ইসি মাহবুব ‘নোট অব ডিসেন্টে’ যা লিখলেন
১৫ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:৫০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অংশীদারমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কতিপয় প্রস্তাবনা’ শিরোনামে লিখিত বক্তব্য কমিশন সভায় আলোচনা না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
সোমবার (১৫ অক্টোবর) সকাল সোয়া ১১টায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩৬তম প্রস্তুতি সভা শুরুর ৭ মিনিটের মাথায় নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বেরিয়েও যান মাহবুব তালুকদার।
নোট অব ডিসেন্টে তিনি লেখেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর আমি ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অংশীদারমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কতিপয় প্রস্তাবনা’ শিরোনামে আমার বক্তব্য আজকের নির্বাচন কমিশন সভায় উপস্থাপনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর একটি ইউও নোট পাঠাই। পরবর্তীতে এর একটি সংশোধনীও পাঠানো হয়। গত ৮ অক্টোবর কমিশন সচিবালয় থেকে ইউও নোটের মাধ্যমে আমাকে জানানো হয়, আমার প্রস্তাবনগুলো ১৫ অক্টোবর ৩৬তম কমিশন সভায় উপস্থাপন করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- ইভিএমের বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুবের সভা বর্জন
‘উল্লেখ্য যে, গত ৩১ জুলাই ২০১৭ থেকে ২৪ অক্টোবর ২০১৭ পর্যন্ত প্রায় ৩ মাসব্যাপী নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে। এতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অংশীজন ছাড়াও ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। সবার সংলাপ একত্রিত করে তা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হয়। তবে ওই সংলাপের বিষয়ে আজ পর্যন্ত কমিশন সভায় কোনো আলোচনা না হওয়ায় এবং সংলাপের কোনো কার্যকারিতা পরিলক্ষিত না হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে আমি এটি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং অংশীজনের সংলাপের আলোকে উপরোক্ত শিরোনামে প্রস্তাবনাগুলো লিপিবদ্ধ করে কমিশন সভায় পেশ করার জন্য কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানাই।’—, লিখেছেন মাহবুব তালুকদার।
মাহবুব তালুকদার লেখেন, আমার প্রস্তাবনাগুলো যাতে কমিশন সভায় উপস্থাপন করতে না দেওয়া হয়, এজন্য ৩ জন নির্বাচন কমিশনার এক ও অভিন্ন চিঠি লিখে আলাদা আলাদা ইউও নোটের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ জানান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের সঙ্গে একমত হওয়ায় আমাকে প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করতে দেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন সভায় আমার বক্তব্য উপস্থাপন করতে না দেওয়ায় তাদের অভিন্ন অবস্থান আমাকে বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে।
আরও পড়ুন- ‘নোট অব ডিসেন্টে’ যা লিখেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব
নিজেকে নিরুপায় উল্লেখ করে তিনি লেখেন, বাক প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত আমার মৌলিক অধিকার। নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই আমার এই অধিকার খর্ব করতে পারে না। এমতাবস্থায় আমি নির্বাচন কমিশনের এরূপ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিচ্ছি এবং এর প্রতিবাদস্মরূপ নির্বাচন কমিশন সভা বর্জন করছি।
মাহবুব তালুকদার যে পাঁচটি বিষয় নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনা করতে চেয়েছিলেন, সেগুলো হলো— আগের নির্বাচনগুলোতে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম মূল্যায়ন করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিভাবে তাদের ব্যবহার করা যায়, তা ঠিক করা; অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজন; নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য নির্বাচনের সময় সংসদ সদস্যদের নিষ্ক্রিয় রাখতে সরকারের সহযোগিতা; সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতা প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্বাচন কমিশনের আরও নিয়ন্ত্রণাধীন আনার উপায়; এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অন্যতম বড় অংশীজন সরকারের সঙ্গে নির্বাচনকালীন কিছু বিষয় নিয়ে সংলাপ।
সারাবাংলা/এটি