Monday 02 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পানচাষে লাভবান রাজশাহীর কৃষক


৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৯:২৭

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।

রাজশাহী : এবার রাজশাহীর চাষিরা পান চাষে লাভবান হচ্ছেন। এ কারণে জেলা-উপজেলায় দিনদিন চাষিদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে পান চাষে। দেশ-বিদেশে কদর বাড়ছে রাজশাহীর সুস্বাদু পানের।

জেলায় এক বছরে পানের আবাদ বেড়েছে ২ হাজার সাড়ে ৪শ বিঘা। প্রতি বছরই মড়কে পানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পানের ক্ষেতও ভাঙা-গড়া চলে প্রতিবছর।

কিন্তু পান চাষিদের প্রাণের দাবি পান গবেষণা কেন্দ্র আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে বর্তমান বাজারে পানের দাম ভাল পাওয়ায় চাষিরা খুশির জোয়ারে ভাসছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় ছয়টি উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৮শ’ ২১ হেক্টর ( ১৩ হাজার ৬শ’ ৬০ বিঘা) জমিতে পানের আবাদ রয়েছে। পান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার ৯শ’ ৫৪ মেট্রিক টন। বর্তমান বাজার মূল্যে যার গড়দাম প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

জেলায় প্রায় ২৫ হাজার সাড়ে ৫শ’ পানের ক্ষেত বা বরজ আছে। আর এই আবাদের সঙ্গে প্রত্যেক্ষ জড়িয়ে আছে প্রায় এক লাখ পান চাষির জীবন-জীবিকা। জেলার পবা, মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া এবং চারঘাটে পান চাষ হয়ে থাকে। অন্যান্য কৃষি আবাদের তুলনায় বর্তমানে পান চাষে বেশি লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। বাজারে পানের দাম ভাল পাওয়ায় চাষিদের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। আর এসব উপজেলায় পান বিক্রির জন্য গড়ে উঠেছে পানহাট। জেলার বড় পান হাটগুলো হচ্ছে, বাগমারা উপজেলার মোহনগঞ্জ, তাহেরপুর, মছমইল, একডালা, পবা উপজেলার তেকাঠাপাড়া, নওহাটা, দুর্গাপুর উপজেলার দাওকান্দি, কালিগঞ্জ, কানপাড়া, মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি, ধুরইল, একদিলতলা, কুঠিবাড়ি এবং ধোপাঘাটা পান হাট।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিন মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি পান বাজারে দেখা গেছে, বড়-ছোট আকৃতি অনুযায়ী প্রতি পোয়া (২০৪৮টি) পানের দাম ছিল ৩শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা। যার মধ্যে ছোট পান ৮শ’ টাকা, মাঝারি ১ হাজার ৬শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা এবং মোটা বা বড় পান ২ হাজার ৫শ’ থেকে ৩ হাজার ৬শ’ টাকা।

পানচাষি মৌগাছি গ্রামের রহমত শেখ, সুনখেজুর গ্রামের সাইবত আলী এবং দুর্গাপুরের কানপাড়া দুর্গাদহ গ্রামের তমিজউদ্দিন বলেন, মড়ক না লাগলে অন্যান্য কৃষি ফসলের তুলনায় পান চাষে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। পানকে তারা সোনার পাতার সঙ্গে তুলনা করেন। ভাল পান হলে ১০ কাঠার বরজ থেকে বছরে পান বিক্রি করে তিন থেকে চার লাখ টাকা লাভ করা যায়। যা অন্য কোনো ফসলে সম্ভব নয়।

তারা আরো বলেন, পান বহন করা সহজ সাধ্য ব্যাপার, বাড়ি থেকে মাথায় করে অনায়াসে ১০ হাজার টাকার পান বহন করা যায়।

পান ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার এবং মকবুল হোসেন বলেন, ভারত থেকে এলসি’র মাধ্যমে পান দেশে না আসলে দেশের বাজারে পানের দাম আরো বৃদ্ধি পেত। এলসি’র কারণে দেশের পান ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে। আবার এলসি’তে যে পান আসে সে পানগুলোর আকার বড় হলেও স্বাদ আমাদের পানের চেয়ে অনেক নিম্নমানের। রাজশাহীর মতো বরিশাল, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরা জেলাতেও পানের চাষ হচ্ছে। জানা গেছে তাদেরও একই দাবি পান গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য।

পানের মড়ক ঠেকাতে কী কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মনজুরে মাওলা বলেন, পান চাষিদের পানবরজ পরিষ্কারসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পানের রোগে কোনো নির্ধারিত কীটনাশক না থাকায় এবং পান নিয়ে গবেষণার কোনো সুযোগ না থাকায় পান চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের যখন সভা সেমিনার হয়, তখন পান গবেষণার জন্য সুপারিশ পাঠানো হয়। তিনি আশা করেন, পান গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনে সরকার খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

বিজ্ঞাপন

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, পানে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। জেলায় পানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১০-১১ (জুন মাস) সালে রাজশাহী জেলায় পান বরজ ছিল ১ হাজার ৪শ’ ৯৫ হেক্টর ( ১১ হাজার ২শ’ ১২ বিঘা)। এ সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮শ’ ২১ হেক্টর (১৩ হাজার ৬শ’ ৬০ বিঘা)। যার মধ্যে পবায় ৬শ’ ৯৩ বিঘা, মোহনপুর উপজেলায় ৪ হাজার ২শ’ ১২ বিঘা, বাগমারায় ৪ হাজার ৬শ’ ৫০ বিঘা, দুর্গাপুর উপজেলায় ৩ হাজার ৮শ’ ৪০ বিঘা, পুঠিয়ায় ২শ’ ৭০ বিঘা এবং চারঘাট উপজেলায় ৩ বিঘা জমিতে পানের বরজ আছে।

তিনি বলেন, ‘পান চাষিদের বিজ্ঞানসম্মতভাবে পান চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে এর উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। আর দেশের বাইরে রাজশাহীর পানের বাজার যদি আরও বাড়ানো করা যায় তবে পানও হতে পারে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য একটি বিশাল খাত।’

সারাবাংলা/একে

 

পানচাষ রাজশাহী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর