রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে চেষ্টা করবে বাংলাদেশ
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:৫২
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
ঢাকা : গত বছরের মতো এবছরও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষধের অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পেতে বাংলাদেশের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনে উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও জোর সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করবে বাংলাদেশ।
শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
** নিউইয়র্কের পথে প্রধানমন্ত্রী, ৬ দিনে ২৬ কর্মসূচি
স্থায়ী প্রতিনিধি জানান, এবারের অধিবেশনে শেখ হাসিনা ৯০ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। প্রধানমন্ত্রী মূলতঃ যে সব বিষয়ে অংশ নেবেন সেগুলো হলো-রোহিঙ্গা বিষয়ক, উন্নয়ন বিষয়ক, বিশেষতঃ শিক্ষা ও নারী অধিকার, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে এবারের অধিবেশনে গতবারের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অর্জনে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা সারা বছরই আপনাদেরকে হাল নাগাদ রেখেছি। জাতিসংঘে এ বিষয়ে যখনই যা হয়েছে আপনাদের তা জানিয়েছি। রোহিঙ্গা বিষয়ে আমাদের সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে যা দৃশ্যমান। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এবারের জাতিসংঘে উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও জোর সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করবো।’
এছাড়া আরও বেশকিছু কারণে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে বলে সাংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এসময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি কেমন হবে সে সম্পর্কেও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক পৌঁছবেন রোববার (২৩) সেপ্টেম্বর দুপুরে। এইদিন সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী কম্যুনিটি আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে লেনসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে ভাষণ দেবেন তিনি। এর আগে ওইদিন সকালে বিশ্ব মাদক সমস্যা বিষয়ে বৈশ্বিক আহ্বান সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন। আয়োজনটি যুক্তরাষ্ট্রের হলে ২৯টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এর সহ-আয়োজক। এতে উপস্থিত থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিব।
একই দিনে শরণার্থী রিষয়ক বৈশ্বিক কম্প্যাক্ট ও শিক্ষা বিষয়ক দুটি উচ্চ পর্যায়ের হাই-লেভেল ইভেন্টে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। এছাড়া দুপুরে ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত একটি রাউন্ড টেবিল আলোচনায় তিনি অংশগ্রহণ করবেন।
মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সাইবার সিকিউরিটি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে জার্মানী, সুইজারল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও সিঙ্গাপুর কো-স্পনসর করছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের আয়োজনে অ্যাকশন ফর পিস কিপিং বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন। পিস কিপিং বিষয়ক এই ইভেন্টে নিজের বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ক্রমাগত উন্নতির বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। এছাড়া তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কিত একটি প্যানেলেও যোগ দেবেন।
পরে জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার সাধারণ পরিষদের জেনারেল ডিবেট অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দিবেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে গতবারের উত্থাপিত পাঁচ দফা সুপারিশমালার ধারাবাহিকতায় এবারেও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখবেন। তাঁর বক্তব্যে থাকবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য গাঁথার বিষয়গুলো। ‘রূপকল্প ২০২১’-এর আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে সরকার যে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে, সে বিষয়ে আলোকপাতের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশাগুলোও তাঁর বক্তৃতায় থাকবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
সবশেষে ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে এই সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এসবের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র/ সরকার প্রধান, জাতিসংঘ মহাসচিব, কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
সারাবাংলা/এসএমএন