ছাত্রত্ব নেই, হলে থাকছেন প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১২:১৩
।। কবির কানন, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: দুই বছর আগে ছাত্রত্ব শেষ হলেও নিয়ম অমান্য করে আবাসিক হলে থাকছেন নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত ইডেন কলেজের এক ছাত্রলীগ নেত্রী। ওই কলেজের তিনটি হলের পাঁচটির বেশি কক্ষ দখলে রয়েছে তার নামে।
অভিযুক্ত ওই ছাত্রী মাঝে মাঝে হলে থাকার কথা স্বীকারও করেছেন সারাবাংলার কাছে।
শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ইডেন কলেজ পরীক্ষার অন্যতম একটি কেন্দ্র। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীর এ সময়ে হলে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম আঞ্জুমান আরা অনু। তিনি ইডেন কলেজের গণিত বিভাগের ২০০৮-০৯ সেশনের ছাত্রী ছিলেন। ২০১৬ সালে তার ছাত্রত্ব শেষ হয়। তারপরেও ওই বছরের ১ নভেম্বর কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে তিনি যুগ্ম-আহ্বায়কের পদ পান।
গতবছর এ ছাত্রলীগ নেত্রী সংসার জীবন শুরু করেছেন। বিবাহিত ও অছাত্র হওয়ার পর তিনি ইডেন কলেজের রাজিয়া বেগম হলের দুইটি কক্ষ নিয়ে (কক্ষ নম্বর ২০৪, ২০৬) হলে বসবাস করছেন। এছাড়া তার অধীনে খোদেজা খাতুন হলে দুইটি কক্ষ রয়েছে ( ৩১৪, ৩১৫), বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে ৩০৪ নম্বরকক্ষসহ একাধিক কক্ষ রয়েছে।
যদিও বিবাহিত ও অছাত্রদের হলে থাকার কোনো নিয়ম নেই। তারপরও এই নেত্রী একাধিক হলের একাধিক কক্ষ দখল করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রেও বিবাহিত ও অছাত্রদের থাকার কোনো নিয়ম নেই।
সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের সার্চ লাইটের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, আঞ্জুমান আরা অনু ইডেন কলেজ কেন্দ্র থেকে নিয়োগ পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করতেন বলে বলা হয়।
বিবাহিত ও অছাত্র হওয়া সত্ত্বেও হলে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্জুমান আরা অনু জানান, তিনি মাঝে মাঝে হলে থাকেন। যদিও গত সপ্তাহের প্রতিদিনই তিনি হলে অবস্থান করেছেন বলে এ প্রতিবেদক নিশ্চিত হয়েছেন।
প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত এমন প্রশ্নের জবাবে এ ছাত্রলীগ নেত্রী বলেন, ‘আমি এ সব কাজে একদমই জড়িত না।’
নাম কেন এলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বুঝতে পারছি না। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘টেলিভিশন রিপোর্টে তার নাম আসেনি কিন্তু ইউটিউবের একটি রিপোর্টে তার নাম এসেছে।’
অছাত্র হয়েও হলে থাকার বিষয়ে রাজিয়া হলের সুপার কামরুন্নাহার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার জানামতে সে নারায়ণগঞ্জে তার স্বামীর সঙ্গে থাকে।’
গত কয়েকদিন ধরে হলে আছে অবহিত করলে তিনি বলেন, ‘সে মাঝে মাঝে আসে দেখি।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘সে ছাত্রলীগ নেত্রী, হলে তার অনুসারী মেয়েরা আছে বোঝেন তো।’
পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে অভিযুক্ত এমন একজন হলে থাকার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার কেন্দ্রের চতুর্দিকে গেট আছে কেউ ঢুকতে পারে না।’
এ বিষয়ে জানতে কলেজের প্রিন্সিপাল শামসুন্নাহারকে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস দিলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
বিবাহিত ও অছাত্র হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রলীগের পদে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক তাসলিমা আক্তার কোনো জবাব না দিয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেন।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস দেওয়া হলেও তার উত্তর পাওয়া যায়নি।
প্রশ্নপত্র ফাঁসে অভিযুক্ত একজন ‘পরীক্ষা কেন্দ্র এমন একটি কলেজের হলে থাকছেন’ অবগত করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/কেকে/একে
ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নফাঁস ভর্তি পরীক্ষা