পরকাল ভাবনায় মুমিনের সাফল্য
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৯:৪৯
।। জহির উদ্দিন বাবর।।
জীবনের কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে একদিন সবাইকে মরতে হবে। পৃথিবীর ইতিহাসে কেউ অমর হয়নি, আর কোনোদিন হবেও না। সবাইকে একদিন না একদিন চলে যেতে হবে। যেহেতু চলে যাওয়াই অনিবার্য এজন্য ইসলামের চোখে ক্ষণস্থায়ী এই জীবনের চেয়ে পরকালীন জীবন অধিক গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের প্রয়োজনে সবকিছু ঠিকঠাক রাখার পরও সবসময় ভাবতে হবে পরকাল নিয়ে। কোরআন-হাদিসে যেখানেই দুনিয়ার আলোচনা এসেছে সেখানেই পরকালের কথাও স্মরণ করা হয়েছে। দুনিয়ার জীবনকে পরকালের শষ্যক্ষেত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এখানে একজন মানুষ যা কিছু অর্জন করবে, সঞ্চয় করে রাখবে পরকালে এর সুফল ভোগ করবে।
কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে পরকাল ভাবনা একটি ইবাদতও বটে। হাদিসে বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে বলা হয়েছে। যারা মধ্যে পরকাল ভাবনা প্রবল থাকে তার অন্তর হয় কোমল ও মসৃণ। আল্লাহর ভয়ে তিনি সবসময় তটস্থ থাকেন। যেকোনো অন্যায় পথে পা বাড়াতে সাহস করেন না। আর যারা পরকালের প্রতি গাফেল ও বেপরোয়া তারাই কেবল যেকোনো অন্যায়-অপকর্ম করতে পিছপা হয় না। রাসুল (সা.) এক সমাবেশে তার সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, কে সবচেয়ে বুদ্ধিমান? সাহাবিরা স্বভাবসুলভভাবে বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন।’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, সেই ব্যক্তি প্রকৃত বুদ্ধিমান, যিনি মৃত্যুর জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকে। সাহাবিরা বললেন, হে রাসুল (সা.)! আমরা মৃত্যুর জন্য কীভাবে প্রস্তুত থাকব? রাসুল (সা.) বললেন, মৃত্যু যে খুব কাছে সে অনুযায়ী প্রস্তুত থাকবে।
দুনিয়ার জীবনের তুলনায় আখেরাতের জীবনটি হলো অতল সমুদ্রের এক ফোঁটা পানির মতো। সুতরাং সে জীবনের জন্য পাথেয় যোগানোর প্রয়োজন অনেক বেশি। সে জন্য মুসলিম দার্শনিক ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, তুমি দুনিয়াতে যতদিন অবস্থান করবে, সে হিসাবে এখানকার জন্য তৎপরতা চালাও। আর আখেরাতে তোমাকে যতকাল স্থায়ী হতে হবে, সে হিসাবে সেখানকার জন্য শ্রম ব্যয় কর। আমরা পার্থিব জীবন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে পরকাল নিয়ে ভাবার সময় ও সুযোগ পাই না। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টোটা। দিন-রাতের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বেশির ভাগ সময়ই আমরা ব্যয় করি পার্থিব প্রয়োজনে। সবমিলিয়ে প্রতিদিন এক ঘণ্টাও ব্যয় করি না পরকালের সঞ্চয়ের জন্য। যদিও পরকালের তুলনায় কোনো গণনাতেই আসে না এই পার্থিব জীবনের দিনগুলো।
আমরা মৃত্যুকে সবাই ভয় করি, এই মৃত্যু থেকে বাঁচা সম্ভব নয় জেনেও তার প্রতি গাফেল হয়ে থাকি। অথচ মৃত্যুর কথা স্মরণে রেখে আখেরাতের প্রস্তুতি নিলে খুব সহজেই আমরা সফল হতে পারি। নবী-রাসুল ও আল্লাহর প্রিয় বান্দা যারাই দুনিয়াতে সফল হয়েছেন তাদের সবার কাছে পরকালই ছিল মুখ্য। তারা দুনিয়াতে সবকিছুই করেছেন, কিন্তু তা নিতান্তই দুনিয়ার প্রয়োজনে। পরকালকে ভুলে গিয়ে কখনও দুনিয়া অর্জনের পেছনে তারা ছুটেননি। সত্যিকার অর্থে আমরা পরকালীন সাফল্য লাভ করতে চাইলে আখেরাতের ভাবনার কোনো বিকল্প নেই। যার মৃত্যুর কথা সবসময় স্মরণ থাকবে, পরকালের হিসাব-নিকাশে যিনি বিশ্বাস রাখবেন তার দ্বারা কোনো অনৈতিক কাজ হতে পারে না।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
সারাবাংলা/এমএইচ