সৃষ্টি হচ্ছে উৎকট দুর্গন্ধ। ফলে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা এসব দুর্গন্ধে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘শতভাগ বর্জ্য অপসারণ বলতে বোঝানো হয়েছে, যেসব স্থান আগে থেকেই বর্জ্য অপসারণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সেসব স্থান থেকে উল্লেখিত বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করা। আর সেটি ডিএনসিসি ২৪ ঘণ্টার আগেই অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছে।’
কিন্তু যেসব স্থানে স্থানীয় বাসিন্দারা এখনও বর্জ্য ফেলছে এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অবহিত করেনি শুধুমাত্র সেসব স্থানে হয়তো বর্জ্য আছে বলে মনে করছেন তারা। এক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে সেসব স্থান থেকে এখনও বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ডিএনসিসির আওতাধীন রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মিরপুর ও উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক, অলি-গলি থেকে শুরু করে বাসা বাড়ি এমন কি মসজিদের সামনেও কোরবানির পশুর বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এসব এলাকায় ডিএনসিসির কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংশ্লিষ্ট কাউকেও দেখা যায়নি।
আবার রামপুরা ও উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এখনও ট্রাকে করে বর্জ্য অপসারণ করতে দেখা গেছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। এতে ডিএনসিসির ঘোষণার বাস্তবায়ন কতটুকু তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মোহাম্মদপুরের বসিলা, তাজমহল রোড, জাপান সিটি গার্ডেনের সামনে, গাবতলীর মিরপুর সড়ক সংলগ্ন এলাকা, গাবতলী হাটের বিপরীতে মসজিদ সংলগ্ন বাস কাউন্টার এলাকা ও ব্রিজ সংলগ্ন প্রধান সড়ক, কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন প্রধান সড়ক, কল্যাণপুর দারুস সালাম টাওয়ার সংলগ্ন ফুরফুরা দরবার শরীফের উল্টোপাসের প্রধান সড়ক, শ্যামলী ফুটওভার ব্রিজ সংলগ্ন শিশু মেলার পাশের প্রধান সড়ক, মোহাম্মদপুর কলেজগেট এলাকার শের শাহ রোড ও বাসস্ট্যাডের আশপাশসহ বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশুর বর্জ্যসহ নিত্য ব্যবহৃত গৃহস্থলির বর্জ্য রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। আবার এসব এলাকার কোথাও কোথাও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা নিয়ে গেলেও ব্লিচিং পাউডার কিংবা দুর্গন্ধনাশক অন্যকোনো কিছু ব্যবহার করেনি।
এতে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা দুর্গন্ধে চরম নাকাল হচ্ছেন। আবার কোথাও কোথাও বর্জ্য অপসারণ না করেও ময়লার উপর ও আশপাশে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে রাখতে দেখা গেছে। তাতে দুর্গন্ধ রোধ হচ্ছে না কোনোভাকেই। উল্টো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎকট দুর্গন্ধের মাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
বাসিন্দারা বলছেন, ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মীর খামখেয়ালীপনার কারণে এমনটা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন তাদের দায়িত্ব দিয়েছে এসব নিয়ন্ত্রণ কিংবা অপসারণের জন্য। কিন্তু তারা তাতে ফাঁকি দিচ্ছে। কেউ কেউ পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে এসব নিয়ে বাকবিতণ্ডায়ও জড়িয়েছে। এতে করে দুর্নামটা যাচ্ছে করপোরেশনের ঘাড়ে।’ এজন্য জোরালো মনিটরিংয়ের দাবি করেছেন একাধিক বাসিন্দা।
দুপুর পৌনে ২ টার সময় গাবতলীর পশুর হাটের বিপরীতে অবস্থিত মসজিদে জুম্মার নামাজ শেষে মুসল্লিরা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে সড়কে পড়ে থাকা কোরবানির পশুর শিং, দাঁত ও উচ্ছৃষ্ট অংশের বর্জের দুর্গন্ধে নাকাল হয়ে নাক চেপে সে স্থান ত্যাগ করছিলেন। এসময় হাজী শফিক নামে এক বাসিন্দা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিনের ময়লা এখনও এখানে পড়ে আছে। কখন নেবে তারা কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো না নেয়ার খেয়ালে ময়লার উপর ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিয়েছে।’
কল্যাণপুর এলাকায় ময়লার গাড়িতে কাজ করা একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো কাজ করে যাচ্ছি। অনেকে ফাঁকি দেয়। একারণে এমন অবস্থা। মিরপুর, শেওড়া পাড়া, কাজীপাড়া এলাকায় যে ময়লা এখনও আছে সেগুলো সরাতে আরও দুদিনও লাগতে পারে।’
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ঈদের দিনের কোরবানির পশুর সমস্ত ময়লা নির্ধারিত সময়ের আগেই অপসারণ করতে পেরেছি। কিছু কিছু জায়গায় ৭ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই অপসারণ হয়েছে। এজন্য আমাদের ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা এখনও কাজ করছেন।’
শতভাগ বর্জ্য অপসারণ ঘোষণার পরও ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় এখনও পশুর বর্জ্য রয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বর্জ্য অপসারণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা গতকাল সংবাদ সম্মেলনেও বলেছি কাল এবং আজ নিয়ম অনুযায়ী মানুষ এখনও কোরবানি দিচ্ছে। এসবের যে বর্জ্য সেগুলো ছাড়া আমরা আগেরগুলো অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছি। তবে কোথাও কোথাও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ঠিকমত কাজ না করায় কিংবা স্থানীয়রা সঠিকভাবে তথ্য না দেওয়ায় হয়তো বর্জ্য আছে। এজন্য সমস্ত বর্জ্য অপসারণ করা পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম চলবে।’
সারাবাংলা/এসএইচ/এমও