চিকিৎসক নেই, সখীপুরে জরুরি প্রসূতিসেবা বন্ধ
৮ অক্টোবর ২০১৮ ১১:০২
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় দেড় মাস ধরে গাইনি চিকিৎসক নেই। এ কারণে এই হাসপাতালে জরুরি প্রসূতিসেবা ও জটিল রোগীদের অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। এতে করে ৫০ শয্যার ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে জরুরি প্রসূতি মা ও মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার প্রকল্পের (ডিএসএফ) আওতায় গরিব কার্ডধারী রোগীরা বিনামূল্যে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) তাজমিরা সুলতানা সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। তিনি ঢাকা থেকে সপ্তাহে তিন দিন হাসপাতালে আসতেন। গত ১৯ আগস্ট তিনি হঠাৎ করেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হন। এরপর থেকে গাইনি বিভাগের চিকিৎসক না থাকায় জরুরি প্রসূতি মায়েদের সব ধরনের সেবা ও অস্ত্রোপচার বন্ধ হয়ে যায়।
হাসপাতালের হিসাব সহকারী কাম অফিস সহকারী মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ব্রিটিশ সরকারের অর্থায়নে সখীপুর হাসপাতালে ১৩ বছর ধরে মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার প্রকল্প (ডিএসএফ) চালু আছে। এই প্রকল্পের আওতায় কার্ডধারী একজন গরীব ও অসহায় প্রসূতি মা হাসপাতালে সাধারণ প্রসব হলে ৫০০ টাকা ও অস্ত্রোপচারের জন্য দুই হাজার টাকা ফি দেন। এছাড়া অস্ত্রোপচারের সব ধরনের ওষুধ, প্রসবের আগে হাসপাতালে চিকিৎসকের সেবা নিতে আসা ভাড়া বাবদ ১০০ টাকা করে পাঁচবারে ৫০০ টাকা, শিশু খাদ্য, কাপড়-চোপড়সহ নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ প্রসব ও অস্ত্রোপচার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কার্ডধারী মায়েরা স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিকে টাকা খরচ করে অস্ত্রোপচার করাতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলার কাকড়াজান গ্রামের ভ্যানচালক জসীম উদ্দিন তার স্ত্রীর জন্য ওই প্রকল্পের কার্ড করেছেন। গত সপ্তাহে তার স্ত্রী প্রসবকালীন ব্যথা উঠলে তাকে দ্রুত সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। কিন্তু এসময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা গাইনি চিকিৎসক নেই জানিয়ে দিলে বাধ্য হয়ে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে স্ত্রীকে ভর্তি করান। পরে ক্লিনিকেই অস্ত্রোপচার হয় ওই ভ্যানচালকের স্ত্রী।
জসীম উদ্দিন জানান, হাসপাতালে প্রসব করালে আমি উল্টো টাকা পেতাম। কিন্তু ক্লিনিকে করানোর কারণে অপারেশন বাবদ আট হাজার, ওষুধ বাবদ ছয় হাজারসহ সব মিলিয়ে ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ওই টাকা আমাকে স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে জোগাতে হয়েছে।
হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ সেবিকা শিরিন আক্তার জানান, গাইনি চিকিৎসক থাকলে মাসে কমপক্ষে ৫০ জনকে সাধারণ প্রসব ও কমপক্ষে ৩০ জনের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হতো। কিন্তু চিকিৎসক চলে যাওয়ায় দেড় মাস ধরে সাধারণ প্রসব কয়েকটি হলেও অস্ত্রোপচার একবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, মহাপরিচালকের দফতর থেকে আসা গাইনি চিকিৎসক তাজমিরা সুলতানার বদলির পরিপত্রে আরেকজন গাইনি চিকিৎসক দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে এ হাসপাতালে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি টাঙ্গাইল সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরে জানানো হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই গাইনি চিকিৎসক পাওয়া যাবে।
সারাবাংলা/এমএইচ/জেডএফ
আরও পড়ুন
চিকিৎসকরা উপজেলায় না থাকলে মানুষ সেবা পাবে কীভাবে