আকাশবীণা উড়বে ৫ সেপ্টেম্বর
১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১২:৫৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ১ সেপ্টেম্বর নয়, ড্রিমলাইনার আকাশবীণা উড়বে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর বুধবার-এমনটাই জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
শনিবার ( ১ সেপ্টেম্বর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক ( জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানান, বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত বোয়িং-৭৮৭ আগামী ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নির্ধারিত গন্তব্য মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে যাবে। এটিই হবে আকাশবীণার প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট। তবে এর আগে ওইদিন দুপুর ১২টায় ড্রিমলাইনেরর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ১৯ আগস্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) ইনামুল বারীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের বোয়িং কোম্পানির কার্যালয় থেকে বিমানটি নিয়ে আসেন। এ নিয়ে বিমানের বহরে উড়োজাহজের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫টিতে।
এই ড্রিমলাইনার দিয়ে প্রথম ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা ও ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
গত বুধবার ( ২৯ আগস্ট) ড্রিমলাইনেরর প্রথম পরীক্ষামূলক ফ্লাইট হিসেবে ঢাকা থেকে কলকাতায় যায় বলে জানান শাকিল মেরাজ। তিনি বলেন, বোয়িংয়ের ক্যাপ্টেন রিচার্ড এম ডেনটন ও বিমানের জ্যেষ্ঠ পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল আহমেদ ফ্লাইটটি পরিচালনা করেন। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাসহ ২৯ জন আরোহী নিয়ে প্রথম ফ্লাইটটি কলকাতায় যায়।
শাকিল মেরাজ আরও বলেন, প্রথম পরীক্ষামূলক ফ্লাইটটিতে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।
ট্যাক্স ও চার্জ বাদে ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা রুটে ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া হবে ২০০ মার্কিন ডলার এবং ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া ২৯০ মার্কিন ডলার।
টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম এই ড্রিমলাইনার চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগবে। এটি ঘণ্টায় ৬৫০ মাইল বেগে উড়তে সক্ষম। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই বিমান ওজনে হালকা। ভূমি থেকে বিমানটির উচ্চতা ৫৬ ফুট। দু’টি পাখার আয়তন ১৯৭ ফুট।
আকাশবীণায় আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস।
ড্রিমলাইনার ৭৮৭ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। বিমানে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক যাত্রী ১৫ মিনিটের জন্য বিনামূল্যে ১০ মেগাবাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এরপরও কোনো যাত্রী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে চার্জ দিতে হবে। ১শ’ মেগাবাইটের জন্য ৮ ডলার, ৩শ’ মেগাবাইটের ১৬ ডলার আর ৬শ’ মেগাবাইটের জন্য ৩২ ডলার হারে চার্জ দিতে হবে যাত্রীদের।
এছাড়া মোবাইল ফোনে রোমিং সুবিধা থাকলে আকাশে থাকার সময় কল করতে পারবেন যাত্রীরা। এ জন্য ২৫টি স্যাটেলাইটের সঙ্গে করা হয়েছে চুক্তি। বিমানটি যে স্থানের ওপর দিয়েই যাবে, যাত্রীদের সামনে তখন স্ক্রিনে দেখা যাবে থ্রিডি ম্যাপ, একইসঙ্গে উঠে আসবে সেই স্থানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঢাকায় বিমানের ফ্লাইট অপারেশন রুমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এটি। এর মাধ্যমে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, ককপিট, ফুয়েল, নেভিগিয়েশনসহ সব তথ্য জানতে পারবেন ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তারা। যেকোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তারা অপারেশন রুম থেকে পাইলটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবেন। এজন্য ঢাকায় বিমানের প্রধান কার্যালয়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সার্ভার স্থাপন করা হয়েছে।
ড্রিমলাইনার পরিচালনার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিমানের ১৪ জন পাইলট। ড্রিমলাইনার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রকৌশল বিভাগের ১১২ জনকে। এছাড়া কেবিন ক্রুদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে ২০০৮ সালে চারটি ড্রিমলাইনারসহ মোট ১০টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার জন্য ২.১ বিলিয়ন ইউএস ডলারে চুক্তি করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ১০টি বোয়িং উড়োজাহাজের মধ্যে রয়েছে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেল চারটি এবং বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেল দু’টিসহ মোট ছয়টি উড়োজাহাজ বাংলাদেশ বিমানকে সরবরাহ করেছে কোম্পানিটি। বাকি থাকা চারটি ৭৮৭ উড়োজাহাজের আজ দেশে আসে। পরেরটি আগামী নভেম্বর এবং আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে আরো দু’টি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ সরবরাহ করবে তারা।
সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ