দুই মাসে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি ৩৬৫ ডেঙ্গু রোগী, ৩ জনের মৃত্যু
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:৫৭
।। সোহেল রানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: নিপা আক্তার, রামপুরার বনশ্রীর একটি কলেজে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। সেখানকার একটি মেসে থাকেন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।
নিপা জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর তার জ্বর আসে। এর তিন দিনের মাথায় মেডিকেল পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার ডেঙ্গু হয়েছে। এরপর থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। একই হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিচ্ছেন চাঁদপুর থেকে আসা নুরজাহান বেগম।
তিনি জানান, গত মঙ্গলবার থেকে তার জ্বর, সঙ্গে পুরো শরীর ব্যথা। গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে তিনি ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষার পর জানা যায়, তিনি ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র বণিক বলেন, ডেঙ্গু রোগী গত বছরের তুলনায় এবার বেশি। তবে আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের তুলনায় বড়দের সংখ্যাই বেশি।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু হলে সাধারণত তীব্র জ্বর এবং সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। শরীরে বিশেষ করে কোমর, পিঠ, অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয় ডেঙ্গু জ্বরে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের আরও কিছু লক্ষণ আছে। এতে রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করেন, খাওয়ার রুচি কমে যায়। অন্য সমস্যার পাশাপাশি যদি শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়তে পারে। চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত থেকে, কফের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে, রক্ত বমি হতে পারে, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা হতে পারে, চোখে রক্ত আসতে পারে। এই রোগে অনেক সময় বুকে-পেটে পানি জমতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। সাধারণত ডেঙ্গু আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী, সাধারণ চিকিৎসা যথেষ্ট। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে। যাতে ডেঙ্গুজনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি না হয়। ডেঙ্গু আসলে গোলমেলে রোগ, সাধারণত লক্ষণ বুঝেই চিকিৎসা দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হয়, বলেন ডা. গোবিন্দ চন্দ্র বণিক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২ মাসে ৩৬৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৩১৯ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। তবে শিশুসহ মারা যায় ৩ জন। বর্তমানে ৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, এবার ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ একটু বেশি। তবে এখন কিছুটা কমে গেছে। হাসপাতালে এক শিশুসহ তিনজন মারা গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর হাসপাতাল থেকে আলাদাভাবে তাদের সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোগীদের জন্য আলাদা রেজিস্ট্রি খাতা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে শুধু ডেঙ্গু রোগীদের তালিকা করা হয়েছে। গেল দুই মাসে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন গ্যান্ডারিয়ার আমিনা (৫) ও আরজিনা বেগম (৪০) এবং মুন্সিগঞ্জের আব্দুর রশিদ (৫০)। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হয়। মুখে খেতে না পারলে স্যালাইন দেওয়া হয়। জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথার ওষুধই যথেষ্ট। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে এসপারিন বা ডাইক্লোফেনাক- জাতীয় ব্যথার ওষুধ কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়বে। জ্বর কমাতে বারবার ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছে দিতে হবে।
ডা. গোবিন্দ বলেন, সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের মূলমন্ত্র হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ। এই মশা যেন কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে এরা ডিম পাড়ে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে। একই সঙ্গে মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বাড়ির আশপাশের ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন বস্তুর মধ্যে ডিম পাড়ে, যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে। তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোলা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে।
সারাবাংলা/জেডএফ/এটি