বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র সফল করার লিজ নিয়েছে ড. কামাল: ১৪ দল
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:০০
।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ডুবন্ত বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র সফল করার লিজ নিয়েছে ড. কামাল হোসেন। ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে এক-এগারোর কুশীলবরা আবারও নির্বাচন বানচালের চক্রান্তে মেতে উঠেছে। এ লক্ষ্যে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যহত করার যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, তা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা।
সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে একটি কমিউনিটি সেন্টারে ১৪ দলের বৈঠকে নেতারা এমন অঙ্গীকারের কথা জানান বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা সারাবাংলাকে এ তথ্য জানান।
মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ওয়ার্কাস পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক অসিত বরণ রায়, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাত হোসেন, গণআজাদী লীগের এস কে শিকদার, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ অন্যান্য শরিক জোটের নেতারা।
একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে বৈঠকে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, কামাল হোসেন গংরা এখন বিএনপি-জামায়াতের কাঁধে ভরে করেছে ষড়যন্ত্রের ঐক্য করেছে। তারা ডুবন্ত বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রেও লিজ নিয়েছে। তারা ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে নির্বাচন বানচালের চক্রান্তে মেতে উঠেছে। এই কুশীলবরা কিন্তু এক-এগারোর সময় বাংলাদেশকে নেতৃত্ব শূন্য করার এক-এগারোর সময় মাইনাস টু ফর্মুলার অন্তরালের খেলোয়াড় ছিল। এবার আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ১৪ দলকে সাথে নিয়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই কুশীলবদের চিন্তা চেতনা কিন্তু এখনো বলবৎ আছে। তারা মনে করছে একজন দুর্নীতি, অরাজকতা সন্ত্রাস নাশকতার ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির কারণে মাইনাস হয়েছে। এখন শুধু একজন আছে তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাই তারা আবারও মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার ষড়যন্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছে। এদেরকে জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও সামাজিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিহত করতে হবে।
বৈঠকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল শরীফ নুরুল আম্বিয়াও ষড়যন্ত্রের ঐক্য প্রক্রিয়া দাবি করেন। তিনি বলেন, কেউ যদি ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে তাতে আমাদের কোন কথা নেই। কিন্তু ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে বিএনপি-জামায়াতকে সাথে নিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যহত করার ষড়যন্ত্রে শামিল হয় তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে এদের প্রতিহত করার পরামর্শ দেন।
এছাড়াও শিগগরই জাতীয় পার্টিসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির দলগুলোকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব আরেকটি বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের প্রস্তাব দেন। তবে বৈঠকে এবিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব নজিবুর বশর মাইজভান্ডারী।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আকতার বলেন, আমরা যখন টানা মেয়াদে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি যখন গ্রহণ করেছি তখনই আমাদের সামনে নানা ব্যক্তি না ঐক্য নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে। ড. কামাল হোসেন ২৫ মার্চে রাতে কোথায় যাবার কথা ছিল? তিনি কোথায় গেলেন এবং কোথা থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসলেন? মাহমুদুর রহমান মান্না আমার দলেরই একজন ব্যক্তি ছিল এবং তারপরে কয়েকবার দল বদল করলেন? তারপর তার কি অবস্থা সেটা আমাদের সবার জানা। এসবের মধ্যে দিয়ে বোঝা যায় দেশকে ভাল দিকে যাওয়ার কোনো উদ্দেশ্য তাদের মধ্যে নেই। এটি ষড়যন্ত্রের ঐক্য।
এই ষড়যন্ত্রের ঐক্যকে মোকাবেলা করার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ করে মোকাবেলা করতে হবে। ড. কামাল হোসেন একজন বড় আইনজীবী। কিন্তু তিনি খালেদা জিয়ার দুর্নীতি ও জামায়াত বিএনপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে রক্ষার শেষ রক্ষা করবার জন্য চেষ্টায় নেমেছেন। তবে তিনি সেই কাজে জয়ী হতে পারবেন না। কারণ বাংলাদশের মানুষ এখন সতর্ক আছে। এ লক্ষ্যে জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে ১৪ দল সারাদেশব্যাপী জোরালোভাবে ঐক্যবদ্ধ করার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে বৈঠকে তিনি বলেন, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে খুবই ভাল সম্পর্ক। কিন্ত সারাদেশে জেলা, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা সিটি পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে শরিক জোটের নেতাদের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।
তরিকত ফেডারেশনের নজিবুর বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়ার দুই টার্গে। তাদের ১ নম্বর টার্গে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই নম্বর হচ্ছে আওয়ামী লীগ। কারণ এরা মনে করে শেখ হাসিনা যতদিন আছে ততদিন তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. কামাল হোসেন যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের সময় আদালতে প্রাঙ্গণে একদিনের জন্য দেখা যায় নাই। অথচ তিনি ড. কামাল হোসেন হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর জন্য। আওয়ামী লীগের কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আইনজীবী হিসেবে জাহির করতে পেরেছেন। তিনি এই প্লাটফরমেই গড়ে উঠেছেন। অথচ তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ও নানা দ্বিচারিতা ভূমিকা পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার নিয়ে তার নীরবতা পালন করেছেন। এই দিকগুলো এখন জনগণের সামনের দিকে নিয়ে আসা উচিত। ড. কামাল হোসেনের রাজনৈতিক জীবনে সন্দেহজনক যে আচরণ, সেই আচরণ এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। কারণ তিনি ডুবে যাওয়া বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে তুলে নিয়ে আসার মহান দায়িত্ব নিয়েছেন। কারণ বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া সংগঠন হয়ে গেছে। একারণে তারা বি চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে অতীত ভুলের জন্য দুঃখ ও ক্ষমা প্রার্থনা প্রকাশ করেছেন। সেই মঞ্চ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। খালেদা জিয়া তো রাজবন্দী না। খালেদা জিয়া একজন অপরাধী। আদালতের মাধ্যমেই তিনি অপরাধ প্রমাণের পর তিনি জেলখানার আছেন। সেই নেত্রীর দ্বারা কিসের আইনের শাসন হবে, গণতন্ত্রেও শাসন হবে। কাজেই এই বিষয়গুলো আমাদের সামনে নিয়ে আসতে হবে।
বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বধানী জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে একটি নাটক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যারা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে লালন করেছে, লালন করে যাচ্ছে এবং যারা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের সহায়তাকারী সমর্থনকারী; সেই বর্ণচোরা ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা সবাই একই মঞ্চে বসে নাটক করলেন। তারা আজকে আবার নতুন করে ডুবন্ত বিএনপিকে উদ্ধার করার জন্য মাঠে নেমেছে। এদের দুঃচিন্তার কোনো কিছুই নাই। কিন্তু আমরা শুধু দুঃচিন্তা করছি, এই ব্যর্থ হতাশ রাজনীতিবিদরা মাঠে নেমেছেন কেন? এটিই এখন দুঃচিন্তা। ওদের পরিণতি আগের মতোই হবে। আরও করুণ পরিণতি হবে।
সারাবাংলা/এনআর/এমআই