মেঘ-কাশফুলে শুভ্র মায়াবী পুনর্ভবা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:৩৩
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
দিনাজপুর: বরষার রিনিঝিনি শেষে শরতের আবির্ভাব ঘটে বাংলার বুকে। নদী তীরে সে শরৎ ধরা দেয় শুভ্র কাশবনে। তবে পঞ্জিকার নিয়ম মেনে শরৎ আসার দিন হয়তো এখন আর নেই। তবে কাশফুল ঠিকই ফুটছে নদী তীর-বালুকাবেলায়। সেইসঙ্গে আশ্বিনের মাঝামাঝি এসে আসমানও সেজেছে শরতের রঙে। নদীর বুকে রঙিন পালের নৌকায় বসে আকাশের সে সৌন্দর্য হয়তো উপভোগ করা যাবে না। তবে নদী তীরে বসে শুভ্র মেঘের দিকে তাকিয়ে ঠিকই ডুবে থাকা যাবে শরতের রূপের ভেতর। উত্তর জনপদের পূর্ণভবা নদী তীরের জনপদ আপনাকে শরতের এমন প্রকৃতিই দেখাবে।
‘শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি। শরৎ, তোমার শিশির-ধোওয়া কুন্তলে- বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি।’
মায়াবী নদী পুনর্ভবার বুকে মাঝি বেঁধে রেখেছে তার পালহীন নৌকা। কাটফাটা রোদের দিনে গরমের কমতি নেই। তবে দুপুর পেরিয়ে বিকেলে হতেই গাঢ় নীল আকাশের বুকে জমাট বেঁধেছে সাদা মেঘের দল। আকাশে নীল-সাদার খেলা মুখ তুলে দেখছে আর হালকা হাওয়ায় দোলা খাচ্ছে পুনর্ভবা নদীর ধারে জেগে উঠা সাদা বালু চরে দাঁড়িয়ে থাকা ফুটন্ত কাশফুলেরা। গুচ্ছ গুচ্ছ দলে ভাগ হয়ে কাশফুলেরাওউপরের দিকে মুখ তুলে যেন গাইছে শরতের গান। দেখে যেন মনে হচ্ছে শরৎ দুলছে কাশফুলে। এ যেন নীল আকাশ ও কাশফুলের প্রাকৃতিক সম্পর্কের ঋতু শরৎ।
রূপবৈচিত্র থেকে প্রতিটি ঋতু স্বমহিমায় উজ্জ্বল হলেও শরৎকে প্রকৃতি অধিক শান্ত-স্নিগ্ধ-মায়াময় করে গড়ে তুলেছে। প্রকৃতিপ্রেমী কবিদের কবিতায় প্রমাণ মেলে শরৎ কত মায়াবী। সদ্যবিদায়ী অঝোর বর্ষা জলে প্রকৃতি বৃষ্টি জলে ধোয়া নির্মল শিশুর মতোই স্বচ্ছ। আর এই শরতে প্রকৃতির এই অপরুপ দৃশ্য উপভোগ করতে নদীর ধারে জেগে ওঠা বালুর চরে ছুটছে মানুষেরা। বিশেষ করে শরতের বিকেলে মনকে প্রফুল্ল করতে কাশফুলের নরম ছোঁয়া পেতে ছুটে আসছেন তারা।
বর্তমানে দিনাজপুর জেলার প্রায় সবকটি নদীর ধারেই এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। জেলার নদী গুলো ছাড়াও বড় দিঘি, ক্যানেলজুড়ে দেখা যায় কাশফুলের দল।
দিনাজপুর সদর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গা পুনর্ভবা নদীর তীরে পরন্ত বিকেলে কাশফুলের ছোঁয়া নিতে আসা শহরের দক্ষিণ বালুবাড়ী এলাকার মো. স্বাধীন আহমেদ সুমন সারাবাংলাকে বলেন, সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততায় ক্লান্ত শরীর ও মনকে একটু আনন্দ দিতে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে একটু হারাতেই এসেছি। আসলে শরতের বিকেলে নীল আকাশে সাদা মেঘের খেলা আর হালকা দখিনা হাওয়ায় দোলতে থাকা কাশফুলের চিত্র যেন প্রকৃতি আরও বেশি যত্নে তৈরি করেছে। কাশফুল বেশি দিন থাকে না। তাই যে কদিন এমন সময় যায় প্রায় প্রতিদিনই আসার চেষ্টা করি। আর শুক্রবারটা থাকে ছুটির দিন। চেষ্টা করি এদিন সপরিবারে আসি।
চিরিরবন্দর উপজেলার আত্রাই নদীতে এমন চিত্র দেখতে আসা ফরিদ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, শরতের এমন চিত্র উপভোগ করার মজাই আলাদা। চারপাশে তীব্র ভ্যাপসা অসহনীয় গরম। এখানে এলে অনেকটা স্বস্তিতে থাকা যায়। অনেকেই সপরিবারে নদীর ধারে বেড়াতে আসেন। শরতের এই সময়গুলোতে কাশবন এলাকায় বেড়াতে আসা সাধারণ মানুষের জন্য প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সারাবাংলা/এমএস/টিআর