পাড়ার দুর্গাপূজায় নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধে হত্যাকাণ্ড
১২ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৪৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাড়ার দুর্গাপূজার কমিটিতে নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হয়েছেন পূজা উদযাপন পরিষদ নেতা বিশু কুমার ধর। একই পাড়ার সংগঠক শিমুল ধর বাবু (৩০) নামে এক যুবক তাকে ছুরিকাঘাত করেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) রাতে হত্যাকাণ্ডের পর শিমুল ধর বাবুকে গ্রেফতার করেছে নগরীর পাহাড়তলী থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে শিমুল এই স্বীকারোক্তিমূলক তথ্য দিয়েছেন বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে নগরীর পাহাড়তলী থানার সাগরিকা শিববাড়ি মোড়ে রাস্তায় বিশু কুমার ধরকে (২৮) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়। বিশু ছিলেন পাহাড়তলী থানা পূজা উদযাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক।
পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ সারাবাংলাকে জানান, নির্জন এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেখে ফেলেন স্থানীয় ১২ বছরের এক কিশোরী। তার দেওয়া ঘটনার বিবরণ অনুসারে রাতেই অভিযানে নামে পুলিশ। এর মধ্যে শিমুল পাহাড়তলী থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বিশু’র বন্ধু রাজীব কুমার ধরকে ফোন করে জানায়, বিশু ও শিমুলকে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছিল। কোনোভাবে পালিয়ে শিমুল প্রাণরক্ষা করেছে। বিশুকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।
‘রাজীব আমাদের এই তথ্য দেওয়ার পর শিমুলকেই আমাদের সন্দেহ হয়। এর মধ্যে ওই কিশোরীও আমাদের জানায় যে, একজন যুবক ছুরিকাঘাত করে বিশুকে খুন করতে সে দেখেছে। তার বর্ণনার সঙ্গে শিমুলের চেহারা-শরীরের গঠন মিলে যায়। শিমুলকে আমরা কৌশলে আটক করি। পরে ওই কিশোরীকে এনে শিমুলকে শনাক্ত করা হয়।’ বলেন ওসি
শিমুল ধর নগরীর পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী বণিকপাড়ার মৃত গোপাল কৃঞ্চ ধরের ছেলে। পাহাড়তলী বাজারে মুক্তা জুয়েলার্স নামে তার একটি স্বর্ণের দোকান আছে।
গ্রেফতারের পর থানায় নেওয়ার সময় শিমুল ধর সারাবাংলাকে জানান, দক্ষিণ কাট্টলী বণিকপাড়া পূজা কমিটির সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন রাজীব কুমার ধর। তার বন্ধু বিশু তাকে সভাপতি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। গত ঈদুল আযহার পর ওই পূজা কমিটি গঠনের সভা হয়। সেখানে শিমুলের আপত্তির মুখে রাজীবকে সভাপতি করা হয়নি। সভাপতি হন বিটু ধর। এতে রাজীব ও বিশু শিমুলের উপর ক্ষুব্ধ হন।
এরপর পাহাড়তলী থানা পূজা উদযাপন পরিষদের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন দুজন। একজন রাজীব কুমার ধর ও শিবু শীল। যথারীতি রাজীবের পক্ষে ছিলেন বিশু। আর শিবু’র পক্ষে ছিলেন শিমুল। সেখানে রাজীব সাধারণ সম্পাদক হন।
শিমুলের দাবি- মূলত বণিকপাড়া পূজা কমিটি নিয়েই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। বিশু সবসময় শিমুলকে এসব বিষয় নিয়ে বিরক্ত করত। কয়েকবার তাদের মধ্যে ঝগড়াও হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শিমুল ধর বলেন, ‘আমাদের বাড়ি নিয়ে আবুল খায়ের গ্রুপের সঙ্গে বিরোধ চলছে। সালিশ বৈঠকের জন্য আমি যাচ্ছিলাম। বিশুদা আমাকে বলেন-তিনিও যাবেন। আমি তাকে আনার জন্য সাগরিকা শিববাড়ির মোড়ে যাই। তিনি টিউশনি থেকে বের হন। সেখানে আবারও আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। তখন হাতাহাতিও হয়। আমি পকেট থেকে ছোরা বের করে তাকে আঘাত করি। পরে আমি সেখান থেকে পালিয়ে যাই।’
পাহাড়তলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্ণব বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে ছোরা দিয়ে বিশু কুমার ধরকে খুন করা হয়েছে সেটি তিনদিন আগে শিমুল বাজার থেকে কেনেন। এতে বোঝা যায়, হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত। শিমুল বিশুর গলায় ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। আমরা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করেছি।’
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজার আগে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারত। কারণ ঘটনাটিকে জঙ্গি হামলা বলে মনে করার সুযোগ ছিল। তবে আমরা দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারায় এই পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ নেই। এটি পূজার কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’
এদিকে বিশু কুমার ধরকে খুনের ঘটনায় তার বাবা মিলন কুমার ধর বাদী হয়ে নগরীর পাহাড়তলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন ওসি সদীপ কুমার দাশ।
সারাবাংলা/আরডি/এমএইচ