মাদক না ছাড়লে ‘শ্যুট অন সাইট’
২ জানুয়ারি ২০১৮ ১৫:৩০
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
কোনো মাদকসেবী কিংবা ব্যবসায়ীকে ছয় মাস সময় দেওয়ার পরও মাদক না ছাড়লে তাকে শ্যুট অন সাইট করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজার রহমান।
মন্ত্রী বলেন, অন্তত দু’চারটি জেলায় এটি করতে পারলে মাদক ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত তারা কেঁপে উঠবে।তবে এ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলসহ সমাজের সকলকে এক কাতারে নিয়ে আসতে হবে। আগে তিন মাস ছয় মাস সময় দিতে হবে।এর মধ্যে মাদকের লাইন ছেড়ে না দিলে শ্যুট অন সাইটের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কে রাজনৈতিক দলের কে ব্যবসায়ীর ছেলে-মেয়ে তা দেখার দরকার নেই।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ২৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে তেজগাঁওয়ের প্রধান কার্যালয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মাদকের ভয়াবহতা সমাজে যেভাবে গ্রাস করেছে তাতে সাধারণ পরিকল্পনা করে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। অনেকেই বলেছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের জনবল কম। কেউ বলেছেন, অস্ত্র নেই। কেউ যানবাহন স্বল্পতার কথা বলেছেন। আবার কেউ নিরাময় কেন্দ্র বাড়ানোর কথা বলেছেন। আমি মনে করি, এসব দিয়ে কোনো কাজ হবে না। দেশের ৫০৮টি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে নিরাময় কেন্দ্র করেও কাজ হবে না। বর্তমান ১৭০০ জনবলকে ৫ লাখে উন্নীত করলেও কোনো কাজ হবে না। মাদকের বিস্তার ঠেকানো যাবে একটি সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।
মন্ত্রী বলেন, সরকার মাদকের ব্যাপারে কঠোর ও জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছে। এরপরেও কেন মাদক ঠেকানো যাচ্ছে না। কেন বাবা মাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়। আমি এ বিভাগের মন্ত্রী হলে সবার আগে সব রাজনৈতিক দলের ওপেন সিদ্ধান্ত নিতাম। ইমামদের একত্রিত করতাম। জনপ্রতিনিধিদের কমিটমেন্ট নিতাম। পরবর্তীতে যাতে কারো কোনো ক্লেইম না থাকে। এরপর তিন থেকে ছয় মাস সময় দিতাম মাদক ব্যবসায়ীদের মাদক সরবরাহ বন্ধ করতে। তখন কেউ না শুনলে শ্যুট অন সাইট পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো।
গণশিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মাদক দেশে আসে বলে তথ্য রয়েছে। এটি ঠেকাতে সকলকে এমন এক জায়গায় দাঁড়াতে হবে যাতে মাদক ব্যবসায়ীরা সবাই কেঁপে ওঠে। মাদক সমাজ থেকে নির্মূল করতে হলে উপলব্ধি করতে হবে। ঘরের বাইরে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। অস্ত্র লাগবে না বরং কাজ হয়ে যাবে। একটি কঠোর সিদ্ধান্তই পারে মাদকের হাত থেকে দেশের মুক্তি।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (সুরক্ষা বিভাগ) ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে দেশের প্রায় ৭০ লাখ লোক মাদকের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এদের কেউ মাদক গ্রহণ করে আবার কেউ বিক্রি করে। আগামীতে এর সীমা পরিসীমা থাকবে না। কোনোভাবেই এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যারা মাদকের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সমাজে তারা অনেক শক্তিশালী। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নানান সংকট রয়েছে। এতো বড় একটি বিভাগের মাত্র ১৭০০ জনবল কাজ করে। কোনো জেলায় ৭/৮ জন আবার কোনো জেলায় ৩/৪ জন লোক কাজ করে। যানবাহন মাত্র মোটরসাইকেলসহ ৫৬টি। ২৩টি জেলায় নিরাময় কেন্দ্র নেই। এতো সংকট নিয়ে কাজ করা খুবই সমস্যা। তবে জনবল ৮ হাজার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি হলে একটু স্বস্তি ফিরে আসবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কারা মহাপরিদর্শক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, দেশটাকে অশান্ত করে দিচ্ছে একমাত্র মাদক। কারাগারে বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার বন্দি আছে। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজারের মতো বন্দির কেউ মাদকাসক্ত আবার কেউ মাদক বহনের সঙ্গে যুক্ত। মাদকের ফলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। ছেলে মেয়েদের বড় করতে অভিভাবকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কাজেই মাদককে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুন্সী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্য ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম।
সারাবাংলা/ইউজে/একে