হাজার কৃষকের জীবন বদলে দিয়েছে মোহনপুর রাবার ড্যাম
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১১:৩০
।। মাহিদুল ইসলাম রিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
দিনাজপুর: বর্ষার ভরা মৌসুমেও তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দিনাজপুরে খরার আভাস ছিল। পানির সংকটে চলতি আমন চাষই অনিশ্চিত। এ পরিস্থিতিতে জেলার বেশিরভাগ কৃষকদের যখন মাথায় হাত, তখন জেলার চিরিরবন্দর-সদর উপজেলার একসময়ের অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকা কয়েক হাজার হেক্টর জমির কৃষকরা আমন চাষে পার করছেন ব্যস্ত সময়। জেলার বাকি এলাকার সঙ্গে এই এলাকার কৃষিতে এমন বিপরীত চিত্রের মূল কারণ হলো মোহনপুর রাবার ড্যাম। দেশের বৃহত্তম এই রাবার ড্যামের কল্যাণে এখন এই এলাকার কৃষকদের জীবনে এসেছে বদলের ছোঁয়া।
ভূ-গর্ভে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচের অভাবে অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকত ফসলি জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের সদর ও চিরিরবন্দর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার হেক্টর জমি। আশপাশের নদীগুলোর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ আহরণ করতে না পেরে অনাহারে দিন কাটাতে হতো স্থানীয় জেলেদেরও। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয়দের কৃষিকাজের সংস্থানে ২০১১ সালে চিরিরবন্দর-সদর উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই নদীর ওপর মোহনপুর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যাম নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে প্রায় দুই বছরে শেষ হয় এই প্রকল্পের কাজ। মোহনপুর রাবার ড্যাম হিসেবে পরিচিত বাঁধটি ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।
দিনাজপুর স্থানীয় প্রকৌশল অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, যেকোনো মৌসুমে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় নদীর পানি মজুত রাখার ক্ষমতা রয়েছে ১৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধটির। এর ফলে এখন স্থানীয় কৃষকদের পানির অভাবে কোনো মৌসুমেই আবাদ বন্ধ রাখতে হয় না। অন্যদিকে, স্থানীয় জেলেরাও সারাবছর মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন। পাশাপাশি স্থানীয়দের আমিষের চাহিদাও মেটে। তাতে বদলে যায় চিরিরবন্দর ও সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের আর্থ-সমাজিক চিত্র।
দিনাজপুর সদর উপজেলার পাঁচবাড়ি এলাকার কৃষক মো. আব্দুল মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, আমার ৯ বিঘা জমি আছে। সেচের অভাবে দীর্ঘদিন সেই জমি সব মৌসুমে চাষ করতে পারিনি। রাবার ড্যাম চালুর পর থেকে এখন যেকোনো মৌসুমে চাষ করতে পারি।
দিনাজপুর সদর উপজেলার আট নম্বর শংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসাহাক চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, এই রাবার ড্যামের সুফল পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা, উথরাইল, ফাজিলপুর, শশরা, শংঙ্করপুর ও চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতারা, ভিয়াইল, আউলিয়া পুকুর ও আব্দুলপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি সেচ অভাবে অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকত। এখন আর তা হয় না। ফলে স্থানীয় কৃষক পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা। স্থানীয় জেলেরাও এখন আগের চেয়ে ভালো আছে।
দিনাজপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মোহনপুর রাবার ড্যাম নির্মাণের কারণে অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই কৃষকরা সেচ সুবিধা পাচ্ছেন। ফলে বছরের কোনো সময় তাদের বসে থাকতে হয় না। স্থানীয় অর্থনীতিতে এই রাবার ড্যাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
সারাবাংলা/টিআর