মৌলভীবাজারে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়
২৭ আগস্ট ২০১৮ ০৮:৪১
।। হৃদয় দেবনাথ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
মৌলভীবাজার: যানজট আর কোলাহলমুক্ত পরিবেশে ঈদের আনন্দকে উপভোগ করতে পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভিড় করেছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ প্রতিটি পর্যটন স্পটই এখন হাজারও পর্যটকদের ভিড়ে উৎসবমুখর। ঈদের একটু অবসরে দূর-দূরান্ত থেকে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারে চড়ে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে এসেছেন লাউয়াছড়া, মাধবকুণ্ড, হামহামসহ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোতে।
ছুটিতে নির্মল সবুজের স্বাদ নিতে চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই, মাধবপুর লেক, বাইক্যা বিল, নীলকণ্ঠ চায়ের কেবিন, বর্ষিজোড়া ইকোপার্কে নেমেছে মানুষের ঢল। শুধু তাই নয়, জেলার বড়লেখা উপজেলার পাথাড়িয়া পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা দেশের দীর্ঘতম জলপ্রপাত মাধবকুণ্ডেও বছরের অন্যান্য ছুটির সময়ের মতোই এবারের ঈদের ছুটিতে ভিড় জমিয়েছেন পর্যটকরা।
দিনভর গভীর সবুজ অরণ্যের বুকে কখনও বৃষ্টি, কখনও রোদ খেলা করছে। চিরহরিৎ সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে কিংবা বৃক্ষের ডালের দিকে ছিল হাজারও ভ্রমণপিপাসুর দৃষ্টি। একটিবারের জন্যও যদি বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের ডাক শোনা যায় কিংবা গাছের ফাঁকে একটিবার দেখা যায় লজ্জাবতী অথবা চশমাপরা হনুমান— তার জন্যই সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন।
সরেজমিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণিপেশার মানুষ। তাদের সবার লক্ষ্য একটাই— দৈনন্দিন জীবনের ফাঁকে দুয়েকটা দিন একটু প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকা। সেখানে বিভিন্ন প্রাণী ও পাখি দেখার জন্য তাদের উৎসুক চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে গাছের ডালে ডালে। তবে এত পর্যটকের ভিড়ে মাঝেমধ্যে দুয়েকটা চশমাপড়া হনুমান ছাড়া তেমন কোনো প্রাণীর দেখা মিলছে না। তাতেও অবশ্য আক্ষেপ নেই কারও। দলবেঁধে দিনভর ট্র্যাকিংয়ের মজা নিচ্ছেন তারা।
একইরকম ভিড় অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোতেও। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেড়াতে আসা মানুষদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কগুলোতে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। তাতে যাতায়াতে অসুবিধা পোহাতে হচ্ছে তাদের।
ঢাকা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে চা বাগানে বেড়াতে এসেছেন তিথি ইসলাম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ঈদের ছুটি কাটাতে বন্ধুরা মিলে বেড়াতে এসেছি। প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে পেরে খুব ভালো লাগছে। কিন্তু রাস্তাঘাটের অবস্থা শোচনীয়। ড্রাইভাররাও অনেক জায়গায় যেতে চাচ্ছেন না।
তিথির মতো অন্য পর্যটকরাও একই কথা বলেছেন। স্থানীয় কয়েকজন রিসোর্ট ও দোকানি জানালেন, কেবল রাস্তাঘাটে গর্ত ও খানাখন্দের কারণে গত বছরের চেয়ে এ বছর ভ্রমণপিপাসুর উপস্থিতি কম তাদের এলাকায়। কারণ, যারা এসে ভুক্তভোগী হচ্ছেন, তারা পরিচিতদের আসতে নিরুৎসাহিত করে থাকেন।
তারপরও বিভিন্ন পর্যটন স্পটে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর ঈদের দিনে পর্যটকের সমাগম অনেক বেশি হয়েছে। আর তাদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক দেখভালের জন্য পুলিশ ও র্যাবসহ পর্যটন পুলিশ সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
শ্রীমঙ্গলের পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের এ জি এম আরমান খান সারাবাংলাকে বলেন, মৌলভীবাজারে আসা ভ্রমণপিপাসু মানুষদের গ্র্যান্ড সুলতানের প্রতি দারুণ আগ্রহ। আমরা সেভাবে বুকিং নিচ্ছি। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাশাপাশি মানুষ এখন সিলেটমুখী হচ্ছে। গ্রাহকদের পর্যাপ্ত সুবিধা দিতে আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি।
র্যাব-৯-এর শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমানচন্দ্র কর্মকার সারাবাংলাকে জানান, ঈদের সময় কেবল দেশই নয়, দেশের বাইরের অনেক পর্যটকও ছুটে আসেন মৌলভীবাজারে। তাদের ভ্রমণকে নিরাপদ রাখতে আমরা টহল বাড়ানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।
সারাবাংলা/টিআর