ক্যাম্পাস না পার্কিং প্লেস!
৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:৩৯
।। জগেশ রায়, জবি করেসপন্ডেন্ট ।।
জবি: মাত্র সাড়ে ৭ একর আয়তনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাস। প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য জায়গা একেবারেই অপ্রতুল। তারপরও যতটুকু খোলা জায়গা ছিলো তাও ক্রমে সংকুচিত হয়ে আসছে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, মূল গেট দিয়ে প্রবেশের পর হঠাৎ যে কারও মনে হবে এটা ‘ক্যাম্পাস না পার্কিং প্লেস’!
জানা গেছে, নতুন একাডেমিক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে পানি জমে থাকার কারণে কোনো গাড়ি পার্কিং সম্ভব হচ্ছে না। অন্যত্র পার্কিং করার জায়গা থাকলেও প্রশাসন তা সংস্কারের কোনো উদ্যাগ নেয়নি। ফলে ক্যাম্পাসে ইচ্ছামতো যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। পার্কিং সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কয়েক দফা আলোচনা করলেও কোনো সমাধান মেলেনি।
পরিবহন প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহনের সংখ্যা ৩২টি। সব পরিবহন ক্যাম্পাসের ভেতরেই পার্কিং করা হয়। এছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষক নিজস্ব প্রাইভেট কার নিয়েই ক্যাম্পাসে আসেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের চত্বর জুড়ে প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে গাড়ি পার্কিং। নতুন একাডেমিক ভবন ঊর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণের জন্য ২য় গেট সংলগ্ন অধিকাংশ জায়গা উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। অস্থায়ী ভবন নির্মাণ করে কর্মচারীদের বসবাস জায়গা করা হয়েছে সেখানে।
অন্যদিকে, নতুন একাডেমিক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর পার্কিংয়ে পানি জমে রয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বর, শহীদ মিনারের আশপাশ, ক্যান্টিনের সামনে, কলা অনুষদের কাঁঠাল তলায় গাড়ি পার্কিং করছেন শিক্ষকরা।
আবার অনেক শিক্ষার্থী মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। পার্কিংয়ের নিদির্ষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় ভাস্কর্য চত্বর ঘিরে এলোমেলোভাবে মোটরসাইকেল পার্কিং করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের পরিবহনে বিআরটিসি থেকে ভাড়া করা ১২টি ডাবল ডেকার সদরঘাট-বাহাদুর শাহ পার্ক সংলগ্ন সড়কে রাখছেন। ফলে ক্যাম্পাসের পুরো এলাকায় পরিণত হয়েছে পার্কিং প্লেসে।
উত্তরা থেকে প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসে আসা ফারুক ইসলাম বলেন, ‘বাসা দূরে হওয়ায় সারাদিন ক্যাম্পাসে থাকতে হয়। ক্যাম্পাসে সব জায়গায় পার্কিং করার ফলে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জায়গা পাওয়া যায় না। ছোট এই ক্যাম্পাসকে পরিকল্পিত ভাবে গোছালে এই সমস্যা সমাধান করতে পারে প্রশাসন।’
মিরপুর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করা সামসুন নাহার বলেন, ‘বিশ্ববদ্যালয় হওয়া দরকার খোলামেলা পরিবেশের। যেন আমরা সহজভাবে চলাফেরা করতে পারি । কিন্তু এলোমোলো গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে পুরো ক্যাম্পাসে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছোট ক্যাম্পাসে গাড়ি পার্কিং নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে । করণীয় কোনো উপায় পাচ্ছি না। আমাদের গাড়িগুলো বাইরে রাখা নিরাপদ না।’
নতুন ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরের কথা বললে তিনি বলেন, ‘কিছু গাড়ি সেখানে রাখা যায়, কিন্তু জায়গাটার কিছু সংস্কার করা দরকার। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং শাখাতে সংস্কারের জন্য চিঠি দিয়েছি। এখনো কোনো উত্তর পাইনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ধূপখোলা মাঠে একবার গাড়ি পার্কিং করার কথা ভেবেছিলাম কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে একটু দূর আর রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম থাকার কারনে সেটা করা হয়নি। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে আবার পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।’
সারাবাংলা/জেআর/এমও