এমএনপি যুগে বাংলাদেশ, নম্বর অপরিবর্তিত রেখে কথা বলার সুবিধা
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২৩:২৬
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: বহুল প্রতীক্ষিত মোবাইল নম্বর পোর্টেবেলিটি বা এমএনপি সেবা সেবা চালু হচ্ছে রাতে। তবে নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের এ সেবা গ্রাহকেরা পাবেন সকাল থেকে।
নতুন এই সেবা চালু করতে এরই মধ্যে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান, মুঠোফোন অপারেটসহ সংশ্লিষ্টরা তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। অপেক্ষা এখন টেলিযোগাযোগখাতে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার।
বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাত ১২ টা থেকে এমএনপি সেবা চালু হচ্ছে। এক্ষেত্রে টেলিটক ও বিটিসিএল সবার চেয়ে এগিয়ে আছে। সেবাটি চালু হলে টেলিযোগাযোগ খাতে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।’
সেবা চালুর সব প্রস্তুতি শেষ করেছে লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন টেলিটেক বিডিও। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাবরুর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। গত কয়েকদিন ধরেই আমরা পরীক্ষা চালিয়ে আসছি। রাত ১২ টা থেকে এনএনপি সেবা চালু হবে। আর গ্রাহকরা সকাল থেকে এ সেবা পাবেন।’
বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া উইং) জাকির হোসেন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিটিআরসির পক্ষ থেকে আমরা সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। মোবাইল অপারেটরসহ অন্যান্য সবাই তাদের প্রস্তুতি শেষ করেছে। সোমবার (১ অক্টোবর) সকালে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হবে।’
এমএনপি সেবা ॥ নম্বর পরিবর্তন না করে অন্য অপারেটরের সেবা নেওয়ার সুযোগই মোবাইল নম্বর পোর্টেবেলিটি বা এমএনপি সেবা। এর ফলে এখন থেকে মোবাইল গ্রাহকেরা তাদের প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো মোবাইল কোম্পানির সেবা নিতে পারবেন। কোনো কোম্পানির সেবায় সন্তুষ্ট না হলে নম্বর অপরিবর্তিত রেখে নিতে পারবেন অন্য অপারেটরের সেবা। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নতুন এই সেবা চালু হওয়ার পর কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে সেবার মানও।
এ প্রসঙ্গে টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শাহজাহান মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সেবা চালু আছে। এমএনপি সেবা চালু করতে এর আগে সব অপারেটরে একই কলরেট চালু করা হয়েছে। সেবাটি চালু করতে গিয়ে নানা ধরনের বেগ পোহাতে হয়েছে। মুঠোফোন অপারেটগুলো তা বারবার বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত সরকারের প্রচণ্ড চাপ ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে এ সেবা চালু হচ্ছে। এতে গ্রাহকরা অনেক উপকৃত হবেন। কারণ সে তার পূর্বের নম্বরটি ব্যবহার করেই ভিন্ন ভিন্ন অপারেটরের সেবা নিতে পারবেন।’
গত বুধবার, ১ অক্টোবর থেকে এমএনপি সেবা চালুর ঘোষণা দেয় বিটিআরসি। লাইসেন্স গ্রহণের পর নির্ধারিত সময় ৩০ মে’র মধ্যে এমএনপি চালুর কথা থাকলেও মোবাইল অপারেটরগুলো প্রস্তুত না হওয়ায় সেবাটি গ্রাহকের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তারও আগে, সেবাটি চালু করতে কয়েক দফা সময় পেছানো হয়।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর এমএনপি সেবার জন্য ইনফোজিলিয়নের কাছে লাইসেন্স হস্তান্তর করে বিটিআরসি। এর আগে বিটিআরসি বাংলাদেশ ও স্লোভেনিয়ার যৌথ কনসোর্টিয়াম ইনফোজিলিয়ান বিডি-টেলিটেক’কে নোটিফিকেশনপত্র বা অনুমতিপত্র দেয় ৭ নভেম্বর। লাইসেন্সপ্রাপ্তির পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে দেশের মোবাইল গ্রাহকদের মধ্যে কমপক্ষে ১ শতাংশ, এক বছরের মধ্যে ৫ শতাংশ এবং পাঁচ বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ রোল আউট বাস্তবায়ন করা কথা।
গ্রাহককে এ সেবা পেতে হলে নির্দিষ্ট ফি প্রদান ও পুরোনো সিম বদল করে নতুন সিম নিতে হবে। আগে এই ফি ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। পূর্বের নির্দেশনা অনুযায়ী, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেবা চালু হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে গ্রাহক আর অপারেটর পরিবর্তন করতে পারবেন না। এমএনপি সেবা নিতে হলে গ্রাহককে সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোনের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে যেতে হবে। সেখানে ৫০ টাকা চার্জ পরিশোধের পর পুরনো সিম বদল করে নতুন সিম নিতে হবে। এ ছাড়া গ্রাহক যে অপারেটরের কাছে যাবে সেই অপারেটরকে দিতে হবে ১০০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০ টাকা। তবে এ টাকা গুনতে হবে অপারেটরকে।
গ্রাহকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন বলেন, ‘এ ধরনের সেবা খুব একটা লাভজনক হবে না। কারণ গ্রাহকের ৯৯ ভাগই এমএনপি সেবা সম্পর্কে সচেতন নয়। আবার অপারেটর পরিবর্তন করে অন্য অপারেটরে গেলে ৯০ দিনের মধ্যে আর অপারেটর পরিবর্তন করা যাবে না। এতে অপারেটর পরিবর্তনের খুব একটা সুফল গ্রাহকেরা পাবে না।’
‘এমএনপি সেবা চালুর আগেই খরচ ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আগে ৩০ টাকা থাকলেও সেটা এখন ৫০ টাকা করা হয়েছে। সঙ্গে আছে ভ্যাট। এছাড়া আরেক অপারেটরে গেলে ১০০ টাকা দিতে হবে। যদিও বলা হচ্ছে, অপারেটরা দিবে কিন্তু আমাদের আশঙ্কা তা বিভিন্নভাবে গ্রাহকের কাছ থেকে উঠিয়ে নেয়া হবে’ বলেন মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে