শেষ ইচ্ছা পূরণে বাংলাদেশেই সমাহিত হবেন ফাদার রিগন
২০ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:২৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা : দীর্ঘ চার বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে ফিরছেন মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ইতালির খ্রিষ্ট ধর্মযাজক ফাদার মারিনো রিগন। তবে এবার তিনি ফিরছেন কফিনবন্দী হয়ে।
মৃত্যুর পুরো এক বছর পর মোংলার শেলাবুনিয়া গির্জার পাশে সমাধিস্থ হতে উড়ে আসছেন ফাদার মারিনো রিগন। কারণ এটাই ছিল তার শেষ ইচ্ছা। ২০১৪ সালে এই ইচ্ছাপূরণের শর্তেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে চিকিৎসার স্বার্থে ইতালি গিয়েছিলেন এই যাজক।
মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা ও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া ইতালির ধর্মযাজক ফাদার মারিনো রিগনকে সমাধিস্থ করা হবে বাগেরহাট জেলার মোংলার শেলাবুনিয়ার সাধু পলের গির্জার পাশে।
শনিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে এক বার্তায় এই তথ্য জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বার্তায় বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদান রাখাসহ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ফাদার মারিনো রিগন ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর ইতালিতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আগামী ২১ অক্টোবর (রবিবার) ইতালি থেকে বাংলাদেশে রিগনের মরদেহ আনা হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ফাদার মারিনো রিগনের শেষ ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর যেন তাকে বাংলাদেশের মাটিতেই সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশ সরকার তাঁর শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে ফাদার রিগনের দেহাবশেষ বাংলাদেশের মাটিতে তাঁরই স্থাপিত বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার শেলাবুনিয়া চার্চের পার্শ্বে সমাধিস্থ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইতোমধ্যে শেষ করেছে।
ফাদার মারিনো ১৯২৫ সালের সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইতালির ভেনিসের অদূরে ভিন্নাভেরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একজন খ্রিষ্ট ধর্মযাজক হিসেবে তিনি ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে অবশেষে তিনি মংলার শেলাবুনিয়া গ্রামে একটি গির্জা ও একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ঐ গ্রামেই তাঁর স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ছিল তাঁর দারুণ সমর্থন। যুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য নিজের প্রতিষ্ঠিত চার্চে গোপনে একটি চিকিৎসাক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন। তাঁর এই ক্যাম্পে চিকিৎসা সেবা নিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সুস্থ হয়ে পুনরায় রণাঙ্গনে ফিরে গেছেন। তাঁদের মধ্যে বিখ্যাত হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রমও ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে ফাদার মারিনো রিগনের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার গত ২০০৯ সালে তাকে নাগরিকত্ব দেয় এবং ২০১২ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’য় ভূষিত করে।
বাংলাদেশে বসবাসের পর থেকে তিনি বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেন এবং বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁর কৌতূহল ও নিবিড় ভালবাসার জন্ম হয়। তিনি রবীন্দ্রনাথের রচনাবলি, লালনের সংগীত ও দর্শনের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন। তাঁর মাধ্যমে ইতালিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলিসহ প্রায় ৪০টি কাব্যগ্রন্থ, জসীম উদ্দীনের নক্সীকাঁথার মাঠ ও অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ, লালনের গানসহ অসংখ্য সাহিত্য।
বাংলাদেশের এই অকৃত্রিম বন্ধুর শেষ ইচ্ছা পূরণ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের মহিমাকে সমুজ্জ্বল রাখার আরও একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
সারাবাংলা/জেআইএল/এসএমএন