প্লাস্টিক থেকে জ্বালানি: ডিজেলের দাম পড়বে ২০ টাকা লিটার
৮ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৩১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: প্লাষ্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য থেকে জ্বালানি, এলপিজি গ্যাস ও অ্যাভিয়েশন বা জেট ফুয়েল উৎপাদনের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে দুইজন গবেষক জানালেন এক টন বর্জ্য থেকে ১৩০০ লিটার ডিজেল, ১০ সিলিন্ডার এলপি গ্যাস এবং ২৩ লিটার অ্যাভিয়েশন বা জেট ফুয়েল উৎপাদন করা সম্ভব। সরকার এ কাজে সহায়তা করলে জ্বালানিখাতে ঘটে যেতে পারে বিপ্লব। যা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।
সোমবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথাই বললেন দুই উদ্ভাবক ড. মইনউদ্দিন সরকার ও ড. আনজুমান সেলী।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষক ড. মইনউদ্দিন বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার বাড়ছে। বাড়ছে প্লাস্টিক বর্জ্য। এগুলো আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এতে মাটি উর্বরতা হারাচ্ছে। ড্রেনের পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা রোধ হয়ে মশা মাছির প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে। শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। মোটকথা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে প্লাস্টিক ও পলিথিন পণ্য।
তিনি জানান, ‘শুধু আমেরিকাতেই প্রতি বছর ৮০ বিলিয়ন পাউন্ড প্লাস্টিক উৎপাদন হয় যার মাত্র ৬ শতাংশ অর্থাৎ চার দশমিক আট (৪.৮) বিলিয়ন পাউন্ড পূণঃপ্রক্রিয়াজাত করা হয়। আমাদের জানামতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৮ মিলিয়ন মেট্রিকটন মিউনিসিপ্যাল সলিড ওয়াস্ট (এমএস ডব্লিউ) বর্জ্য উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে ১৫ শতাংশই প্লাস্টিক অর্থাৎ ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন প্লাস্টিক। যার মাত্র ১০ শতাংশ পূণঃপ্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হয়। ১৯৫০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সারাবিশ্বে প্রায় ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছে যার মাত্র ৯ শতাংশ পূণঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ সক্ষম হয়েছে।’
‘২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন টন বর্জ্যপ্লাস্টিক সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। যা প্রায় ৭০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তাই বর্জ্য প্লাস্টিকের সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০৫ সাল থেকে আমি ও আমার সহকর্মী ড. আনজুমান সেলী গবেষণা শুরু করি এবং ২০১০ সালে প্লাস্টিক থেকে তেল উৎপাদনের একটি প্রযুক্তি ও তার পেটেন্ট তৈরি করি। যা নবায়ন যোগ্য শক্তি, যুক্ত-রাষ্ট্রের দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা প্রযুক্তি গুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রায় দুই দশক গবেষণার পর আমরা সাফল্যের সঙ্গে একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে সক্ষম হই , যার প্রতি টন পরিত্যাক্ত প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য থেকে ১৩০০ লিটার জ্বালানী তেল, ১০ সিলিন্ডার এল পি জি গ্যাস, এবং ২৩ লিটার জেট ফুয়েল উৎপাদন করা সম্ভব।’
তিনি জানান, প্লাস্টিক বর্জ থেকে জ্বালানি তৈরির প্রকল্প হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন ইতোমধ্যে। যার নাম ওয়েস্ট টেকনোলজি এলএলসি (Waste technologies LLC)। বাংলাদেশেও এ ধরনের প্লান্ট করতে স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে তার কোম্পানি।
ড. মইনউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে এই কেন্দ্র স্থাপন হলে একাধারে যেমন দেশকে ক্ষতিকারক প্লাস্টিকের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে, তেমনি দেশের স্বল্পশিক্ষিত থেকে শুরু করে শিক্ষিত যুবকদের ব্যাপক কর্মসংস্থান ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। দেশ অর্জন করতে পারবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো সক্ষম হবে। বাংলাদেশকে এশিয়ার বর্জ্য প্লাস্টিক পূনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে দেশের আলাদা একটি জায়গা করতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশে একটি প্লান্ট স্থাপন করতে ইতোমধ্যে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারাও এটিকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করে সার্বিক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মাধ্যমে এ আবিষ্কারকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
সারাবাংলা/এমএস/এমআই