১০ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে ৭ ঘণ্টা!
২৬ আগস্ট ২০১৮ ২০:১৭
।। মো. আশিকুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে : ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৭টা। রোববার (২৬ আগস্ট) বেনাপোল থেকে অর্ধশত যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন সোহাগ পরিবহনের সুপারভাইজার শাহিনুল ইসলাম। বেলা ১১টায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় এসে গাড়ি নিয়ে সিরিয়ালে আটকে পড়েন তিনি।
ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে ফেরি ঘাটের দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা। কিন্তু দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা ধরে এই রাস্তা পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় ফেরির নাগাল পান তিনি।
ঈদের ছুটি শেষে কর্মজীবী মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এদিকে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হওয়ায় শাহিনুল ইসলাম ও তার গাড়ির যাত্রীদের মতো হাজারো মানুষকে এমন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। এ দীর্ঘ ভোগান্তি পেরিয়ে ফেরিতে ওঠার পর যাত্রী ও গাড়ি চালকরা হাফ ছেড়ে বাঁচছেন।
ফেরিতে ওঠার পর সোহাগ পরিবহনের সুপারভাইজার শাহিনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, সিরিয়াল না থাকলে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে ফেরিতে ওঠা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু সেই পথ আজকে পাড়ি দিতে সময় লাগলো দীর্ঘ সাত ঘণ্টা। এরপরেও ফেরিতে ওঠার পর অনেক স্বস্তি পেয়েছি। নিজের চেয়ে বেশি কষ্ট লাগে যাত্রীদের দুর্ভোগ দেখে।
বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে যেসকল যাত্রীরা গাড়িতে ওঠেন, তাদের কাছে সিরিয়ালে আটকে থাকার সময়টা খুব কষ্টের।
সাতক্ষীরা থেকে ঢাকাগামী পূর্বাশা পরিবহনের যাত্রী জুনায়েদ হাসান সারাবাংলাকে বলেন, সিরিয়ালে সাড়ে ছয় ঘণ্টা আটকে থেকে অবশেষে বাস নিয়ে ফেরিতে উঠতে পারলাম। এখন ভালো লাগছে। তবে দুপুরে মনে হয়েছিলো সাঁতরে নদী পার হয়ে ওপারে যাই। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না।
রোববার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় সরেজমিনে দৌলতদিয়া ঘাটে দেখা যায়, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ বাজার পদ্মার মোড় পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার রাস্তায় যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারসহ ছয় শতাধিক যানবাহন ফেরিতে ওঠার জন্য লাইনে রয়েছে।
লাইনে থাকা যানবাহনগুলোর মধ্যে যাত্রবাহী বাসের সংখ্যাই বেশি। কারণ ব্যক্তিগত ছোট গাড়িগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরিতে পার করা হচ্ছে।
এদিকে, যানবাহনের দীর্ঘ সারির ফলে লঞ্চ পারাপার বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীদের ঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মহাসড়কের ওপর নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে লঞ্চঘাটে পৌঁছাতে হচ্ছে সেসব যাত্রীদের। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীদের।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. রুহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ঈদ শেষে দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকাগামী বিভিন্ন গাড়ি ও মানুষের চাপ বেড়েছে। এসব গাড়ি পারাপারে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। পাঁচটি ফেরিঘাট সচল রয়েছে। অন্য সময়ের চেয়ে অধিক ফেরি চলাচল করলেও নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঢাকামুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ একসঙ্গে বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের ম্যানেজার মো. নুরুল আনোয়ার মিলন বলেন, ঈদ শেষে কর্মজীবী মানুষ ঢাকায় ফিরছেন। তাই দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে কর্মমুখী হাজারো যাত্রীর ঢল নেমেছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী পারাপারে ২১টি লঞ্চ চলাচল করছে।
তিনি আরও বলেন, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রীবহন করা হচ্ছে না। স্বাভাবিক সময়ের মতো এখনো নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো রকম অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঈদের আগে থেকেই দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, বাস টার্মিনাল ও মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ অবস্থান করছে। যাত্রীদের ফেরিতে ওঠার জন্য সিরিয়ালে আটকে থেকে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার দিক থেকে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
সারাবাংলা/এমআই