চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা
২১ অক্টোবর ২০১৮ ২০:২৮
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঘোষিত কমিটি নিয়ে দফায় দফায় দুপক্ষে সংঘাতের পর চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কর্মসূচি পালনের ওপর কেন্দ্র থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কয়েক দফা সংঘাতে জড়ালেও গত ১৫ দিন ধরে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত আছে। এর মধ্যে আকস্মিকভাবে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সভা-সমাবেশ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা এসেছে।
রোববার (২১ অক্টোবর) কেন্দ্র থেকে পাঠানো একই নির্দেশনায় চট্টগ্রাম কলেজের ক্যাম্পাসের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে। সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম কলেজে কমিটি থাকবে নাকি বাতিল করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।
শোভন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কমিটি স্থগিত বা বাতিল করিনি। তাদের ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন বন্ধ রাখতে বলেছি। তদন্ত কমিটি রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে কমিটি থাকবে কি-না।’
দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিতে আছেন, গতবার কেন্দ্রীয় কমিটি পদে থাকা ছাত্রলীগ নেতা সৃজন ভূঁইয়া ও আসিফ ইকবাল অনীক।
কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন শোভন।
কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কমিটি ঘোষণার পর কিছু সমস্যা হয়েছিল, এটা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে তো কোন সমস্যা নেই। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যেভাবে বলা হচ্ছে, গত ১৫ দিনে সেরকম কিছুই ঘটেনি। বরং শান্ত ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠনমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন শুরু করেছে। এই অবস্থায় কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকার যে নির্দেশনা এসেছে, সেটা পেয়ে আমরা বিস্মিত হয়েছি।’
১৯৮৪ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছিল। ছাত্রশিবিরের সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হওয়া ছাত্রলীগের প্রায় তিন দশক ধরে ওই কলেজে কোনো কর্মকাণ্ডই ছিল না। ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ ক্যাম্পাস দখলে নেয়। এরপর থেকে তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলে আসছে।
ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরুর তিন বছর পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।
কমিটিতে মাহমুদুল করিমকে সভাপতি এবং সুভাষ মল্লিক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। মাহমুদুল প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এবং সবুজ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারী।
কিন্তু এই কমিটি প্রত্যাখান করে পরদিনই (১৮ সেপ্টেম্বর) পদত্যাগ করেন চট্টগ্রামের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ৬ জন। মেয়রের অনুসারীরা পরদিন ক্যাম্পাসের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর মেয়রের অনুসারীরা আবারও বিক্ষোভ শুরু করলে দু’পক্ষ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এসময় চট্টগ্রাম কলেজের আশপাশের এলাকার বিপুল সংখ্যক অছাত্র-বহিরাগত তরুণ-যুবক দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এতে যোগ দেয় বলে অভিযোগ উঠে।
গত ৪ অক্টোবর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় ছোঁড়া ইটের আঘাতে একজন পুলিশ সদস্যের মাথা ফেটে যায়। এরপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছাত্রলীগের একাংশকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়।
এরপর গত ১৭ দিনে চট্টগ্রাম কলেজের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আর কোন সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।
সারাবাংলা/আরডি