‘বিচারহীনতায় বাড়ছে যৌন নিপীড়ন’
৮ অক্টোবর ২০১৮ ২৩:১০
।। জবি করেসপন্ডেন্ট ।।
বিচারহীনতার কারণেই যৌন নিপীড়নের হার বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতারা। তারা বলছেন, যৌন নিপীড়নের জন্য দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি না দিতে পারলে এ ধরনের ঘটনা কমানো যাবে না। তাই যৌন নিপীড়কদের বিরুদ্ধে পারিবারিক-সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আহ্বানে মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচি শিল্পগোষ্ঠীর ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে মহিলা পরিষদের নেতারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধান ফটকের সামনে উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে মহিলা পরিষদের আহ্বানে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সারাবান তহুরা বলেন, দোষীরা ছাড়া পাওয়ায় যৌন নিপীড়নের প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে।
সূত্রাপুর থানা উদীচির সহসভাপতি আবু তাহের বকুল বলেন, শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এমন অনেকে রয়েছে যাদের কাছে নারীরা নিরাপদ নয়। তাদের বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থীদেরই প্রতিবাদ করতে হবে।
তিনি বলেন, যৌন নিপীড়কদের শাস্তির আওতায় আনতে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে না পারলে যৌন নিপীড়ন রোধ করা যাবে না। বিচারহীনতা যেন যৌন নিপীড়নকে বাড়িয়ে দিতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পষিদের লিগ্যাল এইড ইউনিটের পরিচালক অ্যাডভোকেট মাকসুদা আক্তার বলেন, যারা যৌন নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত তাদের সামাজিকভাবে ও পারিবারিকভাবে বয়কট করতে হবে। কারণ মানুষ তার জীবনের সব ধরনের শিক্ষার ভিত্তি পায় সমাজ ও পরিবার থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী যখন এমন সংকীর্ণ মনের পরিচয় দেয়, সেটা হতাশাজনক। তাদের বিরুদ্ধেও জোরালো ব্যবস্থা নিতে হবে। পকেট কমিটি করে সাজা দেওয়ার নামে ছেড়ে দিলে হবে না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করে আমাদের নিজেদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার যুদ্ধ করি। তখন সামান্য দুয়েকজনের জন্য যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মানসম্মান ধুলায় লুটায়, সেটা মেনে নেওয়াটা কষ্টের। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও যারা নারীদের সম্মান করতে জানে না, যারা নারীদের নিপীড়ন করে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর হতে হবে।
এসময় তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দ্বারা নারী শিক্ষার্থীদের লাঞ্চিত হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, এমন শিক্ষকের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচার হয় না, এমন শিক্ষক যে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই বা কী শিখতে পারে?
মানবন্ধন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু একজন নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনায় কঠিন সাজা দাবি করে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক কানিজ ফাতেমা টগর। তিনি বলেন, একজন মেয়ে সুদূর দিনাজপুর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে যৌন নির্যাতনের শিকার হলেন। কিন্তু থানায় মামলা করার সাহস তো সে রাখে না। তাছাড়া সে ভর্তি পরীক্ষাই দেবে, নাকি মামলা করবে? প্রশাসনের উচিত নিজেরা তদন্ত করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা।
উল্লেখ্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা এক নারী শিক্ষার্থীকে ‘যৌন হয়রানি’ করার অভিযোগে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় কোতয়ালি থানা থেকে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর