মুক্তিযুদ্ধের ছবি ‘ভুল অর্থে’ ব্যবহার করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী
৩১ আগস্ট ২০১৮ ১৩:৩৪
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ‘সত্য খবর’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছে। সেখানে রোহিঙ্গা ছবি নামে ব্যবহার করা হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি। শুক্রবার (৩১ আগস্ট) রয়টার্সের এক সংবাদে একথা জানানো হয়।
পুরনো ও ঝাপসা সে ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি কৃষিকাজে ব্যবহৃত নিড়ানি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে কয়েকটি লাশ। ক্যাপশনে বার্মিজ ভাষায় বলা হয়েছে, ‘স্থানীয়দের নির্মমভাবে হত্যা করেছে বাঙ্গালিরা।’
এই ছবি ১৯৪০ এর সময় মিয়ানমারে ঘটা দাঙ্গা প্রসঙ্গে ছাপানো হয়েছে। মিয়ানমারের জনসাধারণকে বুঝানো হয়েছে, অবৈধ বাঙ্গালি অভিবাসীরা স্থানীয় বৌদ্ধদের হত্যা করেছে।
কিন্তু রয়টার্স জানায়, ছবিটি বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের। তখন পাকিস্তানী সেনাবাহিনী লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালি হত্যা করে। ছবিটির প্রকৃত আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন।
অর্থাৎ মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে ছবিটি মিথ্যা উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে।
অন্য একটি ছবির ক্যাপশনে বলে হয়েছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে নৌকায় করে প্রবেশ করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঐ ছবিটি ২০১৫ সালের। রোহিঙ্গারা সমুদ্রপথে মিয়ানমার থেকে দেশত্যাগের চেষ্টা করছিলেন। ছবিটি সাদাকালো করে বইয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।
তৃতীয় ভুয়া ছবিটি রুয়ান্ডা সহিংসতার। ১৯৯৬ সালের হুতু শরাণার্থীদের দেশত্যাগের ঐ ছবিটি তুলেন মার্থা রিয়াল। ছবিটি পুলিৎজার পুরস্কার জয় করে। তবে সাদা কালো করে নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ঐ ছবির ক্যাপশনে লিখেছে, ব্রিটিশ আমলে অবৈধ বাঙ্গালিরা মিয়ানমারে প্রবেশ করছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক রিলেশনস অ্যান্ড সাইকোলজিকাল ওয়ারফেয়ার’ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ওই ‘সত্য খবর’ বইয়ে মোট তিনটি ভুয়া ছবি পাওয়া যায় বলে জানায় রয়টার্স।
প্রকাশিত ওই বইয়ের বেশিরভাগ তথ্যই সংগ্রহ করেছে ‘সত্য খবর’ সংগ্রহের দলটি। তারা মূলত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। তথ্য-উপাত্ত ও ছবি সংগ্রহের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ফেসবুককে।
রয়টার্স জানায়, ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন দোকানে বইটি বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। তবে বইটির তেমন কোন কাটতি নেই। শহরের সবচেয়ে বৃহৎ বইয়ের দোকানে মাত্র ৫০কপি বই বিক্রি হয় বলে জানান বিক্রেতা। নাম প্রকাশ করার না শর্তে তিনি বলেন, ‘বইটি খুব একটা বিক্রি হচ্ছে না।’
বইটিতেও মিয়ানমারের সেনা নির্যাতনের কথা অস্বীকার করা হয় বরং বাঙ্গালিদের আখ্যায়িত করা হয়েছে সন্ত্রাসী হিসেবে। বলা হচ্ছে রোহিঙ্গারা ‘আরকিস্তান’ নামের দেশ গঠনের পায়ঁতারা করছেন।
বইটির সূচনা লিখেছেন লেফট্যানেন্ট কর্নেল কাওয়া। তিনি বলেছেন, ব্যবহৃত তথ্য ও প্রামাণ্যচিত্রে বাঙ্গালিদের প্রকৃত ইতিহাস উন্মোচন করা হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে মিয়ানমারে বাঙ্গালিরা নিজেদের সুযোগ খুঁজে নেয়।
এসব ছবির বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হাতোইর কোন বক্তব্য রয়টার্সের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি উ মায় মিন্ট মং বলেন, তিনি ঐ বই পড়ে দেখেননি। তাই কিছু বলতে পারছেন না।
সারাবাংলা/এনএইচ
আরও পড়ুন:
‘রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ব্যর্থ সুচি, উচিত ছিল পদত্যাগ করা’