ঝুঁকির মুখে সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের তথ্য
৭ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:১৮
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) সংরক্ষিত ভোটারদের যাবতীয় তথ্য সম্বলিত দুটি ডাটা সেন্টারের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ না হওয়া, কিছু যন্ত্রপাতি বিকল ও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটারের তথ্যসহ যাবতীয় ডাটাবেজ।
সম্প্রতি ইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কমিশনের ডাটা সেন্টার স্থানান্তর ও কৌশল গ্রহণ সংক্রান্ত এক সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সভায় কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ভোটার তালিকা ও ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ তথ্য সংরক্ষণে তথ্য সংরক্ষণাগার (ডিসি) এবং ব্যাকআপ তথ্য সংরক্ষণাগার (ডিআরএস) নামে দুটি ডাটা সেন্টার পরিচালনা করে ইসি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)’তে ডিআরএস ডাটা সেন্টার ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) ভবনে ডিসি ডাটা সেন্টারটি স্থাপিত আছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসির সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই সভায় ডাটা সেন্টার দুটিতে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যাগুলোর মধ্যে উঠে এসেছে—বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে থাকা ডিআরএস ডাটা সেন্টারটির স্টোরেজ পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। স্টোরেজ পূর্ণ হওয়ায় ডিসি ও ডিআরএস-এর মধ্যে রিয়েল টাইম সিনক্রোনাইজেশন বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে ইসলামি ফাউন্ডেশন ভবনে স্থাপিত ডিএস ডাটা সেন্টারে ৫টি সমস্য দেখা দিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে—ডাটা সেন্টারে ব্যবহ্যত সকল হার্ডওয়্যার, সার্ভার এবং অনান্য ইকুইপমেন্টের (এসি এবং ইউপিএস) লাইফ টাইম (মেয়াদ) শেষ হয়ে গেছে। বিদ্যমান জেনারেটরের ব্যাকআপ পর্যাপ্ত না থাকায় যে কোনো মুর্হূতে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ওরাকল এক্সডাটা মেশিনের আটটি ডাটাবেজের সার্ভারের মধ্যে তিনটি ক্রিটিক্যাল ওয়ার্নিং (বিপদ সংকেত) দিচ্ছে।
এ ছাড়াও ১৪টি স্টোরেজ সার্ভারের ৫৫টি ফ্ল্যাশ ড্রাইভের মধ্যে ৯টি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ বিকল হয়ে গেছে। এতে করে ডাটাবেজের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। ডাটা সেন্টারটি পরিকল্পনা মাফিক তৈরি না হওয়ায় এখানে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের ডাটা সেন্টারটির ফ্লোরে বিভিন্ন প্রকল্পের মালামাল ও বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ থাকায় এটি অত্যান্ত ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে নতুন প্রজন্মের ৭ লাখ ভোটার হবেন ‘জয়-পরাজয়ের’ নিয়ামক
এ ব্যাপারে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ডাটা সেন্টার দুটিতে বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করলেও সেগুলো ধবংস বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে সারাবাংলাকে বলেন, বিসিসি ভবনে যে ডাটা সেন্টারটি রয়েছে সেটি ডিজাস্টার সেন্টার। অর্থাৎ কোনো কারণে যদি ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) ভবনে থাকা ডাটা সেন্টারটি ভূমিকম্প, অগ্নিসংযোগ বা অন্য কোনো কারণে অকেজো হয়ে যায় তখন বিসিসির ডাটা সেন্টারটি ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিসিসির ডাটা সেন্টারটি সিনক্রোনাইজেশন হচ্ছে না। এই অবস্থায় নতুন করে আরও কিছু যন্ত্রপাতি সংযোজন করলে সিনক্রোনাইজেশন হবে বলে আশা করছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের ডিসি ডাটা সেন্টারের যন্ত্রপাতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াসহ বেশ কিছু সমস্য দেখা দিয়েছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ইফা ভবনে ডাটা সেন্টারটি ২০০৮ সালে বসানো হয়, তখন ভোটার সংখ্যা ছিল ৮ কোটি। বর্তমানে তা ২ কোটি ৪১ লাখ বেড়ে ১০ কোটি ৪১ লাখ হয়েছে।
ডাটা সেন্টারের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ডাটা সেন্টারটি অলমোস্ট ফুল হয়ে গেছে। এটি সম্প্রসারণ করতে আমাদের অধুনিক কিছু যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করে সেন্টার দুটির অাপগ্রেড করা হবে।
ইসির কার্যবিবরণী সভা থেকে জানা যায়, ইফা ভবনে থাকা ডিসি ডাটা সেন্টারটির যন্ত্র্রপাতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া, জেনারেটরের ব্যাকআপ না থাকা এবং অনেক যন্ত্রপাতি বিকল হওয়ায় এটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ফলে ইসির দুটি ডাটা সেন্টারেই ক্রটি দেখা দেওয়ায় তথ্য ভাণ্ডারে সংরক্ষিত ভোটার তালিকা ও ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ ধবংসের আংশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে সামনে জাতীয় নির্বাচনের আগে এগুলো সংস্কার কাজ করতে পারছে না কমিশন।
সমস্যা সমাধানে কার্যবিবরণী সভায় বেশ কিছু সমাধানের কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সেগুলোর মধ্যে আছে— ১. নির্বাচন কমিশন ভবনে জরুরি ভিত্তিতে ডাটা সেন্টার স্থাপনে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ। ২. ডিআরএস ও ডিসির মধ্যে সিনক্রোনাইজেশন করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাটা ব্যাকআপ নেওয়া। একইসঙ্গে বিসিসিতে থাকা ডিআরএস দ্রুত সময়ের মধ্যে আপগ্রেড করে মূল ডাটা সেন্টারের সঙ্গে রিয়েল টাইাম সিনক্রোনাইজেশনের ব্যবস্থা করা। ৩. বিশেষায়িত টিম বা কনসালটেন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে ডাটা সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বিশ্লেষণ এবং ডকুমেন্টেশন যেমন ডিসি মাইগ্রেশন প্ল্যান, রিস্ক এনালাইসিস ইত্যাদি প্রস্তুত করা। ৪. টেকনিক্যাল সাব কমিটি গঠন করে, কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ডকুমেন্টেশন যাচাই করা। ৫. ইফার ডাটা সেন্টারে ব্যবহৃত এসি, ইউপিএস, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির সাপোর্ট সার্ভিস ও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) করা। অগ্নি-নির্বাপনে ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া। ৬. নতুন যন্ত্রপাতি কিনতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক বরাদ্দ পেতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
উল্লেখ্য গত ৯ সেপ্টেম্বও অনুষ্ঠিত ইসির ডাটা সেন্টার স্থানান্তর ও কৌশল গ্রহণ সংক্রান্ত সভায় ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও প্রযুক্তিবিদ, ধর্ম মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), বিসিসি, আইটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সারাবাংলা/জিএস/এমআই